তারকাদের ভালোবাসার উপহার

রোজ অ্যাডেনিয়াম

ভালোবাসার মানুষটিকে চমকে দিতে চায় সবাই। কখনো বিশেষ উপহার দিয়ে, কখনো বিশেষ কিছু তৈরি করে আনন্দ পায়। এমনকি প্রিয় মানুষের মৃত্যুর পরেও তার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য অনেক কিছু করেন প্রেমিক। মমতাজের সমাধিতে শাজাহান প্রেমের অমর স্মৃতিসৌধ তাজমহল বানিয়েছেন। যা এখনো এক বিস্ময়। কয়েক বছর আগে আনন্দ চোকসে স্ত্রীকে ভালোবেসে তাজমহলের আদলে একটি বাড়ি উপহার দিয়েছিলেন। ভারতের মধ্যপ্রদেশের বুরহানপুরের বাসিন্দা তিনি। তাজমহল মূলত একটি সমাধি স্তম্ভ।

ইংরেজিতে ‘সমাধিস্তম্ভ’ কে বলা হয় মসলিয়াম। এই মসলিয়াম কথাটি এসেছে আরও একটি ভালোবাসার নিদর্শন থেকে। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৭৭ সালে এশিয়া মাইনরে ‘হালিকারনাসাস’ নামে একটা ছোট্ট রাজ্য ছিল। এই রাজ্যর রাজার নাম ছিল হেকটামেনাস। হেকটামেনাসের ছেলের নাম ছিল মসুলাস আর মেয়ের নাম ছিল আর্টিমিসিয়া। রাজা হেকটামেনাস তার ছেলে মেয়েকে বিয়ে দেন মানে ভাই বোন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। সে যুগে ভাই বোনের মাঝে বিয়ে প্রথা সিদ্ধ ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫৩ সালে মসুলাস নিহত হন। স্বামীর মৃত্যুতে আর্টিমিসিয়া মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। স্বামীর স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে ভালো স্থপতি খুঁজে বের করেন তিনি। সেকালের বিখ্যাত গ্রিক স্থপতি স্কোপাস আসেন সমাধির ডিজাইনার হিসেবে। রানী আর্টিমিসিয়ার তত্ত্বাবধানে স্কোপাস পাহাড়ের চুড়ায় নির্মাণ করেন মসুলাসের সমাধিস্তম্ভ। সম্রাট মসুলাসের দেহভস্ম এখানে সমাধিস্থ করার কারণে এর নাম হয়ে যায় মসলিয়াম।

সেই থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবীর যে কোনো স্থানে সমাধিস্তম্ভ তৈরি হলে তাকে মসলিয়াম বলে। ১৪০৪ সালে এক ভূমিকম্পে প্রেমের এই অমর সৌধ ধ্বংস হয়ে যায়। কথিত আছে প্রেমিক মসলিয়ামের দেহভস্মর অর্ধেক আর্টিমিসিয়া মসলিয়ামে সমাধিস্থ করেছেন বাকি অর্ধেক নিজের কাছে রেখে দেন। আর প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে স্বামীর দেহভস্মের এক চামচ পানিতে মিশিয়ে পান করে রাজ দরবারে যেতেন।

প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস উদযাপন করা হয় সারা বিশ্বে। কমবেশি সকলের জানা ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস। চলুন জেনে নেওয়া যাক ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে কোন তারকা কী উপহার দিয়ে তার ভালোবাসার মানুষকে চমকে দিয়েছিলেন।

শাবনাজের জন্য নাঈমের বিশেষ গাড়ি

নব্বই দশকের জনপ্রিয় পর্দা জুটি নাঈম-শাবনাজ বাস্তব জীবনে স্বামী-স্ত্রী। ২০২৩ সালে ভালোবাসা দিবসের আগেই নিজের তৈরি করা একটা বিশেষ জিপ শাবনাজকে উপহার দেন নাঈম। জিপটিতে চড়ে প্রিয় স্ত্রীকে নিয়ে নিজের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে ঘোরেন। এই উপহার পেয়ে শাবনাজ বলেছিলেন, ‘কখনো কখনো যাত্রা গন্তব্যের চেয়েও সুন্দর হয় যদি পাশে সঠিক মানুষটি থাকে। নাঈম আমাদের উপহার দিল তার নিজের তৈরি গাড়ি।’ অনেক আগে থেকেই গাড়ির প্রতি আলাদা শখ আছে নাঈমের। শুরুর দিকে নিজের ব্যবহৃত গাড়িগুলো নিজের মতো করে ডিজাইন করতেন। তবে আলাদা আলাদা যন্ত্রাংশ কিনে কখনো নিজেই একটি গাড়ি তৈরি করবেন, এটা ভাবেননি। গাড়িটি পেয়ে বেশ খুশি হন শাবনাজ।

গৌরীর জন্য শাহরুখের উপহার

প্রতি ভ্যালেন্টাইন্ ডে-তে স্ত্রী গৌরীকে চমকে দেওয়ার জন্য কোনো না কোনো পরিকল্পনা করেন বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। সবাই জানে শাহরুখ-গৌরী হলেন মায়ানগরীর অন্যতম জনপ্রিয় জুটি। ৩২ বছরের দাম্পত্য জীবন তাদের। শাহরুখ-অনুরাগীরা অনেকেই তাদের সম্পর্ককে আদর্শ মানেন। ১৯৯১ সালে গৌরীর সঙ্গে বিয়ে হয় শাহরুখ খানের। তার এক বছর পর ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় কাজ শুরু করেন তিনি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গেই অভিনয় করেছেন শাহরুখ। তবে শাহরুখ-গৌরীর রসায়ন সবসময় ছিল সবকিছুর উপরে। একবার শাহরুখের এক অনুরাগী জানতে চান প্রথমবার গৌরীকে ভালোবাসা দিবসে কী উপহার দিয়েছিলেন তিনি? জবাবে শাহরুখ যা বললেন তা শুনে চমকে গেছেন অনেকেই। কিং খান বলেন, ‘অনেক বছর আগে ভ্যালেন্টাইন ডে-তে গৌরীকে গোলাপি রঙের প্লাস্টিকের দুল কিনে দিয়েছিলাম।’ এখনো সেই উপহারকেই নাকি সেরা উপহার মনে করেন গৌরী। জানা যায়, ভালোবাসা দিবসের সন্ধ্যায় শাহরুখ স্ত্রীকে নিয়ে হাঁটতে বের হন। বেশিরভাগ সময়ই ফুল দিয়ে নিজের ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা জানান তিনি। ২০১৪ সালে গৌরীর ইন্টেরিয়র ডিজাইন স্টোর দ্য ডিজাইন সেলের পুরোটাই ফুল আর চকলেট দিয়ে সাজিয়ে গৌরীকে চমকে দিয়েছিলেন।

মৌসুমীকে ওমর সানির প্রথম উপহার

ওমর সানী সফল নায়ক সেই সময়। হঠাৎ প্রস্তাব পেলেন ‘দোলা’ সিনেমার। নারীপ্রধান সিনেমা বলে ওমর সানী প্রথমে রাজি না হলেও পরে গল্প শুনে অভিনয়ের সম্মতি দেন। ‘দোলা’ সিনেমা দিয়ে প্রথম জুটি হন ওমর সানী-মৌসুমী। ‘দোলা’ সিনেমার শুটিংয়ে সিলেটে গিয়ে প্রথমেই মৌসুমীর সঙ্গে সানীর রাগারাগি হয়। জানা যায়, সিলেটের সেই ঘটনা থেকেই মৌসুমীর জন্য ওমর সানীর ভালোবাসা জন্মে। এরপর ‘আত্ম অহংকার’ সিনেমার শুটিং করতে সিলেটের জৈন্তাপুরে গিয়েছিলেন মৌসুমী ও ওমর সানী। ততদিনে তাদের বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। সেখানে শুটিংয়ের সময় মৌসুমী হঠাৎ ওমর সানীকে জানান, স্যুটিংয়ের পরের দিনই তার জন্মদিন। দুপুরে তারা একসঙ্গে খাবেন। সেই সময় ওমর সানী প্রথম মৌসুমীকে উপহার দেন। তার প্রথম উপহার ছিল সোনার চেইন। ওমর সানী নিজের গলা থেকে প্রায় চার ভরি ওজনের একটা সোনার চেইন মৌসুমীকে উপহার দেন।

বাপ্পা মজুমদারকে তানিয়ার উপহার

বছর কয়েক আগের কথা। এক ফেব্রুয়ারি মাসে বাপ্পা মজুমদার তার ভালোবাসার মানুষ অভিনয়শিল্পী-উপস্থাপিকা তানিয়া হোসাইনের কাছে পেয়েছিলেন আকর্ষণীয় এক পিয়ানো উপহার। এ উপহার পেয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যান কণ্ঠশিল্পী বাপ্পা মজুমদার। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে বাপ্পা লিখেছিলেন, ‘আমি সত্যি সত্যিই বাকরুদ্ধ। এই মুহূর্তে আমি কোনো শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না অনুভূতি প্রকাশের। তবে এই অনুভূতি স্বর্গীয়। আর আমাকে স্বর্গীয় অনুভূতির ছোঁয়া দিয়েছে তানিয়া হোসাইন। সত্যিই আমি ভাষাহীন হয়ে গেলাম। এভাবে আমাকে বোকা বানানোর কোনো মানে হয়? বলো? ইহাকেই বলে, তব্দা খাইয়া বইসা গেলাম।’ দিনটি ছিল ৫ ফেব্রুয়ারি, বাপ্পা মজুমদারের জন্মদিন। বিয়ের পর প্রথম ভালোবাসা দিবসের আগে পিয়ানো উপহার দিয়ে এভাবেই চমকে দিয়েছিলেন তানিয়া।

ভিক্টোরিয়াকে বেকহামের মূল্যবান উপহার

১৯৯৮ সালে ভালোবাসা দিবসের কয়েক সপ্তাহ আগে অর্থাৎ ২৪ জানুয়ারি ফুটবল তারকা ডেভিড বেকহাম প্রেমের প্রস্তাব জানান স্পাইস গার্লখ্যাত ভিক্টোরিয়া বেকহামকে। ৬৫ হাজার ডলার মূল্যের একটি আংটি উপহার দিয়ে নিজের প্রেমের কথা জানিয়েছিলেন। এরপর বিয়ের পরে প্রথম ভালোবাসা দিবসে ভিক্টোরিয়াকে ৮ মিলিয়ন ডলার মূল্যের বুলগারি ব্র্যান্ডের নেকলেস উপহার দিয়েছিলেন বেকহাম। সেই নেকলেসের গায়ে ভিক্টোরিয়ার নাম খোদাই করা ছিল।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: হলি বলি টলি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

nineteen − 7 =