স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে জ্বলে উঠতে চায় ইংল্যান্ড

ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের নক আউট পর্বে অনেকটাই সহজ ড্রয়ে কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও ইংল্যান্ডের ম্যানেজার গ্যারেথ সাউথগেট এটাকেই হুমকি হিসেবে দেখছেন। বিশেষ করে দলের এ পর্যন্ত পারফরমেন্সে সমর্থকদের মধ্যে যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে সেটা কাটানোই এখন সাউথগেটের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ।

আগামীকাল রোববার জেলসেনকার্চেনে স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে নক আউট পর্ব শুরু করার সময় সাউথগেটের দলের লক্ষ্য থাকবে ১৪ জুলাই বার্লিনের ফাইনাল। এই ম্যাচে জিততে পারলে কোয়ার্টার ফাইনালে সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হতে পারে ২০২০ ফাইনালের প্রতিপক্ষ ইতালি অথবা সুইজারল্যান্ড। অন্যদিকে সেমিফাইনালে সম্ভাবনা রয়েছে অস্ট্রিয়া, তুরষ্ক, নেদারল্যান্ডস কিংবা রোমানিয়ার মুখোমুখি  হবার।

প্রাক-টুর্নামেন্টের ফেবারিটের তকমা এখনো পর্যন্ত ইউরোতে যথার্থ প্রমান করতে পারেনি ইংল্যান্ড। যে কারনে ড্রয়ের অন্য দিকে যেখানে জার্মানী, ফ্রান্স, স্পেন ও পর্তুগালের মত দলগুলো রয়েছে সেখানে ইংল্যান্ডের সামনে সুযোগ রয়েছে অপেক্ষাকৃত সহজ ড্রয়ে শেষ পর্যন্ত নিজেদের যোগ্যতার প্রমান দেবার। একটি দল হিসেবে এখনো জ্বলে উঠতে পারেনি হ্যারি কেন, ফিল ফোডেন, জুড বেলিংহামরা।

নিউক্যাসল উইঙ্গার এন্থনি গর্ডন বলেছেন, ‘অনেকেই আমাদের সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করছে। কারন তারা আমাদের কাছ থেকে অনেক কিছু প্রত্যাশা করে। যা সত্যিই ইতিবাচক। তাদেরকে থামাতে হলে পারফরফমেন্সের বিকল্প নেই। ইংল্যান্ডের কাছে তারা যেটা দেখতে চায় তা এখনো আমরা মাঠের পারফরমেন্সে প্রমান করতে পারিনি।’

গ্রুপ-সি’র শীর্ষ দল হলেও ইংল্যান্ড প্রথম তিন ম্যাচে মাত্র দুই গোল দিয়েছে। ২০২৩/২৪ মৌসুমে ক্লাব ফুটবলে যেখানে ফোডেন, বেলিংহাম, বুকায়ো সাকা ও কেন মিলে ১১৪ গোল দিয়েছে সেখানে জাতীয় দলে স্ট্রাইকারদের এই ফর্মহীনতা সত্যিই হতাশার। একসাথে ইংল্যান্ডের আক্রমনভাগকে এগিয়ে নিতে  না পারলে সাউথগেটের জন্য তা অনেক বেশী চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

তৃতীয় সন্তানের জন্মের কারনে দেশে ফিরে গিয়েছিলেন ফোডেন। ম্যাচের আগে আবারো দলে যোগ দিয়েছেন প্রিমিয়ার লিগের এবারের সেরা খেলোয়াড়। যদিও এ সপ্তাহে পর্যাপ্ত অনুশীলনের অভাব ফোডেনকে মাঠে ভোগাতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে।

এদিকে লুক শ’র ইনজুরির কারনে দলে একজন স্বীকৃত লেফট-ব্যাকের অভাব দারুনভাবে অনুভব করছেন সাউথগেট। বামদিক থেকে সে কারনেই আক্রমনটাও সেভাবে হচ্ছেনা যার প্রভাব পড়ছে ফোডেনের উপর।

এ পর্যন্ত গ্রুপ পর্বে খুব কমই খেলার সুযোগ পেলেও কালকের ম্যাচে মূল দলে ভাগ্য খুলে যেতে পারে গর্ডনের। প্রথমবারের মত ইংল্যান্ডের হয়ে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচে মূল একাদশে খেলার ইঙ্গিত পেয়ে গর্ডন বলেছেন, ‘আমার মূল শক্তি হচ্ছে আমি খুবই সরাসরি কাজ করতে পছন্দ করি। অবশ্যই আমার মধ্যে গতি রয়েছে। যে কারনে যেকোন প্রতিপক্ষের জন্যই আমি নি:সন্দেহে দু:স্বপ্ন হয়ে উঠতে পারি। আমি মোটেই নিরাপদ খেলোয়াড় নই। সবসময়ই প্রতিপক্ষকে বিপদে ফেলার সুযোগ খুঁজি। মানুষকে পিছু হটতে বাধ্য করি। আমার বিশ^াস দলে বাড়তি কিছু উপাদান আমি যোগ করতে পারবো।’

স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে গোলশুন্য ড্র হওয়া গ্রুপের শেষ ম্যাচটিতে দ্বিতীয়ার্ধে উজ্জীবিত পারফরমেন্স দেখানো ১৯ বছর বয়সি কোবি মেইনুকে মধ্যমাঠে মূল দলে নামানোর ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

এছাড়া কোল পালমারের ব্যপারেও সাউথগেট বাড়তি কিছু চিন্তা করছেন। গত মৌসুমে ক্লাবের হয়ে ২৬ গোল করা চেলসির এই প্লেমেকার আগের ম্যাচে ভালই নজড় কেড়েছেন। দ্বিতীয়ার্ধে ইংল্যান্ডের হয়ে টার্গেটে একমাত্র শটটি পালমারই করেছিলেন।

এখন পর্যন্ত দল নির্বাচনে সাউথগেট তার স্বভাবসুলভ জেদী ভাব ধরে রেখেছেন। তৃতীয় ম্যাচে মাত্র একটি পরিবর্তন করে টেন্ট্র আলেক্সান্দার-আর্নল্ডের স্থানে মূল দলে কনর গালাহারকে খেলিয়েছেন। এবারের আসরে তিন ম্যাচে সাউথগেট এই একটি পরিবর্তনই করেছেন। স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে জয়ী হতে না পারায় আগ্রাসী ইংলিশ সমর্থকরা দল নির্বাচনে বিরক্ত হয়ে সাউথগেটকে লক্ষ্য করে বিয়ার কাপ ছুঁড়ে মেরেছিল।

বড় টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ডের নানা চড়াই উতরাইয়ের দীর্ঘদিনের সাক্ষ্মী সাউথগেট নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে মাঝে মাঝে দল সম্পর্কে জেদী মনোভাব পোষন করেন। ৫৫ বছরের ইতিহাসে প্রথম কোন বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে গত ইউরোতে খেলেছে ইংল্যান্ড। তিন বছর আগের ঐ আসরেও গ্রুপ পর্বে মাত্র দুই গোল করেছিল ইংলিশরা। ২০১৬ ইউরোতেও ইংলিশ সমর্থকদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছিল পুরো দলকে। আট বছর আগে রয় হজসনের দলটি মাত্র পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ পর্ব পার করেছিল। পুঁচকে আইসল্যান্ডের সাথে গ্রুপ পর্বে ড্র করার পর সমর্থকরা কোনভাবেই এই ফলাফল মেনে নেয়নি।

এদিকে বেলজিয়ামকে ১-০ গোলে হারিয়ে আসর শুরু করা স্লোভাকিয়া সেরা তৃতীয় দল হিসেবে গ্রুপ-ই থেকে নক আউট পর্ব নিশ্চিত করেছে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে তারা রোমানিয়াকে রুখে দিয়েছিল। এসবই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের ৪৮তম স্থানে থাকা দলটিকে বাড়তি উন্মাদনা দিচ্ছে।

এর আগে ২০১৬ সালে প্রথমবারের মত নক আউট পর্বে খেলেছি স্লোভাকিয়া। শেষ ষোল থেকেই অবশ্য তাদের বিদায় নিতে হয়েছিল।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

14 + six =