ব্লকবাস্টার ম্যাচটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর জিতে ভারত পাকিস্তানকে ছিটকে দিল

সালেক সুফী

চার ছক্কার ক্রিকেটে  ২০০+ স্কোর নিয়মিত হয়ে চলেছে, সেই রান তাড়া করে যখন প্রতিপক্ষ দল ম্যাচ জয় করছে। সেই ফরম্যাটের বিশ্বকাপে অন্যতম ফেভারিট দল ভারত কাল শ্বাসরোধ করা খেলায় ১১৯ রানে গুটিয়ে যেয়েও ৬ রানের অবিশাস্য জয় পেয়েছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান দলের বিরুদ্ধে।  নিউ ইয়র্কের লং আইল্যান্ডের নাসাউ কাউন্টি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেট ছিল ব্যাটসম্যানদের জন্য মৃত্যুকূপ।  সেখানে টস জিতে পাকিস্তানের বাবর আজম ভারতকে ব্যাটিং করতে পাঠিয়েছিল।

ম্যাচটির শুরুতে এবং ম্যাচ চলাকালে বৃষ্টি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পাকিস্তান স্মার্ট বোলিং এবং শুরুর দিকে কিছু ক্যাচ ছেড়ে দেওয়া ছাড়া তুখোড় ফিল্ডিং করে ১৯ ওভারে ভারত দলের ইনিংস ১১৯ রানে সীমিত রেখেছিল। ভারত দলের কট্টর সমর্থকরা স্বপ্নেও ভাবেনি পাকিস্তান এই ম্যাচ হেরে যাবে। পাকিস্তান দলের ব্যাটিংয়ের সময় সূর্যালোকে উদ্ভাসিত ছিল চত্বর।  বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান সতর্কতার সঙ্গে শুরু করেছিল।

কিন্তু বুমরা, সিরাজ, পান্ডিয়ার কার্যকরী বোলিং, রোহিতের সাজানো আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং এবং গোটা ভারত দলের হার না মানা অদম্য মানসিকতার কারণে পাকিস্তান ইনিংস ১১৩/৭ সীমিত থাকে।  ৬ রানের অবিশ্বাস্য পরাজয়ে পাকিস্তানের টি২০ বিশ্বকাপ মিশন শেষ বলা যায়। দুই ম্যাচ জিতে শক্তিশালী ভারত সদর্পে পরবর্তী রাউন্ডে ওঠার পথ সুগম করে নিলো।

বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল দুটির মুখোমুখী লড়াই দেখতে মুখিয়ে ছিল সারা ক্রিকেট বিশ্ব। মুহূর্তে শেষ হয়েছিল ম্যাচের টিকেট। একটি টিকেট যে কোনো মূল্যে কেনার জন্য মুখিয়ে ছিল লক্ষ ক্রিকেটপূজারী। মাঠে উপস্থিত হয়ে খেলা দেখেছে ৩৪ হাজার গুণমুগ্ধ দর্শক। কিন্তু ধীর অসম বাউন্সের উইকেটে মেঘে ঢাকা আকাশের নিচে দুই দলের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা লড়াইটার আকর্ষণ বহুলাংশে ম্লান করে দয়ে। তবে খেলার ফলাফল প্রমাণ করে তুলনামূলক শ্রেয়তর ভারত দল যোগ্যতার ভিত্তিতে ম্যাচ জিতে নিয়েছে। এমন ম্যাচ যেকোনো পরিস্থিতিতে সম্ভবত পাকিস্তান দলই হারতে পারে।

শুরুতে বৃষ্টির কারণে দেরিতে শুরু হয়েছিল খেলা। ময়েশ্চার থাকা উইকেটে সিম মুভমেন্ট ছিল বাড়ন্ত। সেই মুভমেন্ট বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজে লাগিয়ে শুরুতেই ভিরাট কোহলী এবং রোহিত শর্মার উইকেট তুলে নিয়ে ভারত দলকে কোণঠাসা করে ফেলেছিল পাকিস্তান। এই সময় এই ম্যাচের সর্বোচ্চ রান করা ভারতেরর ঋষব পন্ত (৪২) এর ক্যাচ তিনবার ফস্কে যায়। অবশ্য এরপর মোহাম্মদ আমীর, হারিস রউফ, নাসিম শাহ  ঘাতকের মতো তাণ্ডব চালায়। পাকিস্তান বেশ কিছু ক্যাচ অসামান্য দক্ষতার সঙ্গে লুফে নেয়।

এক পর্যায়ে ৮৯ থেকে ১১৯ মাত্র ৩০ রানে ৭ উইকেট হারায় ভারত। ভারত ইনিংসে পন্ত ছাড়া দুই অংকের স্কোর করেছে আকসার প্যাটেল ২০ এবং রোহিত শর্মা ১৩। আট জন ব্যাটসম্যান দুই অংকের স্কোরে পৌঁছতে পারেনি। পাকিস্তানের হয়ে হারিস রউফ ২১ রানে ৩টি, নাসিম শাহ ২১ রানে ৩টি এবং মোহাম্মদ আমির ২৩ রান দিয়ে ২ টি উইকেট তুলে নেয়।

১১৯ রানে শেষ হওয়া ইনিংসের বিরতিতে ম্যাচ পূর্বাভাসে দেখানো হয় পাকিস্তান ৯০% এবং ভারত ১০%

হাল ছেড়ে দেয়নি রোহিত শর্মার ভারত দল।  এহেন উইকেটে প্রচণ্ড স্নায়ু চাপের ম্যাচটি জয়ের দক্ষতা ছিল বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ানের। কিন্তু শুরুতেই বাবর আজমকে কালকের খেলার সেরা খেলোয়াড় ফেরালে একা রিজওয়ানের পক্ষে লড়াই করে পাকিস্তান দলের জয়ের তরী কূলে ভেড়ানো সম্ভব হয়নি।

রিজওয়ান (৩১), ইমাদ ওয়াসিম (১৫), বাবর আজম (১৩), ফখর জামান (১৩) ছাড়া বাকি সবাই দাঁড়াতেই পারেনি বুমরা (৩/১৪), পান্ডিয়া (২/২৪), এক্সার প্যাটেল এবং অর্শদীপ সিংয়ের আক্রমণাত্মক আগ্রাসী বোলিং মোকাবিলায়। জানিনা ভারত ব্যাটিং শেষে যে পরিস্থিতি ছিল সেখান থেকে এভাবে এই ম্যাচ পাকিস্তান ছাড়া কেউ এভাবে হারে কি না। ম্যাচ জয়ী ভারত দলের কৃতিত্ব এতটুকু খর্ব না করে বলবো ম্যাচ ভারত জিতেনি, হেরেছে পাকিস্তান। এই পরাজয়ে বলা যায় পাকিস্তান টুর্নামেন্ট থেকে একরকম ছিটকে গেলো।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আসরে পাকিস্তানের উপর ভারত দলের আধিপত্য বজায় রইলো। পারস্পরিক মোকাবিলায় ১৫টি ম্যাচ খেলা ভারত ১০ ম্যাচ জিতলো। পাকিস্তান জিতেছে ৩টি। ২টি ম্যাচ জয়-পরাজয় নির্ধারণ না হয়েই শেষ হয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

fourteen − eleven =