টেস্ট স্ট্যাটাস: নারী ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন, কিন্তু…

এম. এম. কায়সার : সময় গুলো মনে রাখুন।
২০০৭ সাল: আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ নারী দলের অভিষেক।
২০১১ সাল: ওয়ানডে স্ট্যাটাস পেল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। এবং সেই বছরই প্রথমবারের মতো বিশ^কাপ ক্রিকেটের বাছাই পর্বে খেলল। নারীদের বিশ^কাপ ক্রিকেটের সেই বাছাই পর্বে বাংলাদেশ পঞ্চম হলো।
২০১৪ সাল: প্রথমবারের মতো নারীদের টি- টুয়েন্টি বিশ^কাপেও খেলে ফেলল বাংলাদেশ।
২০১৮ সাল: নারীদের এশিয়া কাপ ক্রিকেটের শিরোপা জিতল বাংলাদেশ। একটু জানিয়ে দেই, ফাইনালে বাংলাদেশ হারায় শক্তিশালী ভারতকে।
২০২১ সালের, ২ এপ্রিল: বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল টেস্ট স্ট্যাটাস পেল। এতদিন বিশে^র ১০টি দেশ নারীদের টেস্ট ক্রিকেট খেলত। অভিজাত সেই তালিকায় যোগ হলো বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়ে এবং আফগানিস্তানের নামও।
আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) তাদের পূর্ণ সদস্য দেশগুলোকে টেস্ট খেলার মর্যাদা প্রদানের সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিল। এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আরেকটি বিষয় পাকাপোক্ত হয়ে গেল, বাংলাদেশ নারী দলের ওয়ানডে স্ট্যাটাস এখন পুরোদুস্তর স্থায়ী। আগে প্রতি চার বছর পরপর এই ওয়ানডে স্ট্যাটাসের রিভিউ’র একটা ব্যাপার স্যাপার ছিল। সেই ‘যন্ত্রণা’ থেকে মুক্তি মিলল।
বাংলাদেশের নারী দল টেস্ট ক্রিকেট খেলার মর্যাদা পেল, কোন সন্দেহ নেই এটি দেশের নারী ক্রিকেটের জন্য অনেক বড় একটা মাইলফলক। কিন্তু সমস্যা হলো টেস্ট ক্রিকেট কিÑ সেটা বোঝাতে এবং বুঝতেই যে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলকে সবকিছু একেবারে গোড়া থেকে শুরু করতে হবে!
কেন?
কারণ এখনো যে বাংলাদেশ নারী দল দুদিনের ম্যাচই খেলেনি। সেই তারা কিভাবে চারদিনের টেস্ট ম্যাচ খেলার মেজাজের সঙ্গে মানিয়ে নেবে। এতদিন তো শুধু এখানে মেয়েদের ক্রিকেট আটকে ছিল ওয়ানডে এবং টি- টোয়েন্টির বারান্দায়। এখন টেস্ট ম্যাচের সমুদ্রেও সাঁতার কাঁটতে হবে।
টেস্ট ক্রিকেটে খেলার অর্জনটা খুব সহজে এসেছে বাংলাদেশ নারী দলের। কিন্তু মাঠের সাফল্যে অর্জনই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মানছেন মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে দেখভালের দায়িত্বে থাকা বিসিবির পরিচালক শফিউল ইসলাম চৌধুরী নাদেল। তিনি মানলেন, এই সময়ে মেয়েদের ক্রিকেটের জন্য যেরকম সুনির্দিষ্ট একটা কাঠামো ও সুযোগ-সুবিধার প্রয়োজন ছিল সেটা নেই। মেয়েদের জন্য আলাদা কোন মাঠ নেই। জিমনেশিয়াম নেই।
বড় দৈর্ঘ্যরে ক্রিকেটে সাফল্যের জন্য প্রাথমিক এবং আবশ্যিক শর্তই হলো ঘরোয়া ক্রিকেটের শক্তপোক্ত একটা পরিকাঠামো। দুইদিন-তিনদিনের ম্যাচে খেলার অভ্যাস না গড়ে হঠাৎ করে টেস্ট ক্রিকেটের ময়দানে নেমে গেলে অনেককিছুই মেয়েদের জন্য নতুনতর মনে হতে পারে। প্রস্তুতিহীন অবস্থায় টেস্ট খেলতে নামলে ফলাফল মোটেও ভাল হওয়ার সুযোগ নেই। টেস্ট ক্রিকেটের মর্যাদা বাংলাদেশ নারী দল পেয়েছে বেশ অনায়াসেই। কিন্তু সেই মর্যাদার সত্যিকারের দাবিদার যে বাংলাদেশ সেটা প্রমাণের আসল জায়গা কিন্তু মাঠের ঐ ২২ গজের ক্রিকেট।
তবে ওয়ানডে এবং টি- টোয়েন্টির বর্তমান বাজারে মেয়েদের টেস্ট ক্রিকেট খেলার সংখ্যা নেহাতই কম। পেছনের পাঁচবছর জুড়ে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড খেলেছে মাত্র ৩টি টেস্ট ম্যাচ। ভারতের মেয়েরা তাদের সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছে ২০১৪ সালে। পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউ জিল্যান্ড ২০০৪ সালে খেলেছে তাদের শেষ টেস্ট। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল তাদের একমাত্র টেস্ট ম্যাচ খেলেছে আজ থেকে ২৩ বছর আগে, ১৯৯৮ সালের এপ্রিলে!
বাংলাদেশ নারী দল তো টেস্ট স্ট্যাটাস পেল ঠিকই, কিন্তু প্রথম টেস্ট কবে হবে বা সেটা আমি-আপনি দেখে যেতে পারবো কিনা-সম্ভবত তা কেউ জানে না! তবুও নারী দলকে অভিনন্দন এবং সেই সঙ্গে টেস্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য একবুক সাহস ও শুভ কামনা!

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

thirteen − three =