সালেক সুফী
কিছুদিন ক্রমাগত এখানে সেখানে আগুন। একটি দুটি হলে দুর্ঘটনা বলা যেতো। কিন্তু যখন ক্রমাগত হতে থাকে তখন অন্তর্ঘাত বলে সন্দেহ মনে জাগে। কেন আগুনে পুড়ে মানুষ মরলো, সম্পদ ধ্বংস হলো কোন কুল কিনারা পাওয়া গেলো নাG এর আগে নির্বাচনের সময় বাস ট্রেনে আগুন দেxয়া হলো, দায়িত্বশীলরা বললেন বিরোধী দলের অগ্নি সন্ত্রাস। কিছুদিন রাজনৈতিক বাহাস। তার পর সবাই ভুলে গেলো।
দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সরবরাহের ঘাটতি না থাকা সত্ত্বেও সরকার ঘনিষ্ট সিন্ডিকেটের কারসাজিতে মূল্য সন্ত্রাস চলছে সরকারের বহু ধরনের কার্যক্রম সত্ত্বেও। দুনিয়ার মুসলিম, অমুসলিম বহু দেশে রমজানের সময় বিশেষ মূল্য হ্রাস থাকলেও বাংলাদেশে মূল্য সন্ত্রাস। রমজানের অধিকাংশ সময় আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও শেষ দিকে এসে যেই না গরম বাড়লো দেশ জুড়ে অসহনীয় বিদ্যুৎ লোড শেডিং।
ঈদ যাত্রায় বাস, ট্রেন টিকিট সংগ্রহে স্বস্তি নেই। এরই মাঝে কুকি চীন নাম একটি সন্ত্রাসী সংগঠন তাণ্ডব করলো বান্দরবনে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল ঠিকাদারের গুদামে ডাকাতির চেষ্টা। সরকারি ছাত্র সংগঠন হঠাৎ করে শান্ত বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনীতি করার অভিলাষ। ভুলে গেছিলাম বিরোধী দলগুলো ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব ঘোষণা করেছে। এগুলো সব তাহলে কি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নাকি পারস্পরিক সম্পর্ক যুক্ত কোনো মহলের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ? এত সব ডামাডোলের মাঝে শেয়ার মার্কেট থেকে নতুন করে অর্থ লোপাট আড়ালে রয়ে গাছে।
যেভাবেই হোক নির্বাচনের পর পুরানো সরকার নতুন ভাবে এসে অর্থনৈতিক ধস সামাল দিতে নানা প্রচেষ্টা নিয়েছে। মূল্যস্ফীতির কারণে জনজীবনে কিছু অস্বস্তি থাকলেও দুনিয়ার অনেক দেশ থেকে সার্বিক পরিবেশ ভালো বাংলাদেশে। ২০২৩ থেকেও কিন্তু অন্তত রমজান মাসের অধিকাংশ দিন বিদ্যুৎ মহাসঙ্কট থেকে মুক্ত ছিল বাংলাদেশ।
কেন কিছুদিন হঠাৎ করে আগুনে পুড়লো মানুষ, ধ্বংস হলো সম্পদ? ক্ষুদ্র মাঝারী ব্যাবসায়ী সম্প্রদায়ের উপর দুর্নীতিগ্রস্ত সংগঠনগুলো হঠাৎ করে তৎপরতা চালালো। অথচ নিয়মিত মনিটরিং করা হলে অধিকাংশ আগুনের ঘটনা আদৌ ঘটতো না।
এবার আসুন ভারতীয় পণ্য বর্জনের অবাস্তব আন্দোলন। যেখানে চাল, ডাল, মসলা, ভোজ্য তেল, লবন, চিনি, পোশাকশিল্পের কাঁচামাল থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ, পেট্রোলিয়াম জাত দ্ৰব্য ভারত থেকে আসে। সেখানে হঠাৎ করে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলন কাদের স্বার্থে? আমি নিঃসন্দেহে ভারতের উপর একান্ত নির্ভরশীলতার ঘোর বিরোধী। কিন্তু তাই বলে কঠিন সময় প্রভাবশালী প্রতিবেশীর সঙ্গে বৈরিতা সৃষ্টির অন্তর্নিহিত কারণ বোধগম্য নয়। বরং দেশীয় পণ্য ব্যবহার বাড়ানোর জন্য আন্দোলন হতে পারে। দেশব্যাপী পণ্য চলাচলে চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেটের অশুভ তৎপরতার বিরুদ্ধে জন প্রতিরোধ গড়ে উঠলে এমনিতেই আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে।
এবার আসুন ছাত্র রাজনীতি নিয়ে। দেশে কি আদৌ সুস্থ রাজনীতি আছে? আছে কি সুস্থ ছাত্র রাজনীতি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় আছে সুস্থ ছাত্র রাজনীতি? কেন কোন অবস্থার প্রেক্ষিতে দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়েছে সবার জানা। একমাত্র বুয়েটেই সকল সেমিস্টার সুস্থভাবে চলছে, শিক্ষার পরিবেশ অনুকরণীয়, ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সেই ১৯৭২ থেকেই কোন অভিযোগ নেই। সেখানে হঠাৎ করে জঙ্গী সংগঠনের অস্তিত্বের ধুয়া তুলে কেন ছাত্র রাজনীতি শুরু করে ক্যাম্পাস অস্থির করার পায়তারা?
এবার আসুন কুকী চীন সংগঠন হঠাৎ করে পুনরায় আগ্রাসী হয়ে ওঠা? প্রশ্ন জাগে সব ধরনের সরকারি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিপুল পরিমাণ উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও কি ভাবে বান্দরবনে এই ধরনের সন্ত্রাস করতে সফল হলো কুকী চীন সংগঠন? এমনিতেই সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সময় বিজেবি সহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা সমূহ বৃহত্তর চট্টগ্রম এলাকায় সতর্ক থাকার কথা. সেখানে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন ব্যাঙ্ক, পুলিশ ফাঁড়ি, আনসার বাহিনীর উপর আক্রমণ করে অস্ত্র গোলাবারুদ, অর্থ আত্মসাৎ কিভাবে করলো? এগুলো কিসের ইঙ্গিত করে? নেপথ্যে কোন শক্তি কাজ করছে?
বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে নতুন করে কিছুই বলার নেই একমাত্র প্রার্থনা যেন গ্রীস্মকালে যেন দাবদাহ সীমিত থাকে। জ্বালানি সংকট, অর্থ সংকটের কারণে কোনোভাবে সরকার বিদ্যুৎ সংকট এড়াতে পারবে না। তবে সর্বপর্যায়ে কৃচ্ছতাসাধন, জ্বালানি বিদ্যুতের দক্ষ ব্যবহার করে সংকট সহনীয় পর্যায়ে রাখা যেতে পারে। এদেশের একজন বিদ্যুৎ ব্যবসায়ী বাংলাদেশে বিদ্যুৎ জ্বালানি ব্যবসা করে সিঙ্গাপুরে অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় ব্যাবসায়ী হয়েছে এটাও পত্রিকার শিরোনাম। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রি করে বন্ধু দেশের প্রতিষ্ঠান শেয়ার মার্কেটে অবস্থান উজ্জ্বল করেছে।
দেশে ক্রমাগত ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকলেও পার্লিয়ামেন্টে কার্যকরী বিরোধী দল না থাকায় সরকারকে জবাবদিহি করতে হচ্ছে না। যা গণতন্ত্রের জন্য সুসংবাদ নয়।