ঢাকাই সিনেমার বসন্ত

মাসুম আওয়াল

অনেক হতাশার পর ঢাকাই সিনেমার পালে লেগেছে হাওয়া। বন্ধ হয়ে যাওয়া বেশকিছু সিনেমা হল নতুন করে চালু হয়েছে। নতুন সিনেমা প্রদর্শন করে লাভের মুখ দেখছেন হল মালিকরা। সিনেমায় টাকা লগ্নি করা মানে টাকা জলে ফেলে দেওয়া, এমন কথার দিন ফুরাচ্ছে। সিনেমার প্রযোজক খুশি হয়ে চলচ্চিত্র পরিচালককে গাড়ি উপহার দিচ্ছেন। একের পর এক সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে, সেসব সিনেমা হাউজফুল হচ্ছে। হলে হলে দর্শকের উপচে পড়া ভিড়। সিনেপ্লেক্সগুলোতেও তুমুল ব্যবসা করছে ঢাকাই সিনেমা। শুধু দেশেই নয়, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ব্যবসাসফল হচ্ছে বাংলা সিনেমা। এতসব কিছু দেখে বলতেই হয় ঢাকাই সিনেমায় বসন্ত এসেছে। চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতা, অভিনেত্রী, হলমালিক সবার মুখে হাসি।

করোনা মহামারীর প্রকোপে ম্খু থুবড়ে পড়েছিল বাংলা সিনেমা। ২০২২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘হাওয়া’ ও ‘পরাণ’ প্রায় সমান গতিতে ঝড় তুলে দেশের প্রেক্ষাগৃহে। আবারও সাহস পান প্রযোজকেরা। মুক্তির পর ‘হাওয়া’ তৈরি করে বাংলা সিনেমার নতুন রেকর্ড। মুক্তির আগেই সিনেমাটির অগ্রিম টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। কয়েকটি মাল্টিপ্লেক্সে প্রথম দিনের টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। বাংলা সিনেমা নিয়ে দর্শকের ব্যাপক আগ্রহের কারণে বহুল আলোচিত একটি হলিউডি ছবির প্রদর্শনী স্থগিত করা হয়; যা প্রযোজক ও পরিচালকদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করে।

আবারও সরব সিনেপাড়া

বিগত কয়েক বছরের চিত্র পর্যালোচনা বলছে, ঢালিউডের সিনেমার মান, বৈচিত্র্য, জনপ্রিয়তা সবই বিকশিত হচ্ছে। ২০২৩ এ ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া ‘সুড়ঙ্গ’, ‘প্রিয়তমা’, ‘প্রহেলিকা’, ‘ক্যাসিনো’; সবগুলো সিনেমাই দর্শকদের কাছে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে। কোনো সিনেমা মুক্তির পর সাড়া জাগালে সেই সিনেমার গান মানুষের মুখে মুখে ফেরে। উদাহরণ স্বরুপ আমরা বলতে পারি আয়নাবাজি, দেবী, ঢাকা অ্যাটাক, মনপুরা কিংবা স্বপ্নজালের মতো কিছু সিনেমা গত কয়েক বছরে বেশ দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিল। মনপুরা সিনেমার কথা এক দশকেরও বেশি সময় পরেও মানুষ মনে রেখেছে। গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত সিনেমাটির নাম ও গানগুলোর কথা এখনও ঘুরে ফিরে আসে। সেইসব জনপ্রিয় সিনেমাগুলোর মতোই এবার দর্শকদের মন ভরিয়েছে ‘সুড়ঙ্গ’, ‘প্রিয়তমা’, ‘প্রহেলিকা’, ‘ক্যাসিনো’। এর মধ্যে ‘প্রিয়তমা’, ‘প্রহেলিকা’ সিনেমার কয়েকটি গান ঘুরছে দর্শকের মুখে মুখে।

দেশে ‘প্রিয়তমা’র রেকর্ড

চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে সুপারহিট এবং সবচেয়ে বেশি আয় করা সিনেমা ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’। ১৯৮৯ সালে নির্মিত এই সিনেমাটির আয় ছিল প্রায় ২০ কোটি টাকা। তোজাম্মেল হক বকুলের পরিচালনায় সিনেমার প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন ও অঞ্জু ঘোষ। এদিকে শাকিব-ইধিকার সিনেমা ‘প্রিয়তমা’ মুক্তির প্রথম সপ্তাহে ১০ কোটি ৩০ লাখ, দ্বিতীয় সপ্তাহে ৮ কোটি ৫৫ লাখ আর দেশের বাইরে থেকে ৯০ লাখ ৭২ হাজার টাকা আয় করে। সিনেমার প্রযোজক আরশাদ আদনানের হিসাব অনুযায়ী, বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’র আয়ের রেকর্ড প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে ‘প্রিয়তমা’।

বিদেশে ‘প্রিয়তমা’র রেকর্ড

দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে এখনও চলছে শাকিব খান অভিনীত সিনেমাটি। নির্মাতা-প্রযোজকদের দাবি বিদেশেও দাপট দেখাচ্ছে ‘প্রিয়তমা’। ইতিমধ্যে বাংলাদেশি সিনেমা হিসেবে আমেরিকার বাজারে সর্বোচ্চ কালেকশন করা সিনেমাগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে চলে এসেছে। অনম বিশ্বাস নির্মিত ‘দেবী’কে টপকে এই জায়গা দখল করে সিনেমাটি। ‘প্রিয়তমা’র আমেরিকার পরিবেশক স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো’র মোহাম্মদ অলিউল্লাহ সজীব জানান, গত ৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পর চার সপ্তাহে এর গ্রস বক্স অফিস কালেকশন ১ লাখ ২৬ হাজার ডলার। এর আগে তৃতীয় সর্বোচ্চ কালেকশনের রেকর্ড ছিল চঞ্চল চৌধুরী ও জয়া আহসান অভিনীত ‘দেবী’র দখলে (১ লাখ ২৫ হাজার ডলার)। এদিকে বাংলাদেশি সিনেমা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে রীতিমতো রেকর্ড গড়েছে ‘প্রিয়তমা’। অলিউল্লাহ সজীবের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রের একক কোনও প্রেক্ষাগৃহে সর্বোচ্চ আয়কারী বাংলাদেশি সিনেমা এখন এটি। তার ভাষ্য, নিউ ইয়র্কের জ্যামাইকা মাল্টিপ্লেক্সে মাত্র চার সপ্তাহে ছবিটির গ্রস কালেকশন ৬৭ হাজার ১০৪ মার্কিন ডলার। এর আগে সবচেয়ে বেশি আয় করা ‘হাওয়া’ এই মাল্টিপ্লেক্সে পাঁচ সপ্তাহে গ্রস আয় করেছিল ৬৩ হাজার ৫৪৮ ডলার। তবে উত্তর আমেরিকায় এই পর্যন্ত মুক্তি পাওয়া বাংলাদেশি সিনেমাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ আয়ের রেকর্ড এখনও ‘হাওয়া’র দখলে। মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত ছবিটির ৩ লাখ ৫৮ হাজার ডলারের টিকিট বিক্রি হয়েছিল। বাংলাদেশ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, প্যারিস ও অস্ট্রেলিয়ায় চলছে ‘প্রিয়তমা’। এর বাইরে ইতালিতে একটি বিশেষ শো হয়েছে ছবিটির। ১৮ আগস্ট থেকে লন্ডন, আয়ারল্যান্ড, মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ায় মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি।

 

‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমার রেকর্ড

মুক্তির পর একের পর এক রেকর্ড গড়েছে ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমাটি। থ্রিলার ও রহস্যে ভরা সিনেমাটি দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে। সিনেমাটি দেখতে মুক্তির প্রথম দিন থেকেই দর্শক ভিড় করছেন সিনেমা হলগুলোতে। সিনেমার পরিচালক রায়হান রাফি বলেন, ‘মাত্র সাত দিনে সিনেপ্লেক্সে আড়াই কোটির টাকার বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে। এটা আমাদের সিনেমার জন্য দারুণ একটি খবর। এর আগে ঢাকা অ্যাটাক, আয়নাবাজি, দেবীর রেকর্ড ভেঙেছিল আমার পরাণ সিনেমা। এবার নিজের সিনেমার রেকর্ড ভেঙে দিল সুড়ঙ্গ। এর আগে বাংলা কোনো সিনেমার এমন রেকর্ড নেই। এ জন্য আমরা দর্শকদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।’ ছবিটির সহপ্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চরকির পক্ষে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।

বিদেশে ‘সুড়ঙ্গ’

‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমাটি বঙ্গজ ফিল্মসের আয়োজনে ৭ জুলাই সিডনির তিনটি সিনেমা হলে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর মুক্তি পায় অস্ট্রেলিয়ার সবগুলো রাজ্য ও টেরিটোরিয়াল শহরে। নিউ জিল্যান্ডে সিনেমাটি মুক্তি পায় ৩০ জুলাই। সেখানকার বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোর সিনেমা হলে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ‘সুড়ঙ্গ’ দেখানো হয়। মুক্তির আগেই প্রথম দুই সপ্তাহে ৩৭টি প্রদর্শনীর টিকিট ছাড়া হয়, যার মধ্যে ১২টির টিকিট বিক্রি হয়ে যায় আগেই। মুক্তির আগেই দুই হাজারের বেশি অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়। অস্ট্রেলিয়ায় মুক্তি পাওয়া কোনো বাংলা সিনেমার জন্য যা এই প্রথম ঘটেছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের দর্শকেরাও ‘সুড়ঙ্গ’ দেখেছেন। পরিচালক রায়হান রাফী জানান, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াতেও বেশ সাড়া ফেলেছে সিনেমাটি।

চয়নিকার ‘প্রহেলিকা’

২৯ জুন মুক্তি পাওয়া পাঁচ সিনেমার মধ্যে বিষয় ও নির্মাণগুণে ‘প্রহেলিকা’ সেরা। এমনটাই বলছেন চলচ্চিত্র সমালোচকরা। প্রথম সিনেমা ‘বিশ্বসুন্দরী’র পর দ্বিতীয় সিনেমা ‘প্রহেলিকা’তেও নিজের সিগনেচার রেখেছেন চয়নিকা। গল্পে রহস্য এবং নির্মাণে মিউজিক্যাল ছবির গুণে থ্রিলার ঘরানা নিয়ে সময়ের অন্যান্য ছবি থেকে এটিকে আলাদা করা যায়। সিনেমাটির প্রধান চরিত্র তিনটি। মাহফুজ, বুবলী ও নাসির উদ্দিন খান। তিন চরিত্রই চলচ্চিত্রটির প্রাণ ছিল। মাহফুজ-বুবলীর রসায়ন গ্রহণ করেছে দর্শক। অন্যদিকে নাসির উদ্দিন খান নেগেটিভ চরিত্রে ছিলেন অনন্য। রাশেদ মামুন অপু ছবির বড় একটি অংশের অভিনেতা। এ কে আজাদ সেতুও নিজের চরিত্রে দারুণ, তার চোখও কথা বলে। সিনেমাটির ‘মেঘের নৌকা’ রোমান্টিক গানটি এখন দর্শকের মুখে মুখে ফিরছে। ঈদের সিনেমা শুধু নাচে-গানে ভরপুর কমার্শিয়াল ফর্মুলাতেই হতে হবে এ ধারণা থেকে বেরিয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টায় সফল ‘প্রহেলিকা’। বিদেশের মাটিতেও সাড়া জাগিয়েছে সিনেমাটি। মাহফুজ আহমেদ অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে দর্শকদের সঙ্গে প্রহেলিকা দেখেছেন। ‘প্রহেলিকা’ সিনেমার অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘কোনোদিন ভাবিনি সিডনিতে আমার সিনেমা রিলিজ হবে। অবশেষে প্রহেলিকা এখানে রিলিজ হয়েছে। নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছে অভিনেতা হিসেবে। সিডনিতে নারী দর্শকরা বেশি এসেছেন প্রহেলিকা দেখতে। সবাই পরিবার নিয়ে মা-দাদীসহ দল বেঁধে এসেছেন। সিডনিতে দিনে একটি শো’তে বাংলা সিনেমা দেখানো হয়। কিন্ত প্রহেলিকার মাধ্যমে একই দিনে সিডনিতে কোনো বাংলা সিনেমার ৩টি শো হয়েছে। এটা একটা রেকর্ড।’

নিরব-বুবলির ‘ক্যাসিনো’

ঈদুল আজহায় মুক্তি পেয়েছিল সৈকত নাসির পরিচালিত ‘ক্যাসিনো’। এ সিনেমায় জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন নিরব ও বুবলী। প্রযোজনা করেছেন রাজিব সরোয়ার। সিনেমাটি দেখতে দেশের প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের উপস্থিতি বেশ ভালোই ছিল। দেশের বাইরেও মুক্তি পেয়েছে ‘ক্যাসিনো’। ২৬ আগস্ট থেকে অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরের দর্শকরা উপভোগ করছেন সিনেমাটি। নিরব বলেন, ভালো গল্পের সিনেমা এটি, কাজও ভালো হয়েছে। ঈদ উৎসবে দর্শক সিনেমাটি ভালোভাবে নিয়েছে। আশা করছি দেশের বাইরের দর্শকদেরও সিনেমাটি ভালো লাগবে। বুবলী বলেন, থ্রিলার-অ্যাকশন ঘরানার সিনেমা এটি। আমার বিশ্বাস, বিদেশের দর্শকরাও সিনেমাটি পছন্দ করবেন।

অপুর ‘লাল শাড়ি’

বন্ধন বিশ্বাসের ‘লাল শাড়ি’ ১২টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। নিজের ফেসবুক পেজ থেকে ছবিটির জন্য শুভ কামনা জানিয়ে শাকিব খান লিখেন, ‘এই ঈদে অপু-জয় প্রোডাকশন হাউসের প্রথম চলচ্চিত্র ‘লাল শাড়ি’ মুক্তি পেয়েছে। আমার সন্তান জয়ের নামের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের প্রথম চলচ্চিত্র এটি। বাবা হিসেবে সন্তানের নামের কারণে চলচ্চিত্রটির প্রতি আমার অন্য রকম এক আবেগ কাজ করছে। যত দূর শুনেছি, ‘লাল শাড়ি’র প্রেক্ষাপট আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পকে ঘিরে। বিলুপ্তপ্রায় এই শিল্প এবং এর সঙ্গে জড়িত প্রান্তিক মানুষদের জীবনযাপন, সুখ-দুঃখ এই চলচ্চিত্রের প্রাণ। তাই এই ঈদ উৎসবে পরিবার-পরিজন সবাইকে নিয়ে ‘প্রিয়তমা’র পাশাপাশি ‘লাল শাড়ি’ দেখার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’ দর্শকরা দেখেছেন সিনেমাটি। এরপর ভারতে কলকাতার দর্শকরাও দেখেছেন সিনেমাটি। ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় কলকাতার নন্দনে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয়েছিল পঞ্চম বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবের। উদ্বোধন করেছিলেন বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে উৎসবের আয়োজন করে কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবকে কেন্দ্র করে কলকাতার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নন্দন চত্বর জমজমাট হয়ে ওঠে। দুটি প্রেক্ষাগৃহ, নন্দন-১ এবং নন্দন-২তে দেখানো হয় বাংলাদেশের ২২টি চলচ্চিত্র। নিজের সিনেমার প্রদর্শনী উপলক্ষে অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস ও সাইমন গিয়েছিলেন কলকাতায়। নন্দন ১-এ প্রদর্শিত হয় সিনেমাটি।

‘১৯৭১ সেইসব দিন’

মুক্তিযুদ্ধের গল্প নিয়ে নির্মিত সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত সিনেমা ‘১৯৭১ সেইসব দিন’ দেশজুড়ে মুক্তি পেয়েছে ১৮ আগস্ট শুক্রবার। এরই অংশ হিসেবে ১৭ আগস্ট ২০২৩ গণভবনে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার হাতে সিনেমাটির পোস্টার তুলে দেন নির্মাতা হৃদি হক, চিত্রনায়ক ফেরদৌস, অভিনেত্রী তারিন, লাকী ইনামসহ আট সদস্যের প্রতিনিধি দল। অভিনেত্রী ও নির্মাতা হৃদি হক পরিচালিত প্রথম সিনেমা এটি। সিনেমাটি সম্পর্কে তার মূল্যায়ন, ‘১৯৭১ সেই সব দিন’ তীব্র ভালোবাসা আর আশা-আকাক্সক্ষার গল্প। শুধু সময়টা ১৯৭১। তাই এর গল্প দর্শককে কাঁদাবে-হাসাবে সেই সঙ্গে একাত্তরকে অনুভব করাবে।’ ‘১৯৭১ সেইসব দিন’-এর মূল গল্প ভাবনা ড. ইনামুল হকের। সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের একটি পরিবার এবং সেই সময়ের কিছু ঘটনা নিয়েই এই সিনেমার গল্প। তরুণ নির্মাতা হৃদি হক পরিচালিত সিনেমা ‘১৯৭১, সেই সব দিন’ মুক্তির দিনে হলে ছিল উপচে পড়া দর্শক। সোশ্যাল মিডিয়াতে এই সিনেমা অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন এমন অনেক দর্শকের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের এই সিনেমা দেখে কাঁদছেন অধিকাংশ দর্শক। দর্শকরা জানান, মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত সিনেমাটি পরিবার নিয়ে দেখার মতো। তারা বলছেন, সিনেমাটিতে মুক্তিযুদ্ধকে নতুনভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ‘১৯৭১ সেই সব দিন’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন মামুনুর রশীদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, মুনমুন আহমেদ, শিল্পী সরকার অপু, ফেরদৌস, তারিন, লিটু আনাম, সজল, সাজু খাদেম, সানজিদা প্রীতি প্রমুখ। সিনেমাটি পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয়ও করছেন হৃদি হক।

আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলা চলচ্চিত্রের সম্ভাবনা

অস্কারের মতো আয়োজনগুলোতেও পুরস্কার ও মনোনয়নপ্রাপ্তদের তালিকায় বাংলাদেশিদের নাম আসছে। বাংলাদেশি তরুণ প্রকৌশলী নাফিস বিন জাফর ২০০৭ সালে বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি ক্যাটাগরিতে এবং ২০১৫ সালে ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট ক্যাটাগরিতে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড জিতেন। বাংলাদেশের আরও এক তরুণ ওয়াহিদ ইবনে রেজাও অস্কার দৌড়ে ছিলেন। মাটির ময়না, টেলিভিশন, শুনতে কি পাও, বাংলাদেশের গ্রাম, আন্ডার কনস্ট্রকশন ও লাইভ ফ্রম ঢাকা ঢাকা শহরকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরেছে। এভাবে অনন্য সমাজ-সংস্কৃতিনির্ভর বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একটা নিজস্ব পরিচয় ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে।

বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র

এক সময় ব্যক্তি উদ্যোগে মিলনায়তন ভাড়া করে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি সিনেমার প্রদর্শনী হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে চিত্র পাল্টেছে। এখন বাংলাদেশি সিনেমা পরিবেশকের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে। দেশে ক্রমাগত যখন হলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেখানে প্রযোজকদের ভরসার জায়গা হতে যাচ্ছে বিশ্ববাজারে সিনেমা মুক্তি। বিদেশে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র পরিবেশনার কাজ করছে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো, বঙ্গজ ফিল্ম, দেশি ইভেন্টস, রিভেরি ফিল্মস, বায়োস্কোপ ফিল্মস, রাদুগাসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। কানাডায় এখন প্রচুর বাংলাদেশির বসবাস, যার সিংহভাগ থাকে টরন্টোতে। নিউ ইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশিদের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। সারাবিশ্বে যত প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করেন, তাদের সিংহভাগই থাকেন মধ্যপ্রাচ্যে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ পর্যন্ত সৌদি আরব গিয়েছেন প্রায় ৪১ লাখ বাংলাদেশি। এ ছাড়া কাতার, ওমান, দুবাই, কুয়েত, আরব আমিরাতে প্রচুর বাংলাদেশি রয়েছেন। কোরিয়া, মালয়েশিয়াসহ এশিয়ার অনেক দেশ, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বেশ কিছু দেশ, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এখন প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যা উল্লেখ করার মতো।

এই বিশাল বাংলাদেশি প্রবাসীর সঙ্গে ভারতীয় বাঙালিদের নিয়ে তৈরি হতে পারে বাংলাদেশি সিনেমার বড় এক বাজার। ইউটিউবে বাংলাদেশের নাটক সিনেমার ভিউ প্রবাসীদের কাছ থেকেই বেশি আসে। পরিসংখান বলছে, ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তাই সিনেমাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, সব মিলিয়ে বাংলাদেশের সিনেমার জন্য উন্মুক্ত হতে পারে কমপক্ষে ২০ কোটি টাকার বিশ্ববাজার। এই সব ধারণার বাস্তবায়ন হতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের সিনেমা। ঢাকাই সিনেমার বসন্ত থাকুক বছরজুড়ে।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: প্রচ্ছদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eleven − two =