অতিপ্রাকৃত চরিত্রে টুপুরের চমক

মৌ সন্ধ্যা

ভৌতিক ব্যাপারই বটে। কোনো কাজেই তার হাত ছোঁয়ানো লাগে না। হাতের ইশারাতেই সব কিছু হয়ে যায়। এই যেমন, ধারালো খুর নিয়ে আঘাত করতে এসেছে শত্রু। হাতের ইশারাতেই ধরাশায়ী সে। কিংবা চুলার পাড়ে মায়ের ডালঘুটনি প্রয়োজন, হাতের ইশারাতে রান্নাঘরে হাজির সেটা। একের পর এক এমনই ঘটনা ঘটাতে থাকেন মেঘলা সুহাসিনী টুপুর। আর এতসব কাণ্ড ঘটেছে ‘ভাইরাস’ নামের একটি ওয়েব সিরিজে। এখানে টুপুরের চরিত্রটির নাম সুমী। গত আগস্ট মাসে দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকি’তে মুক্তি পেয়েছে অনম বিশ্বাস পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘ভাইরাস’। সিরিজটির গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন অনম বিশ্বাস এবং আশরাফুল আলম শাওন।

‘ভাইরাস’ ওয়েব সিরিজটি এরই মধ্যে এসেছে আলোচনায়। আর বেশ প্রশংসিত হয়েছে টুপুর অভিনীত ‘সুমী’ চরিত্রটি। পুরো সিরিজেই একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যায় তাকে। একের পর এক কাণ্ড করতে থাকে। এক কথায় বলা যায় অতিপ্রাকৃত চরিত্রে অভিনয় করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন টুপুর। ‘ভাইরাস’ সিরিজিটির গল্প নিয়ে পরিচালক অনম বিশ্বাস বলেন, ‘ভাইরাস কি শুধু মানুষের শরীরেই সংক্রমণ ঘটায় নাকি মানুষের মনেও অদৃশ্য ভাইরাস বিস্তার ঘটতে থাকে গোপনে? তখন মানুষ কী করে? মিথ্যা আর স্বার্থপরতার ভাইরাস তখন সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। এ রকমই এক অবস্থা নিয়ে ‘ভাইরাস’-এর গল্প। এখানে দেখা যায়, বিপন্ন আফজালের সঙ্গে নিরঞ্জনের দেখা হয়ে যায়। নিরঞ্জন তাকে ইশারা দেয়, মানুষের কৃতকর্মও একসময় সত্যিকার ভাইরাস হয়ে ফিরে আসে। সেই কৃতকর্মের ভাইরাস থেকে বাঁচতে আফজালকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে কি? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে ‘ভাইরাস’ দেখতে হবে।’

সিরিজটিতে বিশেষ চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান, শ্যামল মাওলা, শরীফ সিরাজ, রাশেদ মামুন অপু, গোলাম ফরিদা ছন্দা, ক্রিস্টানো তন্ময়, মারশিয়া শাওন, টুপুর প্রমুখ। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের একঝাঁক শিক্ষার্থীও এই সিরিজে অভিনয় করেছেন। অনম বিশ্বাসের নিজের লেখা এবং খৈয়াম সানু সন্ধির সুরে এই সিরিজের একটি গান ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এই ওয়েব সিরিজে যারা অভিনয় করেছেন সকলেই মিডিয়ার প্রিয় মুখ। মিডিয়ার নতুন আলোচিত মুখ মেঘলা সুহাসিনী টুপুর সম্পর্কে জানবো আমরা।

কে এই ছোট্ট টুপুর

টুপুরের পুরো নাম মেঘলা সুহাসিনী টুপুর। টুপুরের মা গোলাম ফরিদা ছন্দা গুণী অভিনেত্রী ও বাবা সতীর্থ রহমান রুবেল নন্দিত নির্মাতা। তার জমজ বোনের নাম রোদেলা সুভাষিণী টাপুর। টাপুর-টুপুর দু’জনই ছোটবেলা থেকেই অভিনয় করেন। ওদের বয়স যখন ছয় সাড়ে ছয় তখনই দু’জনই অভিনয় করেন বাবা রহমান রুবেলের পরিচালনায় ‘খোলস’ নামের একটি নাটকে। এটা সম্ভবত ২০১২ সালে। ওই বছরই নাটকটি এটিএন বাংলায় প্রচার হয়। এই নাটক দিয়েই শুরু। এরপর চয়নিকা চৌধুরীর অনেকগুলো নাটকে অভিনয় করেছেন ওরা। টাপুর শেষ চমক দেখিয়েছে দেশান্তর সিনেমায়। আর এবার ভাইরাস ওয়েব সিরিজে চমক দেখালো টুপুর।

টুপুরের পড়ালেখা

ভারতের পাহাড়ঘেরা শহর কালিম্পংয়ের ডক্টর গ্রাহামস হোমস স্কুলে পড়ছে টুপুর। চতুর্থ শ্রেণি থেকে টাপুর-টুপুর দুই বোন এই স্কুলে পড়ছেন। এখন একাদশ শ্রেণিতে টুপুর। এই পাহাড়ঘেরা স্কুলটা বেশ পছন্দ ওদের। প্রথমে মা-বাবাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হলেও এখন বেশ মানিয়ে নিয়েছে ওরা।

‘ভাইরাস’ সিরিজ নিয়ে যা বললেন টুপুর

দেশের একটি গণমাধ্যমে এই সিরিজে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন টুপুর। এই সিরিজে যুক্ত হওয়া ও অতিপ্রাকৃত চরিত্রে অভিনয় করা প্রসঙ্গে টুপুর বলেন, নির্মাতা অনম বিশ্বাস আংকেল মায়ের (গোলাম ফরিদা ছন্দা) সঙ্গে কথা বলেছেন। তখনো আমি কালিম্পংয়ে ছিলাম, অনম আংকেলের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে, উনি আমাকে চরিত্রটা বুঝিয়ে দিয়েছেন। চরিত্রটা চোখ দিয়ে সবকিছু সরাতে পারে। জুন-জুলাইয়ের দিকে ছুটিতে ঢাকায় ফিরেছিলাম, তখন সিরিজটির শুটিং করেছি। তখন খুব গরম ছিল। পূর্বাচল এলাকায় দুই দিন শুটিং করেছি। জীবনে প্রথমবার এ ধরনের চরিত্র করেছি, ফলে কাজটা আমার জন্য কঠিন ছিল। অনম আংকেল, মা ও বোনের পরামর্শ পেয়েছি।

শেষ কথা ও টুপুরের আরও কাজ

নির্মাতা গৌতম কৈরী পরিচালিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে নিয়ে নির্মিত ‘বঙ্গমাতা’ চলচ্চিত্রে বঙ্গমাতার কিশোরী বেলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন টুপুর। নিজের জীবনে এটিও একটি স্বরণীয় কাজ হয়ে থাকবে বলে জানান তিনি। আজীবন অভিনয়ের সঙ্গে থাকতে চান টুপুর। তার ভাষ্য, ‘ছোটবেলা থেকে মা (ছন্দা) আর বাবার (নির্মাতা সতীর্থ রহমান) অভিনয় ও নির্মাণ দেখে বড় হয়েছি। আমার অভিনয়ের আগ্রহ তৈরি হয়েছে তখন থেকেই। বড় বড় শিল্পীর সঙ্গে কাজের সুযোগ পাই, এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমি অভিনয়টাই করে যেতে চাই।’ রঙবেরঙের পক্ষ থেকে রইলো টুপুরের জন্য শুভকামনা।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: আগামীর নক্ষত্র

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

fifteen − seven =