মডেল নোবেলের জন্মদিন আজ

তিনি ব্যক্তিত্বে অনন্য। সৌন্দর্য ও ভুবন ভুলানো হাসিতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম মুগ্ধ। মডেলিংয়ের জগতে তিনি কিংবদন্তি। তিনি আদিল হোসেন নোবেল। নোবেল নামেই তিনি বেশ পরিচিত। দেশের এই সুপারস্টার, পর্দার রাজপুত্রের জন্মদিন আজ।

জীবনে চলার পথে অক্লান্ত এ অভিনেতার ৫২ টি বছর পূর্ণ হয়েছে।  ১৯৬৮ সালের ২০ ডিসেম্বরে চট্টগ্রামে তার জন্ম। চট্টগ্রামেই পড়াশোনার পাঠ চুকিয়েছেন। তিনি ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন। এছাড়া সিঙ্গাপুর ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট এবং জেভিয়ার লেবার রিলেশনস ইনস্টিটিউট থেকে ‘কি অ্যাকাউন্টস ম্যানেজমেন্ট’-এর ওপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন নোবেল।

শুধুমাত্র মডেলিংয়ের মাধ্যমে কিভাবে অসামান্য ব্যক্তিত্বের হয়ে ওঠা যায় তার সৃষ্টি করেছেন এই নোবেল। তিনিই মডেলিংকে নিয়ে গেছেন উচ্চতার শিখরে। জীবনে এত দীর্ঘ পথ পারি দিয়েও এখন তরুণ নোবেল।

মডেলিংয়ে আসেন লেখাপড়া শেষ করেই। এমবিএ শেষ করে ঢাকায় এসে এক বড় বোনের পরামর্শে ফ্যাশন জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন নোবেল। ১৯৯১ সালে বরেণ্য নির্মাতা ও অভিনেতা আফজাল হোসেনের নির্দেশনায় কোমল পানীয় স্প্রাইটের বিজ্ঞাপনের জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। কিন্তু সেটি প্রচার হয়নি। এ নিয়ে খুব মন খারাপ হয়েছিল। স্বপ্নভঙ্গ বলে কথা। তবে আফজাল হোসেন তাকে সাহস দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘সুযোগ আবার আসবে’। পরে আফজাল হোসেনের নির্দেশনাতেই আজাদ বলপেনের বিজ্ঞাপনে মডেল হন তিনি। সেই বিজ্ঞাপন দিয়েই তারকা বনে গেলেন সুদর্শন নোবেল। এরপর আর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দিনে দিনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন দেশের মডেলিং জগতের একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে। নোবেল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন এককভাবে। জুটি বেঁধেও সফল হয়েছেন তিনি। মডেলিং জগতেও যে জুটি গড়া যায় এবং প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায় সেটাও তিনি দেখিয়েছেন। জুটি বেঁধে সফল হয়েছেন মডেলিং জগতের সম্রাজ্ঞী মৌ’র সঙ্গে। এছাড়া তানিয়া, সুইটি থেকে তিশারাও নোবেলের বিপরীতে আলো ছড়িয়েছেন।

নোবেলের গুণ, সবার সঙ্গেই দারুণ মানিয়ে যেতেন তিনি। মৌ-নোবেল জুটিকে দেশের মডেলিং জগতের সবচেয়ে সুপারহিট জুটি ভাবা হয়। কেয়ার নানা রকম পণ্যের বিজ্ঞাপনে তারা তুমুল দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন। এছাড়া ‘তোমার জন্য মরতে পারি, ও সুন্দরী’ কিংবা ‘নিশিথে কল কইরো আমার ফোনে’, অথবা ‘রুপসীর রেশমীর চুলে’র মতো জিঙ্গেলভিত্তিক বিজ্ঞাপনগুলো নোবেলকে দারুণ জনপ্রিয়তা দিয়েছে।

টেলিভিশন নাটকে অভিনয়ও করেছেন এ চিরতরুণ। ১৯৯৪ সালের ৮ ডিসেম্বর বিটিভিতে প্রচার হয় আতিকুল হক চৌধুরী পরিচালিত ‘প্রাচীর পেরিয়ে’ নামের নাটক। কাজী আনোয়ার হোসেনের গল্প অবলম্বনে নির্মিত এই নাটকটিই দেশের প্রথম প্যাকেজ নাটক। এখানে মাসুদ রানা চরিত্রে অভিনয় করেন নোবেল। আর নায়িকা সোহানা চরিত্রে দেখা যায় বিপাশা হায়াতকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- কুসুম কাঁটা, ছোট ছোট ঢেউ, তাহারা, প্রিমা তোমাকে, শেষের কবিতার পরের কবিতা, বৃষ্টি পরে, নিঃসঙ্গ রাধাচূড়া, তুমি আমাকে বলোনি, হাউজ হাজব্যান্ড, সবুজ আলপথে ইত্যাদি।

তবে তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েও তা গ্রহণ করেননি। ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। যে ছবি দিয়ে ইমন থেকে সালমান শাহ’র জন্ম সেই ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার জন্য প্রস্তাব পেয়েছিলেন নোবেল। তিনি সেটি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সিনেমায় অভিনয় করবেন না বলে। সত্যিই তিনি কখনোই সিনেমায় অভিনয় করেননি।

ক্রিকেটের প্রতি তার ভালোবাসা গভীর। অধ্যয়নকালে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলতেন। ভাবতেনও একটা সময় ক্রিকেটার হবেন কিন্তু আর হওয়া হয়ে ওঠেনি।  তিনি বেশ কয়েকটি গানও লিখেন। সুর করেছেন। শাকিলা জাফরের সঙ্গে টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানেও গান করেছেন তিনি। নব্বই দশক থেকেই একজন কর্পোরেট কর্মজীবী নোবেল। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বর্তমানে দেশের জনপ্রিয় টেলিকমিউনিকেশন প্রতিষ্ঠান রবিতে কর্মরত আছেন। ব্যক্তি জীবনে তার স্ত্রী শম্পা এবং এক মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে সংসার।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

15 + three =