কপ-২৮ রাষ্ট্রসমূহকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে আসার আহ্বান জানালেও সময়সীমা বেধে দিতে ব্যর্থ হয়েছে

CPRD’র নেতৃত্বাধীন ৩০টি নাগরিক সংগঠন এবং উন্নয়ন সহযোগী সংগঠনের জোট ‘ক্লাইমেট জাস্টিস এলাইয়েন্স’র পক্ষ থেকে “বৈশ্বিক জলবায়ু সমঝোতা সম্মেলন ২৮ (কপ২৮): প্রত্যাশা বনাম প্রাপ্তি” শীর্ষক একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় রাজধানী ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে। এলাইয়েন্স এর পক্ষ থেকে সমঝোতা সম্মেলনে প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে বৈশ্বিক জ্বালানি ব্যবস্থা জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রুপান্তরনে বাধ্যবাধকতা আরোপ এবং এই লক্ষ্যে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশসমূহে অনুদানভিত্তিক অর্থায়ন এবং বিনামূল্যে প্রযুক্তি হস্তান্তর ব্যাপক মাত্রায় বাড়ানো, গ্লোবাল স্টকটেক প্রণয়ন, কয়লাভিত্তিক নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ বন্ধ করা এবং ২০৪০ সালের মধ্যে সকল উন্নত রাষ্ট্রে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে সকল রাষ্ট্রে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ করা, কনভেনশনের CBDR-RC নীতির সাথে লস এন্ড ড্যামেজ তহবিলকে এলাইন করে এই ফান্ডকে রাষ্ট্রসমূহের ঐতিহাসিক দায়ের ভিত্তিতে বাধ্যতামূলক অবদান হিসেবে গঠন করা ও অর্থবরাদ্ধ বৃদ্ধি এবং জলবায়ু-ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির জন্য L&D তহবিলটি সহজিকরণ, সামষ্টিক অভিযোজন অর্থায়ন দ্বিগুণকরণ এবং বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরিকরণ এর মতন এজেন্ডাগুলো ছিলো এবারের সমঝোতা সম্মেলনের কাছে অন্যতম প্রত্যাশা। তবে এবারের সমঝোতা সম্মেলনটি বিশ্ব-সম্প্রদায়ের অধিকাংশ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি বলে নাগরিক সংগঠনের জোটটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনের প্রধান বক্তা জনাব মো. শামসুদ্দোহা বলেন, সমঝোতা সম্মেলন-২৮ (কপ২৮)-এ জলবায়ু অর্থায়নের জন্য নাগরিক সমাজের পক্ষ্য থেকে আমরা একটি সুস্পষ্ট সংজ্ঞার দাবি করেছিলাম, সে সাথে জলবায়ু অর্থায়নকে স্বীকৃত দিতে এবং প্রয়োজন-ভিত্তিক, জরুরি ও একটি বাধ্যতামূলক পরিপূরক হিসাবে প্রণয়নের দাবি জানিয়েছিলাম কিন্তু সম্মেলন থেকে কপ/সিএমপি-র অধীনে একটি নতুন তহবিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যা একটি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হবে যার প্রথম ৪ বছরের পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে বিশ্ব ব্যাংক; এই তহবিল থেকে অর্থায়নের কোন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়নি এবং এটি দেশসমূহের ঐচ্ছিক অবদান হিসেবে পূর্ণ হবে। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঐতিহাসিক দায় এবং সিবিডিআর-আরসি নীতি বিবেচিত হয়নি। এছাড়া অভিযোজন অর্থায়ন দ্বিগুণকরণ এবং ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জলবায়ু অর্থায়ন বাস্তবায়নের কোন রোডম্যাপ গৃহীত হয়নি এই সমঝোতা সম্মেলনে এবং জলবায়ু অর্থায়নের সংজ্ঞায়নের বিষয়ে কোন আলোচনা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, এবারের সম্মেলনে ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা তিনগুণ করার ব্যপারে রাষ্ট্রসমূহকে আহ্বান জানানো হয়েছে কিন্তু স্বল্পোন্ন এবং উন্নয়নশীল রাষ্ট্র সমূহের জন্য কোন অর্থায়নের কথা বলা হয়নি। অ-হ্রাসকৃত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্রমান্বয়ে হ্রাস করতে উদ্যোগ বাড়ানোর জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রসমূহকে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার আহ্বান জানানো হয়েছ; তবে কোন সময়সীমা নির্দেশ করা হয়নি। জীবাশ্ম জ্বালানিতে অকার্যকর ভর্তুকি বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে অবস্থান্তর-জ্বালানি যেমন- গ্যাসের ব্যবহার উৎসাহিত করা হয়েছে কিন্তু এটি বৈশ্বিক কার্বন নির্গমণ বৃদ্ধিকে প্রলম্ভিত করবে।

জনাবা জুলিয়েট কেয়া মালাকার বলেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তির পর থেকে গত ৮ বছর আমরা পার করে দিয়েছি কেবল বিভিন্ন সংজ্ঞা,জার্গন আর টার্মিনোলজি ঠিক করতে করতে, অথচ জলবায়ু বিপদাপন্ন মানুষের জীবন-জীবিকা বিপন্ন হচ্ছে। প্রতিবারের মতন এবারের সমঝোতা সম্মেলনও জলবায়ু বিপদাপন্ন মানুষের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু দিতে পারেনি।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জনাবা খোদেজা সুলতানা লোপা, কান্ট্রি ডিরেক্টর, ডিয়াকোনিয়া, জুলিয়েট কেয়া মালাকার, নির্বাহী পরিচালক সিসিডিবি, অধ্যাপক আহাম্মেদ কামরুজ্জমান মজুমদার, চেয়ারম্যান, পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, মোল্লাহ আমজাদ হোসেন, সম্পাদক, এনার্জি এন্ড পাওয়ার, সৈয়দ আমিনুল হক, পরিচালক কোস্ট ফাউন্ডেশন, নিখিল ভদ্র, সমন্বয়ক, সুন্দরবন ও উপকূল রক্ষা আন্দোলন, এছাড়া কর্মসূচিটিতে নাগরিক এবং উন্নয়ন সহযোগী সংগঠনের নীতিনির্ধারনী ব্যক্তিবর্গগণ উপস্থিত থেকে মতামত ব্যক্ত করেন। সিপিআরডি প্রধান নির্বাহী জনাব মো. শামসুদ্দোহা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সিপিআরডি গবেষণা কর্মকর্তা জনাব শেখ নূর আতায়ে রাব্বি এবং গবেষণা সহকারী ইলমী তাবাসসুম একটি প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

18 + 12 =