শুভ জন্মদিন প্রসূন আজাদ

মৌ সন্ধ্যা

কোনো ভালো কাজের জন্য অন্তত কিছু মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকেন শিল্পী। অচেনা অনেক মানুষের ভালোবাসা মেলে কাজের প্রতিদান হিসেবে। এ-ও বা কম কী। জীবনের নানা চক্করে কত কিছুই তো নিয়মিত করা হয় না আমাদের, তাই বলে মনে দাগ কেটে যাওয়া কাজগুলো তো আর হারিয়ে যায় না। দীর্ঘ সময়ের মিডিয়া ক্যারিয়ারে এমন বেশকিছু উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন অভিনেত্রী প্রসূন আজাদ। এখনো চলছে তার শিল্পচর্চা। কাজের জন্য তার কথা মনে রাখেন অনেকেই। ২৭ এপ্রিল এই অভিনেত্রীর জন্মদিন। এই সুন্দর দিনটিতে তার কথা স্মরণ করছে তিরিশ দিনের পারিবারিক কাগজ রঙবেরঙ। জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা তাকে।

ফুলপুরের মেয়েটি

গ্রামের নাম ফুলপুর। সম্ভবত অনেক ফুল ফোটে এই গাঁয়ে। প্রসূন আজাদের পুরা নাম আজরা আঞ্জুম প্রসূন। ১৯৯৪ সালের ২৭ জুলাই ময়মনসিংহের ফুলপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবার নাম আজাদ হোসেন ও মায়ের নাম শাহানা আজাদ। দুজনেই পেশায় পুলিশ কর্মকর্তা। প্রসূন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল থেকে এসএসসি সম্পন্ন করেন। এরপর ক্যামব্রিয়ান কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে বাণিজ্য বিভাগে পড়ছিলেন। পরে কলেজ পরিবর্তন করে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে চলে আসেন। এছাড়া ভারমিলিয়ন ইনস্টিটিউটে পড়েছেন প্রসূন।

অভিনয়জীবন

প্রসূন আজাদ ২০১২ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপার স্টারের প্রথম রানার আপ হয়ে শোবিজে নাম লেখান। ছোটবেলায় তিনি নতুন কুঁড়িতে অংশগ্রহণ করেছেন। সিনেমা ছাড়াও অনেক টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পূর্বে গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘অবগুণ্ঠন’ নাটকে রুবিনা চরিত্রে কাজ করার মাধ্যমে অভিনয় জগতে পা রাখেন। ২০১৮ সালে এই অভিনেত্রী গাঙচিল মিউজিকের ব্যানারে ‘জীবনের হিসেব’ শিরোনামে একটি সংগীত ভিডিওতে উপস্থিত হন। প্রসূন আজাদ অভিনীত আলোচিত নাটক হচ্ছে ‘শহরের নতুন বালিকা’, ‘একটি মৃত্যুর স্বপ্ন’, ‘পরাণ পাখি’, ‘সে হয়তো হিমাদ্রীর প্রেম’, ‘তকদীর’, ‘আশা নিরাশার ভেলা’, ‘টকেটিভ’ ইত্যাদি। চঞ্চল চৌধুরী, মোশারফ করিমদের মতো খ্যাতিমানদের সঙ্গে যেমন অভিনয় করেছেন তেমনি তরুণ প্রজন্মেও অনেকের সঙ্গেই অভিনয় করেছেন।

সহকারি পরিচালক

দর্শক প্রসূনকে ছোট পর্দার অভিনেত্রী হিসেবেই দেখেছেন বেশি। এদিকে পর্দার আড়ালেও বেশকিছু কাজের সঙ্গে ছিলেন এই অভিনেত্রী। অনেকের কাছেই এসব তথ্য অজানা। প্রসূন আজাদ বেশ কিছুদিন পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিমের সহকারি পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। মনপুরা চলচ্চিত্রে সহকারি পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। যেই সিনেমাটি এখনো আদর্শ সিনেমার উদাহরণ হিসেবে সামনে আসে বারবার। নিজেকে শুধু একজন অভিনেত্রী হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করতে চাননি, অভিনয়ের পাশাপাশি একজন ভালো নির্মাতা হওয়ার স্বপ্নও দেখেন তিনি। তাই সিনেমার সহকারি পরিচালক হিসেবে পথচলা শুরু করেছিলেন। নিজেও নির্মাণ করেছেন। ২০১৬ সালে ‘কুহেলিকা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পরিচালনায় নাম লেখান প্রসূন আজাদ। যদিও সিনেমাটির কাজ শেষ হয়নি এখনো। তবে সিনেমাটির কাজ শেষ করার স্বপ্ন এখনো দেখেন প্রসূন আজাদ।

সিনেমায় অভিনয়

২০১৪ সালে ‘সর্বনাশা ইয়াবা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রসূন চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেন। এরপর  ‘অচেনা হৃদয়’  ও ‘মৃত্যুপুরী’ সিনেমায় নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছেন। তার সবশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘পদ্মপুরাণ’। বর্তমানে মুক্তির অপেক্ষায় আছে প্রসূন আজাদ অভিনীত সিনেমা ‘মানুষের বাগান’। এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর পর্দায় ফিরতে যাচ্ছেন এই অভিনেত্রী। জানা যায়, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের ৪/৫টি গল্প নিয়ে চলচ্চিত্রটি তৈরি হয়েছে। সিনেমায় অভিনয় করেছেন মনোজ কুমার, অর্চিতা স্পর্শিয়াসহ বেশ কয়েকজন। এখানে প্রসূনের চরিত্রটি একজন ডিরেক্টরের।

ক্যারিয়ারে ঝড়

যে সময় প্রসূন আজাদের ক্যারিয়ার এগিয়ে যাচ্ছিল সে সময় এক ঝড় আসে। থেমে যায় চলার গতি। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আজাদের উপর এক বছরের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ডিরেক্টর গিল্ডস। মূলত ‘স্বপ্ন সত্যি হতে পারে’ নামের একটি নাটকের চিত্রধারণকে কেন্দ্র করে অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচীর সঙ্গে প্রসূনের বাক-বিতণ্ডা হয় এবং পরবর্তীতে এই অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার দাবি ওঠে। ফলে টিভি নাটক নির্মাতাদের তিনটি সংগঠন প্রসূনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর অনেক দিন অভিনয় থেকে দূরে থাকেন প্রসূন আজাদ। তারপর আবারও ফেরেন। এরপর কিছু কাজও করেছেন। সিনেমায় অভিনয় করেছেন।

সংসার জীবন

বর্তমানে পুরোদস্তুর সংসারি প্রসূন আজাদ। ২০২১ সালের ৩০ জুলাই প্রসূন আজাদ বিয়ে করেন। তার স্বামী দীর্ঘদিনের বন্ধু ফারহান গাফফার। পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে এই বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের বছর খানেক পরেই  পুত্র সন্তান জন্ম দিয়েছেন প্রসূন। মা হওয়ার বিষয়টি প্রসূন নিজেই জানান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেলের একটি ছবি দিয়ে চার লাইনের একটি কবিতা জুড়ে দিয়েছিলেন। যেখানে তিনি লেখেন, ‘জীবনের পথে পথে চলিতে, যত আশা গিয়েছিলো ফুরায়ে, গজমতি হার যেন ধূলিতে, ভিখারিনি পেলো আজ কুড়ায়ে…।’ স্বামী-সন্তান নিয়ে এখন সুখে আছেন প্রসূন। সন্তান বড় হচ্ছে ধীরে ধীরে। তাকে ঘিরে দারুণ সব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সময় পার করছেন তিনি।

এখনো স্বপ্ন দেখেন

মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। এখনো আগের মতই স্বপ্নবাজ এই অভিনেত্রী। পরিবারে নানা সৃজনশীল কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। মাটি নিয়ে কারুকাজ করেছেন। নিজের বিজনেস প্রতিষ্ঠানও খুলেছেন। একটি ফেসবুক পেইজ আছে তার প্রতিষ্ঠানের। ২০ মার্চ ২০২৪ এক ফেসবুক পোস্টে প্রসূন আজাদ লিখেছেন, ‘ছোট্ট একটা জীবন। মরে গেলেই শেষ। তাই আমাকে অনেক কিছু শিখতে হবে। ক্ষুধার্ত আত্মার সবচেয়ে কাছে হয়ত থাকেন আল্লাহ। মানুষ এসব আত্মাদের নাম দিয়েছে শিল্পী। কত বন্ধুদের দেখি কোনো এফোর্ট ছাড়াই কত সুন্দর শিল্পী। কিন্তু আমার বেশ কষ্ট করতে হয়। এই যেমন গৃহিনীর যত কাজ, মায়ের যত কাজ, স্ত্রীর যত কাজ সবশেষে নিজের পৃথিবীতে প্রবেশ করতেই হয়। কারণ আমার ইবাদত হাত মুখ ধুয়ে জায়নামাজে বসলেই হয় না, মন ভরে না। কান্না বাকি থেকে যায়, হাসি বাকি থেকে যায়। কিছু সৃষ্টিতে যে আনন্দ তা আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে না আসলে বুঝতাম না। সুফিদের সারাজীবন আমার পছন্দ। সেদিন একজন শুনে হাসছিল, তুমি এখনো স্ক্রিন টেস্ট দেও! উত্তরে বলেছিলাম, আমি মরার আগের দিনও স্ক্রিন টেস্ট দিবো। কিছু তোমরা স্ক্রিনে দেখো। আমি কত চরিত্রের কাছে যাই সব দেখো না। কেউ নায়িকা হয় শখে। আর কেউ কেউ অভিনয়টা ছাড়া, আর কিছুই পারে না। নিজেকে নিজেরই স্যালুট দেওয়া উচিত, হাততালি আর অ্যাওয়ার্ড তো বহু কষ্টের পর আসে। আমার ঘরে পুতুলগুলো নিয়ে আসব। ছেলে বড় হয়ে দেখবে, তার মা জীবনটা রিগ্রেট ছাড়া পার করেছে।’

শেষ কথা

বর্তমানে স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করছেন প্রসূন আজাদ। পুত্র সন্তানের সঙ্গে হেসে খেলেই জীবন কাটে তার। আর স্বপ্ন বোনা চলতেই থাকে আগামীর। সামনে মুক্তি পাবে নুরুল আলম আতিকের পরিচালনায় তার অভিনীত ‘মানুষের বাগান’ চলচ্চিত্রটি। আরও নতুন কাজে দেখা মিলুক প্রসূনের। নিজের স্বপ্নের সমান উচ্চতা হোক তার। আবারও রঙবেরঙয়ের পক্ষ থেকে রইলো জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: শুভেচ্ছা

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

fifteen − eleven =