তামিমের সিদ্বান্ত সঠিক (?) দেরি হয়ে গেলো

সালেক সুফী

সব ফরম্যাটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বাধিক রান করা ব্যাটসম্যান, বাংলাদেশের ওডিআই অধিনায়ক তামিম ইকবাল বর্তমানে ম্যাচ ফিট নয়। ইংল্যান্ড থেকে কোমরের ব্যাথা নাশক ইনজেকশন নিয়ে সবে দেশে ফিরেছে। গতকাল বিসিবি সভাপতি এবং পরিচালক ক্রিকেট (অপারেশনস ) দুইজনের সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংবাদিকের জানিয়েছেন বর্তমান অবস্থায় সে এশিয়া কাপ খেলার জন্য প্রস্তুত নয়। রিহাব প্রক্রিয়া শেষে সুস্থ হলে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে ওডিআই সিরিজ এবং বিশ্বকাপে খেলার জন্য তার আগ্রহের কথা ব্যাক্ত করেছেন। একই সঙ্গে তামিম ওডিআই দলনায়কের পদ থেকে পদত্যাগ করে নতুন অধিনায়কের অধীনে খেলার অঙ্গীকার ব্যাক্ত করেছেন। তামিমের এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে আপাতত দলকে ঘিরে সৃষ্টি হওয়া কিছু গুমোট অবস্থা দূর হলেও দলকে কিছুটা সংকটে ফেলেছে। তামিমের অবর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসাবে লিটন দাসকে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হলেও বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে লিটনকে নিয়ে ঝুঁকি নেয়া ঠিক হবে না। সেরা বিকল্প হতে পারে টেস্ট এবং টি ২০ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। কিন্তু সাকিবকে ওর নিজস্ব টার্মে দায়িত্ব দেয়া না হলে রাজি হবে বলে মনে হয় না। মুশফিক হয়তো আর কখনো বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব করতে রাজি হবে না। বাংলাদেশ ভুল কৌশল নিয়ে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দলে অবস্থান অনিশ্চিত করে একটা বিকল্প হারিয়েছে। এশিয়া কাপ, বিশ্ব কাপ বাংলাদেশের চেনা পরিবেশে নিজেদের প্রথম পছন্দের ওডিআই ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হবে। দুটি ফরম্যাটে সেরা ফেভারিট না হলেও নিঃসন্দেহে পুরোপুরি প্রস্তুত বাংলাদেশ দল ডার্ক হর্স হিসাবে বিবেচিত হত।  এখন দেখতে হবে তামিম নাটকের বর্তমান পর্বের অবসানে বাংলাদেশ দলের স্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়?

আমরা জানি দলে বিদ্যমান নানা টান পড়নের কারণেই মাশরাফি ক্রিকেটে থেকেও নেই। তামিম এবং মুশফিক টি ২০ ফরমেট থেকে ঘোষণা দিয়ে অবসর নিয়েছে। মাহমুদুল্লাহ জিম্বাবুয়ে সফরে টেস্ট সেঞ্চুরি করার পর অবসর নিয়েছে। মাহমুদুল্লাহকে টি ২০ দল থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। ওডিআই দল থেকে বিশ্রামের নাম দিয়ে দূরে রাখা হয়েছে। তামিমের নাটকীয় এবং আবেগময় অবসর ঘোষণার পেছনের কারণগুলো এবারের ঘোষণার পর ধামা চাপা পড়ে গেলেও ধূমায়িত অসন্তোষ দলকে ভোগাবে কিনা কে জানে? সাকিবকে অধিনায়ক করা হলেও দল পরিচালনায় স্বাধীনতা চাইবে। জানিনা সে ক্ষেত্রে হেড কোচ হাতুরাসিংহের সঙ্গে রসায়ন কি হবে?

তামিমের অবর্তমানে শুধু নতুন অধিনায়ক নয় নতুন ওপেনিং যুগল সহ অন্তত তিন জন মানসম্পন্ন ব্যাটসম্যান বেঁচে নিতে হবে। এমনিতেই লিটন ধারাবাহিক ভাবে ভালো খেলে নিজের অবস্থান পাকা করেছেন বলা যাবে না। সঙ্গী হিসাবে মোহাম্মদ নাঈম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেকে মেলে ধরতে পারছে না। অভিজ্ঞ আনামুল হক বিজয়কে বিসিবি ব্যাবস্থাপনা বিবেচনার বাইরে রেখেছে। তরুণ তানজিদ হাসান তামিম বিবেচিত হবার যোগ্যতা রাখে।  জানি সৌম্য সরকারকে বহুবিধ ব্যবহারের জন্য হাতুরাসিংহের পরিকল্পনা রয়েছে।

সবাই জানে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থানের জন্য মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, তামিম, রিয়াদের বিশাল ব্যাক্তিগত এবং সমিষ্টিগত অবদান রয়েছে। সবার আশা ছিল স্বর্ণযুগের প্রজন্ম সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লা শেষবারের মতো একসাথে জ্বলে উঠে এশিয়া কাপ বা বিশ্বকাপ থেকে শিরোপা অর্জন করবে। বিদ্যমান অবস্থায় সেই স্বভাবনা অনেকটাই ফিকে হয়ে আসছে। তামিমের অবর্তমানে মাহমুদুল্লার দলে ফেরা এখন আরো অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এমনিতেই রুখতে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকার বিশ্বমানের বোলিংয়ের মোকাবিলায় সাকিব, মুশফিক ছাড়া অন্য কারো কনসিটেন্টলি ভালো করার অভিজ্ঞতা নেই. শান্ত, তাওহীদ হৃদয় সবে বিকশিত হচ্ছে। টপ অর্ডার ভেঙে পড়লে মিডল অর্ডার এবং লোয়ার মিডল অর্ডারে অবশ্যই মাহমুদুল্লাকে প্রয়োজন। জানি বিসিবি মাহমুদুল্লার দলে ফিরে আসা নিয়ে দ্বিধা বিভক্ত। ইতিহাস বিবেচনায় রাখলে মাহমুদুল্লাহ এমনকি ৪-৫ নাম্বার পসিশনে টপ অর্ডারেও বিবেচনা যোগ্য।

এখনো সময় আছে, দেশের স্বার্থে, দলের স্বার্থে বিসিবি স্কোয়াড নির্বাচনে , দলনায়ক নির্বাচনে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিবে বলে আশা রাখি। কিছু কিছু মিডিয়ার সবজান্তা বিশ্লেষণ উপেক্ষা করে নির্বাচকরা সেরা দলটি বেঁচে নিক সেই প্রত্যাশা করছি। মনে রাখতে হবে দুটি টুর্নামেন্টেই বাংলাদেশকে সেরাদের সেরা  খেলোয়াড়দের মুখোমুখি লড়াই করতে হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

20 + 17 =