চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে বিদায় করে দশ বছর পর ফাইনালে ভারত

অধিনায়ক রোহিত শর্মার ব্যাটিং এবং দুই স্পিনার অক্ষর প্যাটেল ও কুলদীপ যাদবের দুর্দান্ত বোলিং নৈপুন্যে দশ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারত। গতরাতে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ভারত ৬৮ রানে হারিয়েছে আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে। ২০২২  বিশ্বকাপ আসরে অ্যাডিলেডের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে ১০ উইকেটে হারের মধুর প্রতিশোধ নিলো ভারত। খবর গায়ানা, থেকে বাসস

২০১৪ সালের পর আবারও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলবে ভারত। আগামীকাল ব্রিজটাউনে বিশ্বকাপের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে ভারত। এবারের বিশ্বকাপে দুই অপরাজিত দল হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে নামবে এই দু’দল। ফলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মত কোন অপরাজিত দল শিরোপা জিতবে।

গায়ানার প্রোভিডেন্স স্টেডিয়ামে টস জিতে ভারতকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ইংল্যান্ড। পেসার রিচ টপলির করা তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা মারার এক বল পরই সাজঘরে ফিরেন ভারতের অফ-ফর্ম ওপেনার বিরাট কোহলি। ৯ বলে ৯ রান করেন তিনি। এবারের আসরে ৭ ইনিংসে মাত্র ৭৫ রান করেছেন এ তারকা ব্যাটার।

দলীয় ১৯ রানে কোহলি ফেরার পর উইকেটরক্ষক ঋসভ পান্থকে নিয়ে ১৬ বলে ২১ রান যোগ করেন আরেক ওপেনার রোহিত। মাত্র ৪ রান করে ইংল্যান্ড পেসার স্যাম কারানের শিকার হন পান্থ। ৪০ রানে ২ উইকেট হারানোর পর শক্তহাতে দলের হাল ধরেন রোহিত ও সূর্যকুমার যাদব। ১৩তম ওভারের তৃতীয় বলে ছক্কা মেরে দলের রান ১শ ও টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৩২তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রোহিত।

৩৬ বলে অর্ধশতকের পর ইনিংস বড় করতে পারেননি রোহতি। টি-টোয়েন্টির এক নম্বর স্পিনার আদিল রশিদের বলে বোল্ড হন রোহিত। ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৯ বলে ৫৭ রান করেন তিনি। এই ইনিংস খেলার পথে ভারতের চতুর্থ অধিনায়ক হিসেবে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৫ হাজার রান করেছেন রোহিত।

তৃতীয় উইকেটে ৫০ বলে ৭৩ রান যোগ করেন রোহিত-সূর্যকুমার। অধিনায়ক ফেরার পর বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকেননি সূর্যকুমারও। হাফ-সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও ৩৬ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৭ রানে আউট হন তিনি।

১৬তম ওভারে দলীয় ১২৪ রানে সূর্যকুমার ফেরার পর ডেথ ওভারে ইংল্যান্ডের বোলারদের উপর চড়াও হন হার্ডিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা ও প্যাটেল। শেষ ৪ ওভারে ৪৫ রান তুলে ভারতকে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭১ রানের লড়াকু পুঁজি এনে দেন তারা। ১টি চার ও ২টি ছক্কায় পান্ডিয়া ১৩ বলে ২৩, জাদেজা ২টি চারে ৯ বলে ১৭ এবং প্যাটেল ৬ বলে ১০ রান তুলেন। ইংল্যান্ডের ক্রিস জর্ডান ৩ উইকেট নেন।

টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে উঠতে ১৭২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক,ওপেনার জশ বাটলার। তার ১৪ বলে ২৩ রানের সুবাদে ৩ ওভারে ২৬ রান পায় ইংল্যান্ড।

চতুর্থ ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম ডেলিভারিতেই উইকেট তুলে নেন প্যাটেল। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে পান্থকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ৪টি চারে ১৫ বলে ২৩ রান করা বাটলার।

পরের ওভারে ইংল্যান্ডের শিবিরে দ্বিতীয় আঘাত হানেন পেসার জসপ্রিত বুমরাহ। ৮ বলে ৫ রান করা ওপেনার ফিল সল্টকে বোল্ড করেন বুমরাহ।

৩৪ রানে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর ইংল্যান্ডের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেন প্যাটেল ও কুলদীপ। দু’জনে মিলে ৫ উইকেট শিকার করলে, ৭২ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে ইংল্যান্ড। এসময় জনি বেয়ারস্টোকে শূণ্যতে এবং মঈন আলিকে ৮ রানে শিকার করেন প্যাটেল। অন্যপ্রান্তে হ্যারি ব্রুককে ২৫, স্যাম কারানকে ২ ও জর্ডানকে ১ রানে বিদায় দেন কুলদীপ।

লড়াই থেকে ছিটকে যাবার পর শেষ পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৪ ওভারে ১০৩ রানে অলআউট হয়ে সেমিফাইনাল থেকেই বিশ্বকাপ মিশন শেষ করে ইংল্যান্ড।

বল হাতে ভারতের প্যাটেল ২৩ রানে ও কুলদীপ ১৯ রানে ৩টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন প্যাটেল। নিজেদের বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ ৭ জয়ের রেকর্ড এবারই গড়লো ভারত। ৮ জয় নিয়ে সবার উপরে দক্ষিণ আফ্রিকা। যা চলতি আসরে করেছে প্রোটিয়ারা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

ভারত : ১৭১/৭, ২০ ওভার (রোহিত ৫৭, সূর্যকুমার ৪৭, জর্ডান ৩/৩৭)।

ইংল্যান্ড : ১০৩/১০, ১৬.৪ ওভার (ব্রুক ২৫, বাটলার ২৩, কুলদীপ ৩/১৯)।

ফল : ভারত ৬৮ রানে জয়ী।

ম্যাচ সেরা : অক্ষর প্যাটেল (ভারত)।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

twenty − 6 =