ইউনেস্কো পুরষ্কার নিয়ে ইউনূস সেন্টারের তথ্য বিভ্রান্তিকর: শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইউনেস্কো থেকে যে ‘ট্রি অব পিস’ পুরষ্কার পেয়েছেন বলে প্রচার করা হয়েছে তা প্রতারণামূলক এবং সর্বৈব মিথ্যাচার। এধরনের মিথ্যাচার দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করবে। খবর বাসস।

শিক্ষামন্ত্রী আজ বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত এক মন্ত্রিসভা কমিটির  সভা শেষে  সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ইউনেস্কোর সদর দফতরে যোগাযোগ করা হয়েছে। সেখান থেকে তারা আমাদের নিশ্চিত করেছেন ইউনেস্কো ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এ ধরনের কোন সম্মাননা প্রদান করেনি।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ড. ইউনূস আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে গজনভি ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ইসরায়েলের ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের তাঁকে ‘ট্রি অব পিস’ সম্মাননা স্মারক দিয়েছেন।

ভাস্কর হেদভা সেরও নিশ্চিত করেছেন যে, এটি ইউনেস্কোর সম্মাননা বা পুরষ্কার নয়। এটি গজনবী ফাউন্শেন কর্র্তৃক প্রদত্ত একটি পুরষ্কার।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইউনেস্কো সদর দফতরকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করবো। ড. ইউনূস ও ইউনেস্কোর নাম নিয়ে যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে সেটি অনৈতিক এবং অপরাধমূলক। সেটি আমাদের দেশের জন্য মানহানিকর-এ তথ্যও জানাবো।’

তিনি আরো বলেন, ‘ইজরায়েলী ভাস্কর্য শিল্পীর দেওয়া পুরষ্কারকে ড.ইউনূস ইউনেস্কোর পুরষ্কার হিসেবে প্রচার করেছে। এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও অপমানকর বটে।’

শিক্ষামন্ত্রী জানান, ‘ইউনূস সেন্টারের ওয়েবসাইটে এটি ইউনেস্কোর পুরষ্কার হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। ইউনূস সেন্টারকে অনুরোধ করবো যে, এভাবে এ ধরনের ভয়াবহ মিথ্যাচার প্রচারণা থেকে তারা যেন বিরত থাকে, তা না হলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো। ’

এদিকে, আজ ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ট্রি অফ পীস’ পুরস্কার প্রদানের সংবাদটি সঠিক নয় এবং ইউনুস সেন্টার কর্তৃক দাবিকৃত সম্মাননা ইউনেস্কোর কোন পুরস্কার বা সম্মাননাও নয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল জুবাইদা মান্নান ।

তার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই ধরনের সংবাদ প্রচারকে প্রতারণামূলক ও পরিকল্পিত মিথ্যাচার বলে আখ্যায়িত করে ভবিষ্যতে এ ধরনের সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে ইউনূস সেন্টারকে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি ঢাকার কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় এবং ইউনূস সেন্টারের অফিসিয়াল ওয়েব পেইজে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ট্রি অফ পীস’ পুরস্কার প্রদানের সংবাদটিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন (বিএনসিইউ) এর দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। ইউনূস সেন্টার কর্তৃক প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে পত্রিকায় যে সংবাদ ছাপা হয়েছে, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৬ মার্চ আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত ১১তম গ্লোবাল বাকু ফোরোমে ড. ইউনূসকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। কিন্তু ইউনেস্কো ঢাকা অফিস জানিয়েছে, প্যারিসস্থ ইউনেস্কো সদরদপ্তর এই বিষয়ে একেবারেই অবহিত নয়। ১১তম বাকু ফোরাম যেখানে এই সম্মাননা দেওয়ার সংবাদ প্রচার হয়েছে সেখানে ইউনেস্কোর কোন অফিসিয়াল প্রতিনিধিত্বই ছিল না। অধিকন্তু, ইউনূস সেন্টার কর্তৃক দাবিকৃত সম্মাননা ইউনেস্কোর কোন পুরস্কার বা সম্মাননাও নয়।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ড. ইউনুসকে ‘ট্রি অফ পিস’ নামক একটি ভাস্কর্য স্মারক/সম্মাননা প্রদান করেন ইজরাইলী ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের। মিজ হেদভা নিজে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যে, ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে ‘ট্রি অফ পিস’ প্রদানে ইউনেস্কোর কোন সম্পৃক্ততা ছিল না। নিজামী গনজবী ইন্টারন্যাশন্যাল সেন্টার এর আমন্ত্রণে ইজরাইলী ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের ড. ইউনুসকে এটি প্রদান করেন। মিস হেদভা সের ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক কূটনীতি বিষয়ক গুইউইল অ্যাম্বাসেডর, কিন্তু ইউনেস্কোর কোনও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিনিধি নন এবং ইউনেস্কোর কোন পুরষ্কার/ সম্মাননা দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন না।’

সুতরাং, উল্লিখিত বাস্তবতার নিরিখে, বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস পরিচালিত ইউনূস সেন্টার কর্তৃক প্রেরিত এবং প্রচারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতারণামূলক বলে মনে করে তার নিন্দা জানাচ্ছে। বাংলাদেশ ইউনেস্কোর অন্যতম সক্রিয় সদস্য রাষ্ট্র। ভবিষ্যতে ইউনেস্কোর মতো জাতিসংঘের এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ এবং সুখ্যাতিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নাম অপব্যবহার থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ইউনূস সেন্টারকে সতর্ক করা হলো।

এই বিষয়টি যেহেতু প্রতারণামূলক এবং পরিকল্পিত মিথ্যাচার সেহেতু তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না তার ব্যাখা চাওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১ জানুয়ারি বাংলাদেশের আদালত ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং গ্রামীণ টেলিকমের আরো তিনজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ছয় মাসের কারাদন্ড এবং প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার সহযোগীরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন, যেটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। এছাড়াও আয়কর আইন লঙ্ঘনের জন্য তার ব্যক্তিগত আয়কর দাবী আদালতে বিচারাধীন। সুতরাং, তিনি যতদিন আদালত কর্তৃক নির্দোষ প্রমাণিত নন, ততদিন তাকে কোন মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার কিংবা সম্মাননা প্রদান সমীচীন নয় বলেও উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশে ইউনেস্কোর সাথে কার্যক্রমের জন্য সরকারের ফোকাল পয়েন্ট হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন। কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে কেউ যাতে ইউনেস্কোর নামের অপব্যবহার কিংবা অপপ্রয়োগ না করতে পারে- সেটি নিশ্চিত করা। সে হিসেবে ইউনেস্কোর নাম অপব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের পক্ষ থেকে ইউনেস্কো ঢাকা অফিস এবং ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির সাথে পরামর্শ করে ইউনেস্কো সদর দপ্তরকে অবহিত করা হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

1 × 3 =