গুণাগুণে ভরপুর অলিভ অয়েল

নীলাঞ্জনা নীলা

প্রকৃতি থেকে উপাদান সংগ্রহ করে রূপচর্চা করতো বলে আগেকার মানুষের চুল ও ত্বক ছিল বেশি সুন্দর। তেমনই এক প্রাকৃতিক তেলের নাম জলপাই তেল। যাকে সবাই অলিভ অয়েল নামে চেনে। অলিভ অয়েলের রয়েছে অনেক গুণ। চুল থেকে পা অব্দি সম্পূর্ণ শরীরের যত্ন নিতে অলিভ অয়েল কার্যকর।

ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল

অনেকের রূপ রহস্য জিজ্ঞাসা করলে জানা যায় তারা শুধুমাত্র অলিভ অয়েল ত্বকে মেখে থাকেন। ত্বকের সুস্থতায় অলিভ অয়েল জাদুর মতো কাজ করে। শীতকালে অনেকের ত্বক অতিরিক্ত রুক্ষ হয়ে যায়। আবার অনেকে শুষ্ক ত্বক সমস্যায় বারো মাসই ভুগে থাকেন। শরীর তার চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পানি না পেলে বা জেনেটিক কারণে ত্বক শুষ্ক হলে সমস্যার পড়তে হয়। শুষ্ক ত্বকের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে শরীরকে ভিতর থেকে হাইড্রেট রাখার পাশাপাশি ব্যবহার করা যেতে পারে অলিভ অয়েল। অলিভ অয়েল বাইরে থেকে ত্বককে আর্দ্রতা দেয় ও শুষ্কতা অনেক অংশে কমিয়ে আনে। সরাসরি অলিভ অয়েল অথবা মশ্চারাইজারের সাথে মিশিয়েও ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। তবে ঋতুভেদে নির্ভর করছে কত পরিমাণ অলিভ অয়েল ত্বকে ব্যবহার করবেন। শীতের সময় পানির সংস্পর্শে গেলে অলিভ অয়েল মেখে নেওয়া যেতে পারে। কারণ শীতের সময় আবহাওয়ায় আর্দ্রতার পরিমাণ সবচেয়ে কম থাকে। তাই শুষ্কতার প্রবণতা অনেক বেশি বেড়ে যায়। অনেকে মনে করেন অলিভ অয়েল শুধু শুষ্ক ত্বকের জন্য, কিন্তু তৈলাক্ত ত্বকেও পরিমাণ মতো অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ অলিভ অয়েল ত্বকের শুষ্কতা দূর করার পাশাপাশি আরো অনেক উপকার করে থাকে।

রোদে পুড়ে কিংবা নানা কারণে অনেকের মুখে অকালে বলিরেখা বা বয়সের ছাপ পড়ে যায়। মুখের বলিরেখা ও পোরস কমাতে অলিভ অয়েল সাহায্য করে। অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণের প্রবণতা অনেক বেশি থাকে। অলিভ অয়েল ব্রণের ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে। তবে তৈলাক্ত ত্বকে খুব বেশি পরিমাণে অলিভ অয়েল ব্যবহার না করাই ভালো। তাদের ত্বক তেল চিটচিটে তারা সরাসরি অলিভ অয়েল ব্যবহার না করে মশ্চারাইজারের সাথে মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করতে পারেন। অনেকের শরীরের বিভিন্ন অংশে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হয়। অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে ফাঙ্গাল ব্যাকটেরিয়া অনেকটা কমে আসে। শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন হাঁটু, কনুই, কাঁধ এসব জায়গায় কালো দাগ পড়ে যায়। সেসব স্থানেও অলিভ অয়েল ভালো করে মাসাজ করা যেতে পারে। মাসাজের ফলে সেসব স্থানের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পেয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় ও নানা ধরনের সমস্যা দূর হয়।

অনেকের পায়ের গোড়ালি ফেটে যায়। অনেকের রক্ত পড়ার মতো সমস্যা থাকে। এ সমস্যা দূর করতে নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। অলিভ অয়েল ত্বকের কোলাজেন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফলে ত্বকের হারিয়ে যাওয়া উজ্জ্বলতা ফিরে আসে ও মলিনতা কমে যায়। অলিভ অয়েলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি ও কে, যা ত্বকের নানা ধরনের ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। রোজ টুকটাক মেকআপ সবারই করা হয়, ঘরে ফিরে সেই মেকআপ ভালো করে তুলে ফেলা অনেক বেশি জরুরি। তা না হলে ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে গিয়ে ব্রণের মতো নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। মেকআপ তুলে ত্বক পরিষ্কার করতেও অলিভ অয়েল সাহায্য করতে পারে। সুতির কাপড় কিংবা তুলায় কয়েক ফোটা অলিভ অয়েল নিয়ে সম্পূর্ণ মুখে মাসাজ করলে পুরো মেকআপ উঠে আসবে।

চুলের যত্নে অলিভ ওয়েল

চুলের সমস্যা কমাতে অলিভ অয়েলের জুড়ি মেলা ভার। অলিভ অয়েলে থাকা নানা পুষ্টি ও ভিটামিন চুলের বৃদ্ধি এবং উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। অলিভ অয়েল গরম করে চুলে নিয়মিত মাসাজ করলে মাথায় রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। খুশকি সমস্যায় অনেকের সারা বছর নাজেহাল থাকতে হয়, তাদের ক্ষেত্রে শ্যাম্পু করার আগের দিন রাতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করে সারারাত তা রেখে পরের দিন শ্যাম্পু করে নিলে খুশকি সমস্যা অনেকটা কমে যায়। মাথায়ও নানা ধরনের সংক্রমণ ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ হতে পারে। সেসব ব্যাকটেরিয়ার ফলে চুলে অতিরিক্ত চুলকানি কিংবা চুল পড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি হয়। সেক্ষেত্রে নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে ব্যাকটেরিয়া ও বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন দূর হয়। চুলের ডগা ফেটে যাওয়া, চুলের উজ্জ্বলতা কমে যাওয়াসহ নানা ধরনের সমস্যার সমাধান মিলে অলিভ অয়েলে। চুল নিয়ে অনেকের অভিযোগ থাকে যে চুল সহজে বৃদ্ধি পেতে চায় না। কিন্তু নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যবহারের ফলে চুল বৃদ্ধির প্রবণতাও বেড়ে যায়।

অলিভ অয়েল দিয়ে প্যাক তৈরি

সরাসরি অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে ত্বক এবং চুলের যেমন উপকার মিলে তেমনি অলিভ অয়েল দিয়ে তৈরি করা যায় নানা ধরনের প্যাক। ত্বকের ক্ষেত্রে অলিভ অয়েলের প্যাক ব্যবহার করতে চাইলে তাতে ডিমের কুসুম মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করা যেতে পারে। অলিভ অয়েল ও কফি পাউডার মিশিয়ে তৈরি করে ফেলতে পারেন স্ক্রাব। এটি শরীরের বিভিন্ন স্থানের ময়লা তুলে আনতে সাহায্য করবে। চুলে অলিভ অয়েলে টক দই মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া অলিভ অয়েলে পেঁয়াজের রস মিশিয়ে মাথায় ব্যবহার করলে তা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। অলিভ অয়েলে লেবুর রস ও বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান মিশিয়ে চুলে কিংবা ত্বকে ব্যবহার করা যায়।

শরীরের জন্য অলিভ অয়েল

রূপচর্চার ছাড়াও অলিভ অয়েল খাদ্য হিসেবেও বেশ স্বাস্থ্যকর। শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা বরাবরই বলে থাকেন রান্নায় অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে। অলিভ অয়েলকে চারভাগে ভাগ করা হয় যেমন এক্সট্রা ভার্জিন, ভার্জিন, পিওর ও এক্সট্রা লাইট। সাধারণত এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল খাওয়ার জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। অনেকের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, চিকিৎসকেরা তাদের পরামর্শ দেন রান্নায় অলিভ অয়েল অয়েল ব্যবহার করতে। কারণ এতে রয়েছে পলিফেনাল, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। অলিভ অয়েলে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন আছে। অলিভ অয়েল দেহকোষ সুরক্ষা দেয়। পলিফেনাল থাকার কারণে এটি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। অলিভ অয়েল আমাদের দেহে কোলেস্টরেল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের ফলে হার্টের রোগসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। তাই হার্টের রোগীদের পরামর্শ দেওয়া হয় অলিভ অয়েল খাওয়ার জন্য। এটির শরীরের ক্ষতিকারক চর্বি কমাতেও সাহায্য করে।

যারা ওজন কমাতে চান কিংবা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাদের রান্নায় অলিভ অয়েল ব্যবহার করা উচিত। কারণ এই তেল দেহে ক্ষতিকারক চর্বি জমতে দেয় না। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিকসহ নানা ধরনের সমস্যা এটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। যাদের পেটে গ্যাস জমে কিংবা জ্বালাপোড়া করে তারাও খাবারে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। অলিভ অয়েল রূপচর্চা থেকে স্বাস্থ্য সমস্যা সবকিছুর সমাধান দিয়ে থাকে। তবে অলিভ অয়েলের গুণাগুণ পেতে অবশ্যই খাঁটি অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে হবে।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: আরশি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eighteen − 12 =