ইরান-ইসরায়েল ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে

সালেক সুফী

এমনিতেই হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের প্রতিক্রিয়ায় গাজায় ইতিহাসের ঘৃণ্যতম গণহত্যা চালাচ্ছে বর্বর দেশ ইসরায়েল।  হামাস, হুতিরা নানা ভাবে ইসরায়েল স্বার্থে আঘাত হানছে। এরই মাঝে ইসরায়েলআন্তর্জাতিক নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেট কার্যালয়ে বিমান আক্রমণ করে ইরানের সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে।  প্রতিক্রিয়ায় ইরান ঘোষণা দিয়ে ইতিহাসে প্রথম বারের মতো  তিন শতাধিক ড্রোন, ব্যালেস্টিক মিসাইল নিয়ে সরাসরি ইসরায়েল আক্রমণ করে।

ইরান থেকে ইসরায়েল ১০০০ কিলোমিটার দূরে আকাশপথে লেবানন, জর্দান, সিরিয়া পেরিয়ে ইসরায়েল মূলভূখণ্ডে পৌঁছানোর আগেই মিত্রদেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জর্ডানের সক্রিয় সহায়তায় ইসরায়েল অধিকাংশ ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সক্ষম হলেও কিছু ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এড়িয়ে লক্ষবস্তুতে আঘাত হানে।

ইরানের মতে তাদের নিয়ন্ত্রিত এবং পরিকল্পিত প্রতিক্রিয়া কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করেছে।  অন্তত প্রমাণ হয়েছে দূরপাল্লার দ্রুতগতির ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরান সরাসরি ইসরায়েলে আঘাত করতে সক্ষম।  তাড়াহুড়ো করে এই আক্রমণ সামাল দিতেই ইসরায়েল মিত্রদের সহায়তায় উৎরে গেছে। ইসরায়েল পাল্টা আঘাত হানার হুমকি দিয়েছে। কিন্তু মিত্রদেশগুলো ইসরায়েলকে সংযত থাকার উপদেশ দিয়েছে।

ইরান হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল নিবৃত না হলে ইরান আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে তাৎক্ষণিক প্রচণ্ড প্রতি আক্রমণ করবে। যুক্তরাষ্ট্র সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে তারা এই মুহূর্তে ইরানের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে না। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ঘোষণা দিয়েছে তাদের ভূমি ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে আক্রমণ করতে পারবে না।  এমনি অবস্থায় সমগ্র অঞ্চল অস্থির আতংকিত হয়ে পড়েছে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি নিবে না। আর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া ইরানের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া ইসরায়েলের পক্ষে আত্মঘাতী হবে। ইরানের প্রতি রাশিয়া, চীনের সক্রিয় সমর্থন আছে। মুসলিম দেশগুলোর একটা বিরাট অংশ ইরানের সমর্থনে থাকবে।  অন্যদিকে ইরান চাইবে না পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ।

কিন্তু ইসরায়েল যদি মিত্রদের উপদেশ উপেক্ষা করে ইরানের উপর প্রতিশোধ নিতে যায় তাহলে ইরান নিঃসন্দেহে কোনো নোটিশ ছাড়াই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাবে। সেক্ষেত্রে না চাইলেও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। বিশ্ব জ্বালানি বাজারে আগুন ধরে যাবে। দীর্ঘস্থায়ী আর্থিক মন্দা সৃষ্টি হবে। লোহিত সাগর, হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে গেলে বাণিজ্য সংকট সৃষ্টি হবে। এমনটি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার হবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

এমতাবস্থায় বিশ্ব মোড়লরা  এবং জাতিসংঘ ইরান, ইসরায়েল উভয়পক্ষকে যে কোনো ভাবে নিবৃত করে বিশ্বকে ভয়াবহ পরিণতি থেকে রক্ষা করতে হবে। বিশ্ব কিছুতেই বড় ধরনের যুদ্ধের ভার বহন করতে পারবে না। একই সঙ্গে ইসরায়েলকেও অবিলম্বে গাজায় গণহত্যা বন্ধ করতে হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

4 × two =