বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তিনজনকে এক মাসের জন্য বহিষ্কার করেছে সমিতি। এদিকে সিনে সাংবাদিকরা সমিতির আরেক নেতা জয় চৌধুরীকে আজীবনের জন্য বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি ও বিনোদন সাংবাদিকদের নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির বৈঠক থেকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। ওই বৈঠকের পরপরই সমিতি তিনজনকে এক মাসের জন্য সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে রাতে সাংবাদিক লিমন আহমেদ এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে ব্রিফ করেন।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি যে তিনজনকে এক মাসের জন্য বহিষ্কার করেছে তারা হলেন— শিবা শানু ও সুশান্ত এবং শিল্পী সমিতির স্টাফ জামান। সমিতি জানিয়েছে, এ ঘটনায় তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হবে। সে নোটিশের জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে সিনে সাংবাদিকরা জয় চৌধুরীকে আজীবনের জন্য বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ছাড়া হামলার ঘটনার স্মরণে ২৩ এপ্রিল দিনটিকে কালো দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিনোদন সাংবাদিকরা।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) এফডিসিতে শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির শপথ অনুষ্ঠান শেষে বিনোদন সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার রাতেই শিল্পী সমিতি ও সাংবাদিকদের বৈঠক থেকে ঘটনা তদন্তে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। প্রযোজন আরশাদ আদনানকে উপদেষ্টা হিসেবে রেখে কমিটিতে শিল্পী সমিতির পাঁচজন ও বিনোদন সাংবাদিকদের মধ্য থেকে পাঁচজনকে রাখা হয়।
বুধবার সন্ধ্যায় ১১ সদস্যের ওই কমিটি বৈঠকে বসে। বৈঠক শেষে সাংবাদিক লিমন আহমেদ বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো জানান। তিনি বলেন, শিল্পী সমিতি হামলায় জড়িত হিসেবে তিনজনকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। তারা একমাসের জন্য বহিষ্কৃত থাকবেন। এ ছাড়া আহত সাংবাদিকদের চিকিৎসার খরচ ও তাদের ক্ষতিগ্রস্ত যন্ত্রপাতির জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানিয়েছে শিল্পী সমিতি।
জয় চৌধুরীকে নিয়ে সিনে সাংবাদিকদের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে লিমন বলেন, আলোচনা শুরু পরও জয় চৌধুরী ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ অব্যাহত রাখেন। তিনি কারও কথাই শুনতে রাজি নন। তাই সিনে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে তাকে আজীবনের জন্য বয়কটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
লিমন আরও বলেন, জয় চৌধুরীকে নিয়ে শিল্পী সমিতিও যদি কোনো কার্যক্রমে অংশ নেয়, তাহলে সমিতিকেও বয়কট করা হবে। কোনো প্রযোজক বা পরিচালক তাকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করলে তাদের সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থাকা হবে।
১০ জনের তদন্ত কমিটিতে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ছিলেন— লিমন আহমেদ, রাহাত সাইফুল, আহমেদ তৌকীর, বুলবুল আহমেদ জয় ও আবুল কালাম। শিল্পী সমিতির পক্ষে ছিলেন— মিশা সওদাগর, ডি এ তায়েব, নানা-শাহ, রুবেল ও রত্না। এ ছাড়া বুধবারের বৈঠকে সাংবাদিক রিমন মাহফুজ ও কামরুজ্জামান বাবুসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে মঙ্গলবারের ওই হামলার ঘটনায় অন্তত ২০ জন সাংবাদিক আহত হন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। শিবা শানু, জয় চৌধুরী ও আলেকজান্ডার বো’র নেতৃত্বে এই হামলা হয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ফাইটাররাও হামলা ও সাংবাদিকদের মারধরে জড়িত ছিলেন বলে তথ্য মিলেছে।
এক বিনোদন সাংবাদিকের চিত্রনায়িকা ময়ূরীর মেয়ের সাক্ষাৎকার নেওয়ার চেষ্টা থেকে ঘটনার সূত্রপাত। প্রত্যক্ষদর্শী ও ঘটনায় যুক্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মায়ের অভিনীত সিনেমাগুলো দেখেছেন কি না— এ বিষয়ে ময়ূরীর মেয়েকে প্রশ্ন করেন ওই সাংবাদিক। এ সময় শিবা শানু ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালে ওই সাংবাদিকের সঙ্গে তার বাগ-বিতণ্ডা শুরু হয়। শিবা শানু ওই সাংবাদিককে বেরিয়ে যতে বলেন। একপর্যায়ে ধাক্কা দিয়ে অফিস থেকে বের করে নিয়ে যান। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে জয় চৌধুরী ও আলেকজান্ডার বো উপস্থিত হয়ে ফাইটারদের দিয়ে হামলা করান সাংবাদিকদের ওপর।