যে ঘরে তুমি নেই সে ঘরে ফিরব না

ইমন-বিজরী

সম্পর্কের শুরুতে প্রিয়জনের প্রতি অনুভূতিটা ঠিক এমনই থাকে। কিন্তু নদীর বাঁক যেমন পরিবর্তনশীল সম্পর্কও তেমন। যাকে ছাড়া জীবন মরুময় মনে হতো একসময় তার সাথে জীবন কাটানোই অসম্ভব হয়ে পড়ে। যার কথা মনে পড়লেই ভালোবাসা উথলে উঠত বুকের ভিতর একটা সময় তাকে আর মনেই পড়ে না। এমন চিত্রনাট্যই রচিত হয়েছিল সংগীত পরিচালক শওকত আলী ইমন ও বিজরী বরকতুল্লাহর দাম্পত্যজীবনে।

দুজন দুই অঙ্গনের মানুষ হলেও ভালোবাসা একবিন্দুতে নিয়ে এসেছিল তাদের। ১৯৮৯ সালে এক কনসার্টে পরিচয় হয়েছিল ইমন-বিজরীর। একে অন্যের মনে সুর তুলতে সময় নেননি তারা। ফলস্বরূপ পরিচয় গড়ায় প্রণয়ে। এরপর বেশ ক’বছর চুটিয়ে প্রেম শেষে ১৯৯৬ সালে গাঁটছড়া বাঁধেন তারা। দুই মাধ্যমের দুই তারকার এই যৌথ জীবনের আরম্ভ সতীর্থদেরও করেছিল আনন্দিত। বিজরী-ইমনও একসঙ্গে জীবন টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন দেড়যুগের কাছাকাছি। ভালোবাসার ফসল হিসেবে সে ঘরে এসেছিল এক ফুটফুটে কন্যাসন্তান।

কিন্তু তবুও শেষরক্ষা হয়নি। টানা ১৭ বছর কাটিয়ে ২০১২ সালের শেষের দিকে এসে ইমন-বিজরীর প্রেমের তাজমহল ভেঙে খানখান হয়ে যায়। ইমনের ঘর ছাড়েন বিজরী। ইতি টানেন সংসার জীবনের। দীর্ঘ দাম্পত্যজীবনের এমন পরিণতি দেখে অনেকেই খুঁজে ফিরছিলেন এর নেপথ্য কারণ। কিন্তু শুরুতে এ নিয়ে কেউ মুখ খোলেননি। পরে জানা যায়, শওকত আলী ইমনের একাধিক নারী আসক্তিই ছিল ঘর ভাঙার কারণ। ভালোবেসে বিয়ে করলেও এক বিজরীতে সন্তুষ্ট ছিলেন না ইমন। একাধিক নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তার। এর প্রমাণ মিলেছিল বিজরীর সঙ্গে সংসার চলাকালীন জিনাত কবীর নামের এক নারীর সঙ্গে তার প্রণয়ে।

কিন্তু জিনাতকে একসময় বিয়ে করতে অস্বীকার করেন ইমন। সেসময় জিনাত বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের মামলা করেছিলেন। সেই মামলার জেরে নিজের বাসায় মদ্যপ অবস্থায় ইমন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন পুলিশের হাতে। সেসময় জিনাতের সঙ্গে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করছিলেন ইমন। পরে রমনা থানায় পুলিশের উপস্থিতিতে চার হাত এক করা হয় তাদের। কিন্তু জামিনে বেরিয়েই জিনাতকে তালাক দেন ইমন। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি। জিনাতের নগ্ন ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। পাশাপাশি চাঁদাও দাবী করেছিলেন এ সংগীত পরিচালক। এমন অভিযোগ এনে জিনাত আবার মামলা করেন ইমনের বিরুদ্ধে। ফের গ্রেপ্তার হন তিনি।

জিনাতের সঙ্গে সম্পর্ক চুকে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন একাই ছিলেন ইমন। দীর্ঘ সাত বছর একাকী জীবনযাপনের পর ২০২০ সালে তিনি বিয়ে করেন সংবাদ পাঠিকা হৃদিতা রেজাকে। চ্যানেল আইয়ের এক অনুষ্ঠানে পরিচয় হয়েছিল তাদের। পরে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় ইমন-হৃদিতার। সংবাদপত্রে শিরোনাম হয়, বোন আবিদার পছন্দে বিয়ে করলেন ইমন। সেসময় ইমন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, অবশ্যই ভালো লাগছে। প্রায় ১০ বছর ব্যাচেলর লাইফ কাটালাম। জীবনকে তো সাজাতে হবে। প্রেম করে বা পরিবারের মতেই হোক, বিয়ে তো করতেই হতো, করে ফেললাম।

কিন্তু যৌথ জীবন হয়তো ইমনের সহ্য হয় না। এক বছরের মাথায় ভাঙনের সুর ওঠে ইমন-হৃদিতার সংসারে। তবে সেই ভাঙন শান্তিপূর্ণভাবে হয়নি। হৃদিতা রেজা যৌতুক দাবি ও নারী নির্যাতনের অভিযোগ এনে মামলা করেন ইমনের বিরুদ্ধে। আবার হাতকড়া পড়ে এ সংগীত পরিচালকের হাতে। তারপর থেকে ইমন একাই আছেন। জনৈক মডেলের সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন ছড়ালেও সংসারে আর পা বাড়াননি তিনি।

তবে বিজরী আবার এর ঠিক উল্টো। ইমনের সঙ্গে বিচ্ছেদের এক বছরের মাথায় সহশিল্পী ইন্তেখাব দিনারের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তিনি। তারপর থেকে সুখেই ঘরকন্না করছেন বিজরী-দিনার। এরইমধ্যে দ্বিতীয় সংসারে এক দশক পার করেছেন তিনি। জানা গেছে, ইন্তেখাবের ঘরে রানির মতোই আছেন এ অভিনেত্রী। দিনার তাকে ভালোবাসার মায়াজালে জড়িয়ে রেখেছেন। ইমনের ঘরে জন্মানো বিজরীর কন্যাকেও নিজের সন্তানের মতো আপন করে নিয়েছেন দিনার।

শিমুল-নাদিয়া

একটা সময় দেশের বিজ্ঞাপনে পুরুষ মডেল তেমন ছিল না। সেসময় টিভিসিতে এই অভাবটা পূরণ করেছিলেন সুদর্শন ও দীর্ঘদেহী মনির খান শিমুল। একাধিক বিজ্ঞাপনে নিজের প্রতিভার জানান দিয়ে তারকা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। অন্যদিকে অভিনেত্রী নাদিয়া আহমেদও বিজ্ঞাপন ও নাটকের মাধ্যমে পরিচিতি পেয়েছিলেন। শোবিজের এই জনপ্রিয় মানুষ দুজন একে অন্যের মনে দোলা দেন ২০০৩ সালে। পরে পাঁচ বছর প্রেম করে তারা গাঁটছড়া বাঁধেন ২০০৮ সালে। এই বিয়েতে তাদের অনুরাগী থেকে সহকর্মী সবাই বেশ সন্তুষ্ট ছিল। কিন্তু পাঁচ বছরের বেশি স্থায়ী হয়নি তাদের এই খুশি। কেননা পাঁচ বসন্ত পেরুতেই গোপনে শিমুলের সঙ্গে দম্পত্য জীবনের ইতি টানেন নাদিয়া। এক বছর গোপন রাখার পর প্রকাশ্যে আসে খবরটি। সেসময় বিচ্ছেদের খবর নিশ্চিত করলেও কারণ জানানো থেকে বিরত ছিলেন দুজনে। ফলে সন্দেহ উঁকি দিয়েছিল তাদের বিচ্ছেদ নিয়ে।

অনেকেই ভেবেছিলেন নিশ্চয়ই এ তারকাদ্বয়ের সংসারে তৃতীয় ব্যক্তির আগমন ঘটেছে। সেকারণেই দুজনের পথ দুদিকে বেঁকে গেছে। পরে জানা যায়, বিষয়টি সেরকম না। দাম্পত্য জীবনে মিলের চেয়ে অমিলই বেশি ছিল শিমুল-নাদিয়ার। এ কারণেই বনিবনা হচ্ছিল না। ফলস্বরূপ বিচ্ছেদের আগেও একাধিকবার শিমুলের ঘর ছেড়েছিলেন নাদিয়া। কিন্তু ভালোবাসার টান তখনও ফিকে হয়নি। তাই শিমুলকে ছেড়ে দূরে থাকা সম্ভব হয়নি তার। আসতে হয়েছিল ফিরে। কিন্তু টানাপোড়েনের মাত্রা একসময় এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে আর শিমুলের ঘরে ফেরেননি নাদিয়া। বরং মাথাব্যথা দূর করতে মাথাই কেটে ফেলেন তিনি।

তবে নাদিয়ার এই চলে যাওয়া মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছিল শিমুলকে। নাদিয়ার প্রতি তার ভালোবাসা যে কতটা গভীর ছিল বিচ্ছেদের আগে ও পরের মন্তব্যেই বোঝা যায়। সংসারজীবনে তাদের দূরত্বের কথাটা যখন এক কান দুই কান করে চাউর হচ্ছিল শিমুল তখন বলেছিলেন, ‘আমার স্ত্রীর সাথে যেকোনো ধরনের সমস্যা নিশ্চয়ই আমি অন্য কারও সাথে শেয়ার করব না। তবে সবার উদ্দেশ্যে আমি বলে রাখছি, নাদিয়া যদি আমাকে ছেড়েও যায় আমি তার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করব। আর আমাদের বিচ্ছেদ হলেও দ্বিতীয়বার আমি নাদিয়াকেই বিয়ে করব।’

কিন্তু সে সুযোগ শিমুলের আর হয়নি। বিচ্ছেদের পরপরই নাদিয়া অভিনেতা নাঈমের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। প্রেমের এক বছরের মাথায় বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তারা। এ খবর শুনে শিমুল তখন বলেছিলেন, আমাদের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়, আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম সংসার টিকিয়ে রাখার। কিন্তু নাদিয়া শেষ পর্যন্ত আমার সাথে থাকেনি। এ সময় নাদিয়া ও নাঈমের প্রতি শুভ কামনা জানিয়েছিলেন তিনি এভাবে, ‘নাদিয়া অনেক ভালো একটা মেয়ে। আমি এখনও তাকে অনেক ভালোবাসি। নাদিয়ার বিরুদ্ধে আমার কোনও ধরনের অভিযোগ নেই। তার জন্য আমার শুভ কামনা থাকবে।’

শোনা যায়, নাঈমের সংসারে সুখে আছেন নাদিয়া। এ প্রসঙ্গে নাদিয়া বলেন, ‘বিয়ের পর নাঈম এবং আমি আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। তবে দুজন দুজনকে সময় খুব কম দিতে পারছি। বিয়ের পর থেকে প্রায় প্রতিদিন আমরা দুজন শুটিং করছি। ব্যস্ততার মধ্যেই কাটছে দিন। আর এই ব্যস্ততা এত বেশি থাকে, মাঝে মাঝে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে আমরা বিয়ে করেছি।’

আর ওদিকে শিমুল? তিনি ব্যস্ত আছেন ব্যবসা আর অভিনয় নিয়ে। কিন্তু তিনি আর ঘরমুখো হননি। আজও একা আছেন। হয়তো এখনও নাদিয়ার অপেক্ষায় আছেন তিনি। তবে একাকী জীবনযাপনের কারণে বারবার সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় তাকে। হরহামেশা প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়, বিয়ে করছেন কবে? স্বভাবসুলভ ভাবেই শিমুল এসব প্রশ্নের উত্তর দেন। কখনও হেঁয়ালি করে উড়িয়ে দেন। আবার কখনও এড়িয়ে যান। কিন্তু জীবনকে কি এড়িয়ে যেতে পারেন শিমুল? হয়তো বা না। হয়তো দিনশেষে নাদিয়াকেই লালন করেন হৃদয়ে। কিংবা ফের যদি বিরহ আসে নেমে, তার চেয়ে একা থাকাটাই শ্রেয় মনে করেন।

অপরাজিতা জামান

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: দাম্পত্য

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

2 × three =