সাফ ফুটবল বাংলাদেশের ফুটবল সম্মান উদ্ধারের মিশন

সাফ ফুটবল নিয়ে সালেক সুফীর মন্তব্য : আগামী মাসের শুরুতেই অনুষ্ঠিত হতে চলছে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ফুটবল বিশ্বকাপ সাফ ফুটবল টুর্নামেন্ট। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ক্রমশ তলিয়ে যেতে থাকা বাংলাদেশের জন্য একটি বিরাট সুযোগ। আন্তর্জাতিক ফুটবল অঙ্গণে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ পারবে কি চমক দেখাতে? চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে রুগ্ন ফুটবল পাবে বুস্টার ডোজÑ সেটি বলাই বাহুল্য।
অনেক ঢাক ঢোল পিটিয়ে বাংলাদেশ গিয়েছিলো কিরঘিস্তান সাফ টুর্নামেন্ট সামনে রেখে শক্তিশলী প্যালেস্টাইন এবং কিরঘিস্তান দলের সঙ্গে খেলে নিজেদের যাচাই করতে। দুমড়ে মুচড়ে গেছে বাংলাদেশ দল। জেমি ডে স্বাধীনতা পেয়ে দল নিয়ে স্বেচ্ছাচার করেছেন বেশ কিছুদিন ধরে। কিন্তু সাফ টুর্নামেন্ট সামনে রেখে শেষ মিনিটের পরিবর্তন কতোটা শুভ হবে বোঝা যাচ্ছে না। বসুন্ধরা কিংসের কোচ অস্কার ব্রজেন জাতীয় দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়ের সঙ্গে পরিচিত। হয়তো দলের রসায়ন বুঝতে সময় লাগবে না।
বাংলাদেশ ফুটবল কেন তলানির দিকে দ্রুত ধাবমান সেটি নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। সেই ১৯৬৫ থেকে ফুটবল অঙ্গণে ঘনিষ্ঠ থেকে ফুটবল দেখা চোখের দূরবীনে অনেক কিছুই ধরা পড়ে। দেশের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফুটবলের তুর্জ কাজী সালাউদ্দিন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের শীর্ষ পদে আছেন একযুগ। ফুটবল মাঠে প্রতিপক্ষ রক্ষণ দুর্গ ভেদ করে চিতার ক্ষিপ্রতায় যেভাবে বেরিয়ে যেতেন সমস্যাগ্রস্ত ফুটবলে তার ছিটেফোঁটা অবদান রাখতে পারেননি। ফুটবল মাঠে আছে এই যা। ঘোষণা দিয়েছিলেন ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে খেলবে বাংলাদেশ। আঞ্চলিক কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে সবার শেষে থাকায় সেই স্বপ্ন কর্পূরের মতো উবে গেছে। বার বার কোচ এবং কোচিং স্টাফ পরিবর্তন, বিএফএফ নিয়ে নানা অভিযোগ এগুলোর পথে বাংলাদেশ ফিফা র‌্যাংকিংয়ে একেবারে তলানির দিকে।
সাফ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ স্থান ৬ নম্বরে। কেবল পিছিয়ে আছে পাকিস্তান এবং শ্রীলংকা। ভারত (১০৭), মালদ্বীপ (১০৮), আফগানিস্তান (১৪৯), নেপাল (১৬৮), ভুটান (১৮৭), বাংলাদেশ (১৮৯), পাকিস্তান (১৯৮), শ্রীলংকা (২০৫)। অথচ আমরা যখন ফুটবল অঙ্গণে জড়িয়ে ছিলামÑ বাংলাদেশ হেসে খেলে জয় পেতো মালদ্বীপ, ভুটানের বিরুদ্ধে। নেপাল, শ্রীলংকা, পাকিস্তান দাঁড়াতেই পারতো না। একমাত্র ভারতের সাথে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হতো। চোখ মুদলেই সেইসব দিনের স্মৃতি চোখে ভাসে।
বিএফএফ তাহলে কী পরিকল্পনা করছে? সন্দেহ নেই ঢাকা ফুটবলের জনপ্রিয়তায় এখন ভাটা পড়ায় ঢাকা স্টেডিয়ামে প্রতি অপরাহ্নে সেই জৌলুশ নেই। মোহামেডান, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, ভিক্টোরিয়া, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স, দিলখুশা, ওয়ারীর মতো অভিজাত ক্লাবগুলো দুর্বৃত্তদের হাতে থাকায় মানুষ এখন আর ঢাকা ফুটবলমুখী হয় না। দুঃখ লাগে বাঙালির প্রাণের খেলা ফুটবল এখন নিভু নিভু প্রদীপ হয়েই জ্বলছে।
সালাহউদ্দিনকে আমি ঘনিষ্ঠ ভাবে চিনি। ওর জাত্যাভিমান আছে বলেই জানি। ওর সাথে সালাম মুর্শেদী, হেলাল ভাই আছেন। দেশব্যাপী ফুটবলের ব্যাপক জনপ্রিয়তা আমি প্রবাসে থেকেও অনুভব করি। সাতক্ষীরা, কুড়িগ্রামের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চল তৃণমূল থেকেও আমার সাথে যোগাযোগ করা হয়। প্রয়োজন লাগসই পরিকল্পনা করে বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ে মানসম্পন্ন ফুটবল খেলার জন্য প্রণোদনা।
অনেক দিন বলা হয়েছে ফুটবল একাডেমির কথা। এখন স্মরণ করাতে আমারই লজ্জা লাগে। দুই বছর বা আরো কম সময় অন্তর অন্তর হেড কোচ এবং কোচিং স্টাফ পরিবর্তন করা হচ্ছে। ফুটবলের অবকাঠামোতেই যেখানে নড়বড়ে সেখানে বিশ্বের সেরা কোচ কী করবে? বাংলাদেশের প্রয়োজন সত্যিকারের পেশাদারি ফুটবল। ক্লাবগুলোকে পেশাদার ক্লাবের আকারে তুলে ধরা। ফুটবলকে ঢাকার বাইরে জেলায় উপজেলায় ছড়িয়ে দেয়া। ভাবতে অবাক লাগে দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের ফুটবল স্টেডিয়াম নেই। সুখের কথা স্পেন এগিয়ে এসেছে সহায়তার হাত বাড়িয়ে।
প্রার্থনা করি ঘুরে দাঁড়ানোর সূচনা হোক সাফ ফুটবল থেকেই।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

19 − six =