সালেক সুফী: বাংলাদেশ ক্রিকেট নিকট অতীতে সাফল্যের ধারায় ফিরলেও গৃহদাহ এবং গভীর ক্ষত অনেকটা উন্মুক্ত করেছে তামিম ইকবালের এক পর্বের অবসর নাটক। অভিজ্ঞ মহল জানে বাংলাদেশ ক্রিকেটে বেশ কিছু দিন ধরে খেলোয়াড় এবং বিসিবি ব্যাবস্থাপনার টান পোরন চলছে। সিনিয়র খেলোয়াড় কারো সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক নেই হেড কোচ শ্রীলংকান চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহের। বিসিবি সভাপতির বাচাল অতিকথন প্রায়শই বিতর্কের সৃষ্টি করছে। নির্বাচক মন্ডলী দল নির্বাচনে মেধাকে প্রাধান্য না দিয়ে কিছু কিছু খেলোয়াড়কে বঞ্চিত করছে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের মাঝেও রসায়ন ভালো না থাকায় সাজঘরের পরিবেশও ভালো নেই. এমন না যে এই সব কিছু বিবিবির জানা নেই. কিন্তু জেনে শুনেই বিসিবি এগুলো সমাধানের কার্যকরী ব্যবস্থা সময় মত গ্রহণ করেনি। দায়িত্বহীন হেড কোচ হাতুরাসিংহে পূর্বের এসাইনমেন্টের সময় থেকেই সিনিয়র ক্রিকেটারদের হটানোর মিশন নিয়েছিল। মাশরাফির টি ২০ থেকে অকাল অবসর , মুশফিকের উপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ, মাহমুদুল্লার টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর , দলে অপরিহার্য থাকা সত্ত্বেও ওডিআই দল থেকে বাইরে রাখা , তামিম ,মুশফিকের টি ২০ থেকে অবসর এবং সর্বশেষ আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ চলা কালে তামিমের নাটকীয়ভাবে অবসর গ্রহণ সব কিছুর জন্য প্রাথমিক ভাবে হাতুরাসিংহের অশুভ প্রভাব এবং বিসিবি ব্যাবস্থাপনা দায়ী। ক্ষেত্রবিশেষে আমি খেলোয়াড়দের অপেশাদারী মনোভাব এবং নিজেদের মাঝে রেষারেষিকেও দায়ী করবো। কিছু প্রিন্ট ,ইলেকট্রনিক মিডিয়া কারণে অকারণে বিসিবি সভাপতিকে মিডিয়ায় উপস্থাপিত করেও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে। কিছু সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষত কিছু তারকা খেলোয়াড়দের ফ্যান পেজ অবুঝের মত কাজ করে উস্কানি দিয়ে থাকে।
খেলোয়াড় বিসিবির মুখোমুখি অবস্থানে আজ থেকে ৩ -৪ বছর আগে কিন্তু সবকিছু উঠে এসেছিলো। তখন যদি বিসিবি শাক দিয়ে মাছ না ঢেকে সমস্যাগুলো চিন্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতো তাহলে ক্রিকেটে সংকট হতো না. সব চেয়ে বড় ভুল হয়েছে বিতর্কিত হেড কোচ হাতুরাসিংহকে ফিরিয়ে আনা। প্রথম পর্বের এসাইনমেন্ট শেষ না করে ক্রিকেটকে এলোমেলো রেখেই ফিরে গিয়েছিলো হাতুরা। বিসিবি প্রধান কেন জানিনা হাতুরাকে অনেক অনিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা দিয়ে থাকেন। অন্নান্য ক্রিকেট বোর্ড কোচদের দায়িত্ব দলের কৌশল নির্ধারণ, খেলোয়াড়দের মেন্টরিং ইত্যাদি কাজের নির্দিষ্ট পরিধি বেঁধে দিলেও হাতুরা নির্বাচক ,দলনায়ক সবার উপর ছড়ি ঘোরাতে চায়. দলে প্রতিষ্ঠিত সিনিয়র খেলোয়াড়দের অবজ্ঞা করে নিজেদের পছন্দের কিছু খেলোয়াড়কে প্রাধান্য দেয়। এমতাবস্থায় আত্মসম্মান আছে এমন সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে ওর মানসিক দূরত্ব গড়ে উঠবে এটি স্বাভাবিক।
সবাই জানে ক্রিকেট বিষয়ে বর্তমান বিসিবি সভাপতির পূর্ব সম্পৃক্ততা সীমিত। কোনো পর্যায়ে কোনো ধরণের প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট কোনোদিন খেলেছেন বলে ধারণা নেই. শুধুমাত্র সরকার ঘনিষ্টতার কারণে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়ে উনি ক্রিকেট নিয়ে একনায়কের মত প্রতিনিয়ত মহাজ্ঞানী মতামত দিয়ে থাকেন। সমস্যার গভীরে না ঢুকে ওনার অতিশয় উক্তি ক্রিকেট পরিবেশকে ক্ষনে ক্ষনে বিষিয়ে তুলে। তামিম সংকটের পিছনে ওনার অতিশয় উক্তি কিছুটা দায়ী। দুনিয়ার কোনো দেশের ক্রিকেট বোর্ড প্রধান এভাবে প্রতিদিন ক্রিকেট নিয়ে কথা বলে না. সবাইকে নিদৃষ্ট দায়িত্ব দেয়া থাকে।
যাক সেকথা বাংলাদেশ দল কিন্তু এতো দুর্বল না যে আফগানিস্তানের সঙ্গে এভাবে শোচনীয় হার মানতে হবে. নিঃসন্দেহে দলের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি মাঠের খেলায় প্রভাব ফেলেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যাক্তিগত হস্তক্ষেপে তামিম সঙ্কটের সমাধান হলেও দলের ক্ষত কিন্তু রয়েই গাছে। অচিরে সমস্যাগুলো দূর না হলে বাংলাদেশ কিন্তু এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপ কাঙ্খিত সাফল্য পাবে বলে মনে হয় না.
সাকিব , মুশফিক , তামিমকেও মনে রাখতে হবে কেউ চিরদিন কোনো কিছুর জন্য অপরিহার্য থাকে না. ১০০% ফিটনেস না থাকলে শুধু অতীত পারফরমেন্স দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য পাওয়া যায় না. আমি বিসিবির দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন চাই। সেই সঙ্গে চাই হেড কোচ, নির্বাচক মন্ডলী এবং খেলোয়াড়দের জবাবদিহিতার আওতায় আনা। নাহলে এশিয়া কাপ বা বিশ্ব কাপ থেকে কিছু অর্জনের স্বপ্ন হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে।