বাহারি শ্রাগ

নাহিন আশরাফ

ফ্যাশন কখনো এক জায়গায় থমকে থাকে না, ফ্যাশনের ধর্মই পরিবর্তন। যুগ যুগ ধরে ফ্যাশনে হয়েছে নানা পরিবর্তন। আবার ঘুরে ফিরে পুরোনো ফ্যাশন ফিরে এসেছে। তেমনি বর্তমানে এক ট্রেন্ডি পোশাকের নাম শ্রাগ। অনেকে এটিকে কটি বললেও কটির সাথে এটির রয়েছে অনেক পার্থক্য। কিছুটা ঢিলেঢালা কটির মতো এই পোশাক বেশ জনপ্রিয়। ফ্যাশন সচেতন নারীরা তাদের লুকে ভিন্নতা নিয়ে আসতে পরিধান করে থাকেন শ্রাগ।

শীতকাল ফ্যাশনের মাস। এ সময় অনেকেই ভিন্নধর্মী ট্রেন্ডি শীত পোশাকের খোঁজে থাকেন। তাদের পছন্দের তালিকায় থাকতে পারে শ্রাগ। কারণ ফ্যাশনের পাশাপাশি শীত নিবারণেও এটি বেশ কাজে দেয়। এখন ফ্যাশনের এমন একটি পর্যায় চলছে যখন মানুষ সৌন্দর্যের পাশাপাশি আরামকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। শ্রাগ জনপ্রিয় হবার কারণ এটি বেশ আরামদায়ক। শ্রাগের সুবিধা হচ্ছে যেকোনো পোশাকের সাথে পরিধান করা যায় যেমন ফতুয়া, টপস, টি-শার্ট কুর্তি, গাউন ইত্যাদি। যেকোনো সাদামাটা পোশাকের সাথে শ্রাগ পরে তা আরো সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব।

বিভিন্ন কাপড়ের শ্রাগ পাওয়া যায়। সুতি, খাদি, জর্জেট, লিনেন, কাতান, মসলিন, কাঞ্জিভরম সব ধরনের কাপড়েই তৈরি হচ্ছে শ্রাগ। শ্রাগে ভিন্নতা নিয়ে আসার জন্য তার মধ্যে সুই-সুতার কাজ করা হচ্ছে, বুকে কিংবা শ্রাগের নিচে ফুল লতাপাতার বিভিন্ন নকশা করা হচ্ছে। এক সময় শুধু নেটের শ্রাগ পাওয়া গেলেও এখন দেশীয় মোটিফ মাথায় রেখেও বিভিন্ন শ্রাগ তৈরি করা হয়। কটন শ্রাগ যেকোনো ঋতুর জন্য বেশ মানানসই। কটন শ্রাগের উপর সুই-সুতার কাজ কিংবা নানা ধরনের প্রিন্ট করা হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে চাহিদা সিল্কের শ্রাগের। সিল্কের শ্রাগের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রিন্ট করা হয়।

জর্জেট কিংবা কাতান শ্রাগ পরা উচিত শুধুমাত্র শীতকালে। কারণ এই কাপড়গুলো কিছুটা ভারী হয়। শীত জুড়ে থাকে নানারকম অনুষ্ঠান ও বিয়ের দাওয়াত। কাতান শ্রাগ পরে যাওয়া যেতে পারে বিয়ের অনুষ্ঠানে। শাড়ি পরলে শীত পোষাক কেমন পরিধান করা যেতে পারে তা নিয়ে অনেকে চিন্তায় পড়ে যান। তাই শাড়ির সাথে শ্রাগ পরলে যেমন ফ্যাশনেবল লাগবে তেমনি শীত থেকেও কিছুটা রক্ষা পাওয়া যাবে। ফ্যাব্রিক ও অর্নামেন্টের শ্রাগ ডিজাইন করা হচ্ছে যা দেশীয় পোশাকসহ যেকোনো ড্রেসের সাথে মানিয়ে যাবে। এমনকি সালোয়ার কামিজের উপরেও পরা হচ্ছে শ্রাগ।

একরঙা গাউনের সঙ্গে ওয়েস্টলাইনের শ্রাগ মানানসই। তীব্র শীতে যদি শ্রাগ পরতে চান সেক্ষেত্রে উলিকট, সুতি কিংবা গেঞ্জি মেটেরিয়ালের শ্রাগও বেছে নিতে পারেন। গেঞ্জি কাপড়ের শ্রাগ সবচেয়ে বেশি মানানসই ওয়েস্টার্ন পোশাকের সাথে। দেশীয় পোশাকের সাথে কটন কিংবা সিল্ক পরা যেতে পারে। দেশীয় ঐতিহ্য বহন করতে জামদানি মোটিফের শ্রাগ তৈরি হচ্ছে। শ্রাগের মধ্যে বৈচিত্র্য আনতে নানা ধরনের রঙিন স্ক্রিনপ্রিন্ট নিয়ে করা হচ্ছে। নান্দনিকতা ফুটিয়ে তুলতে কখনো প্রিয় গানের কিংবা কবিতার লাইন শ্রাগে প্রিন্ট করা হচ্ছে।

শ্রাগের সুবিধা হলো এটি যেকোনো সাধারণ পোশাককে অনেক বেশি ফ্যাশনেবল করে তুলতে পারে। সুতি কিংবা সিল্কের শ্রাগ ক্লাস বা অফিস যেকোনো জায়গায় খুব সহজে পরিধান করে যাওয়া যাবে। এক শ্রাগ বিভিন্ন পোশাকের উপর পরলে ভিন্ন ভিন্ন লুক আসে। যেমন টি-শার্ট কিংবা কুর্তির উপরে শ্রাগ পরে অনেকে ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস করতে যান। পোশাকের সাথে ওড়না নেওয়া অনেকের জন্য ঝামেলাদায়ক, বাড়তি ওড়নার ঝামেলা এড়াতে শ্রাগ এখন তরুণীদের কাছেও প্রিয়। শ্রাগের মধ্যে পকেটও রাখা হয়। শ্রাগ পরিধানের ফলে কিছুটা লম্বা ও সিøম লাগে। শ্রাগ পোশাকের একঘেয়েমি ভাব কমিয়ে দেয় যেমন কোনো পুরাতন পোশাক যা অনেক বার আগে পরা হয়েছে তা যদি শ্রাগ দিয়ে পরা হয় তখন মনে হবে এটি নতুন কোনো পোশাক।

তবে কেমন শ্রাগ আপনি নিজের জন্য বেছে নিবেন তা নির্ভর করছে পোশাক ও ব্যক্তিত্বের উপর। পোশাকের সাথে মিলিয়ে শ্রাগ বেছে নিতে হবে। তবে আপনার পোশাক যদি হয় কিছুটা সাদামাটা তাহলে শ্রাগ বেছে নিতে পারেন হলুদ, গোলাপি, লালের মতো উজ্জ্বল রঙের। আবার পোশাকে অনেক কারুকাজ করা থাকলে হালকা রঙের শ্রাগ পরা উচিত যেমন সাদা, আকাশি। প্রিন্টের শ্রাগ পরলে পোশাক হালকা রঙের বেছে নেওয়া উচিত। পোশাক এবং শ্রাগ দুটোতেই যদি খুব কারুকাজ করা থাকে তাহলে তা দেখতে দৃষ্টিনন্দন হবে না। হলুদ, লাল রঙের শ্রাগ পরলে পোশাক সাদা কিংবা কালো পরিধান করার চেষ্টা করুন।

শ্রাগের কাটিংয়ে রয়েছে নানা ভিন্নতা। শ্রাগের ক্ষেত্রে অনেকে বেছে নিচ্ছেন ওভারসাইজ। হাতার মধ্যেও থাকে নানা নকশা। কখনো হাতায় থাকে কুচি আবার কখনোবা ঢিলেঢালা হাতা। আরো রয়েছে জিগজ্যাগ কাটিং ও বুকে কুচি দেওয়া। অনেকে স্কার্টের সাথে শ্রাগ পরে থাকেন। সেক্ষেত্রে শ্রাগ হতে হবে স্কার্টের মতো লম্বা। স্কার্টের সাথে কোমর অবধি শ্রাগ দেখতে ভালো লাগে না। চাইলে পোশাকের সাথে কন্ট্রাস্ট করেও শ্রাগ পরা যেতে পারে। পোশাক ও শ্রাগ দুটোই এক রঙের হলে তার সাথে নানা রকমের জুয়েলারি পরা যেতে পারে। শ্রাগের সাথে মিল রেখে পরিধান করতে পারেন জুতা। ফিটিং টপসের সাথে পরতে পারেন লং লাইন ড্রেপ শ্রাগ। এ শ্রাগগুলোর ঝুল নিচ অবধি থাকে।

ফ্রিঞ্জড শ্রাগে ঝুল কিছুটা কম থাকে। লেস শ্রাগ বেছে নিতে পারেন গর্জিয়াস লুকের জন্য। শাড়ি কিংবা গাউনের সাথে লেস শ্রাগ ভালো মানায়। ক্রপড শ্রাগ যেকোনো পোশাকের সাথেই মানায়। এই শ্রাগগুলোর ঝুল কোমর পর্যন্ত থাকে। ফ্যাশন হাউজগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে পুরো দৈর্ঘের শ্রাগ। এই শ্রাগগুলোর অনেক লেয়ার থাকে। রোজ ব্যবহারের জন্য লিলেনের শ্রাগ সবচেয়ে উপযোগী।

একটা সময় শ্রাগকে ওয়েস্টার্ন পোশাক মনে করা হতো। কিন্তু বিভিন্ন ফ্যাশন ব্র্যান্ড শ্রাগে তুলে ধরছে দেশীয় ঐতিহ্য। জামদানি মোটিফ, কাতান, মসলিম, নকশি কাঁথা নকশা করা হচ্ছে শ্রাগে। এছাড়া শ্রাগের মধ্যে গ্রামবাংলার লোকশিল্পীদের করা শীতলপাটির ছাপও দেওয়া হয়। হাফপ্যান্ট, ফুলপ্যান্ট, কামিজ, কুর্তি, ফতুয়া, অফশোল্ডার বা স্লিভলেস, ক্রপটপ, শার্ট, শাড়ি কিংবা ওয়েস্টার্ন যেকোনো ধরনের পোশাকের সঙ্গেই শ্রাগ মানিয়ে যাবে দারুণভাবে। অ্যাকুয়া সিল্কের চওড়া ঘেরের শ্রাগও বেছে নেওয়া যেতে পারে এইসময়। চওড়া ঘেরের হলেও এটি ভাঁজ করলে একদম ছোট হয়ে যায় আর ওজনে একেবারেই হালকা।

বাহারি সব শ্রাগ পাওয়া যাবে এখন অনলাইনে ও যেকোনো ফ্যাশন ব্র্যান্ডে। আড়ং, বিশ্বরঙ, রঙ বাংলাদেশ, ইয়েলো, লা রিভ, রাইজ, সেইলরসহ নানা ফ্যাশন ও বুটিক হাউসে শ্রাগ পাওয়া যায়। এছাড়া মৌচাক ও নিউ মার্কেটে সাশ্রয়ী দামে শ্রাগ পাওয়া যায়। অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন পেজ নানা নকশার শ্রাগ নিয়ে কাজ করছে যেমন বিজেন্স, দাম কতো ইত্যাদি।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ফ্যাশন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

thirteen + 13 =