হাজারো কণ্ঠে গাওয়া হবে জাতীয় সংগীত। মহান বিজয় দিবস উদযাপনের ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ২০১৫ সাল থেকে ‘হাজারো কণ্ঠে দেশগান’ নামে এই আয়োজন করে দেশের শীর্ষ সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছায়ানট। বিজয় দিবসের দিন বিকেল পৌনে চারটায় জাতীয় সংগীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই নৃত্যগীতানুষ্ঠান।
১৯৭১ সালে যে সময় ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল, ঠিক সেই বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে আবারও গাওয়া হয় হাজারো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত। এই পুরো আয়োজনে অংশ নেয় ছায়ানটের সব শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এমনকি সেখানে আসা সাধারণ মানুষজনও। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে গেল দুই বছর বাধা পড়েছিল সে আয়োজনে। তবে এবছর উন্মুক্ত প্রান্তরেই হতে যাচ্ছে এই আয়োজন – সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এমনটাই জানিয়েছে ছায়ানট।
ছায়ানট-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, “মহান বিজয় দিবসে হাজারো কণ্ঠে দেশগান গাইবার, সগর্বে দেশকথা বলবার আয়োজনের সূচনা ২০১৫ সালে। তবে করোনা অতিমারীর আগ্রাসনে গৃহবন্দি ছিলাম আমরা, উন্মুক্ত প্রান্তরে দুবছর সকলকে একত্র করতে পারেনি ছায়ানট; ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ১৬ই ডিসেম্বরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ ও বাঙালির পূর্ণাঙ্গ বিজয়ের ক্ষণকে গর্ব ভরে স্মরণ করে আপামর বাঙালির সঙ্গে আমরা গেয়ে উঠতে পারিনি অন্তরের শপথ, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় এবার আমরা আবারো ফিরছি সমস্বরে দৃপ্তকণ্ঠে গাইবার-বলবার ব্যতিক্রমী সমাবেশে।”
১৬ ডিসেম্বর (শুক্রবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রের মাঠে বেলা পোনে চারটায় আয়োজনের সূচনা করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান, দীপ্ত টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল হাসান এবং ছায়ানটের সহ-সভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল।
অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে দীপ্ত টেলিভিশন। এবারের অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে নৃত্যসহ ৯টি সম্মেলক গান, দুটি একক গান (‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’) এবং দুটি পাঠ নিয়ে। শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ এবং আবু হেনা মোস্তফা কামালের ‘ছবি’ কবিতা আবৃত্তি করবেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, একক গান পরিবাশনায় নাসিমা শাহিন ফ্যান্সি ও সুমন মজুমদার। দেশগানগুলো বেছে নেওয়া হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাস, গোবিন্দ হালদার, আবদুল লতিফ, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, মোহাম্মদ মোশাদ আলী, মীরা দেববর্মণ এবং শাহ আবদুল করিমের রচনা থেকে। নৃত্য পরিবেশিত হবে– ‘আজ বাংলাদেশের হৃদয় হতে’, ‘এখন আর দেরি নয়’, ‘চল্ চল্ চল্’, ‘সঙ্ঘ শরণ তীর্থযাত্রা’, ‘বাংলার হিন্দু বাংলার বৌদ্ধ বাংলার খ্রিষ্টান বাংলার মুসলমান’, ‘সামাল সামাল সামাল ওরে সামলে তরী বাইয়ো’, ‘বলো বলো রে বলো সবে বলো রে বাঙ্গালির জয়’, ‘আমি টাকডুম টাকডুম বাজাই’ এবং ‘লাখো লাখো শহীদের রক্তমাখা’ সম্মেলক গানের সঙ্গে।
ছায়ানটের শিল্পী-শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে এবারের আয়োজনে যুক্ত আছে–থার্টিন হুসার্স ওপেন স্কাউট গ্রুপ, অরণী বিদ্যালয়, আজিমপুর গার্লস হাইস্কুল, আটি ভাওয়াল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ, একাডেমিয়া, ঢাকা ইমপিরিয়াল কলেজ, নালন্দা বিদ্যালয়, সাউথ ব্রীজ স্কুল, সানবীমস, সানিডেল এবং ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
মিলিত কণ্ঠে দেশের গান গাইতে আগত সর্বসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মাঠের দোয়েল চত্বর সংলগ্ন সুইমিং পুল গেট। আপামর সবাইকে এই আয়োজনের অংশীদার হতে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে ছায়ানটের পক্ষ থেকে বলা হয়- ‘স্বাধীনতা অর্জনের অর্ধ শতাব্দী পেরিয়ে আজও বাঙালির পূর্ণাঙ্গ স্বপ্নের মানবিক, প্রীতিময় ও যথার্থ মূল্যবোধের বাসভূমির প্রতীক্ষায় আছি আমরা। তাই বাঙালির বিজয়ের বার্ষিকে সাংস্কৃতিক জাগরণের সঙ্গে মানবিক ও সম্প্রীতির বোধ সঞ্চারের লক্ষ্যে সকলকে নিয়ে গাইবার, বলবার এই মিলনানুষ্ঠান। ভেদাভেদ দূরে ঠেলে, জাতীয় পতাকার লাল-সবুজে দেহ ও মন রাঙিয়ে, সর্বান্তকরণে সকলকে ষোল আনা বাঙালি হয়ে উঠবার ব্রত গ্রহণের উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে ছায়ানট।’