২০২৫-২৬ অর্থবছরের অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ আজ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।  গত ২ জুন  এ বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। খবর বাসস।

আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। আগামী ১ জুলাই থেকে এ বাজেট কার্যকর হবে।

এটি ছিল দেশের ৫৪তম এবং অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম বাজেট। চূড়ান্ত অনুমোদনকালে সরকার বাজেটের সামগ্রিক আকার অক্ষুণ্ন রেখে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ ১০ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি করে ৯১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকায় উন্নীত করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, উপদেষ্টা পরিষদ চলতি মাসের শুরুতে উত্থাপিত প্রস্তাবের কিছু সমন্বয়সহ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। চূড়ান্ত বাজেটে ফ্ল্যাট এবং ভবনে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা  ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ । আর মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫০ শতাংশের মধ্যে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে সরকার ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দ করেছে এবং ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি থেকে  কমিয়ে বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার  কোটি টাকা । যা জিডিপির ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বক্তব্য রাখেন।

খায়েরুজ্জামান বলেন, সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের জন্য পূর্বে ঘোষিত বিশেষ সুবিধা কর্মরত ব্যক্তিদের জন্য সর্বনিম্ন ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং পেনশনভোগীদের জন্য সর্বনিম্ন ৭৫০ টাকায় বৃদ্ধি করা হয়েছে।

আবদুর রহমান খান তার বক্তব্যে বলেন, বিশেষ কর প্রদান করে ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগের বিধান বাতিল করা হয়েছে।

তিনি বলেন, যে-সব পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির কমপক্ষে ১০ শতাংশ পরিশোধিত মূলধন আইপিও (প্রাথমিক পাবলিক অফারিং) বা সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়েছে, সেসব কোম্পানির ক্ষেত্রে সরকার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ কর আরোপ করেছে। তবে, যদি বিবেচিত আয় বছরে ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সকল ধরনের আয় করা হয় তাহলে করের হার হবে ২০ শতাংশ।

অন্যান্য সকল পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ কর প্রযোজ্য হবে।

তিনি বলেন, তবে বিবেচিত আয় বছরে ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সকল ধরনের আয় করা হলে করের হার হবে ২৫ শতাংশ।

এনবিআর প্রধান উল্লেখ করেন যে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ অথবা শুধু তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানকারী বেসরকারি কলেজের জন্য করের হার ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সম্পত্তি হস্তান্তর থেকে কর আদায়ের জন্য বিদ্যমান কর কর্তনের হার ৮, ৬ এবং ৪ শতাংশের পরিবর্তে যথাক্রমে ৫, ৩ এবং ২ শতাংশে কমিয়ে আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানির উপর অগ্রিম কর ৭ দশমিক ৫ শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে এবং পাট থেকে রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদিত তুলার উৎপাদন পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নারী উদ্যোক্তা কর্তৃক পরিচালিত বিউটি পার্লারের স্থান  এবং প্রতিষ্ঠানের ভাড়ার উপর ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বল পয়েন্ট আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে এবং হার্ট রিং এবং চোখের লেন্স আমদানিতে অগ্রিম কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

সকল ধরনের পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানির জন্য ট্যারিফ মূল্যের পরিবর্তে ইনভয়েস মূল্যের ভিত্তিতে শুল্ক ব্যবস্থা চালু করার লক্ষ্যে আবদুর রহমান খান বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য নির্ধারিত ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে  ৩ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে নির্ধারিত ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে  ৬ শতাংশে  আনা হয়েছে।

সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের সাথে সম্পর্কিত সরঞ্জামগুলোকে আরও সহজলভ্য করার লক্ষ্যে তিনি বলেন, সোলার ইনভার্টারের উপর আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে জারি করা ছাড় সুবিধার আওতায় হাসপাতালগুলো কর্তৃক চিকিৎসা সরঞ্জাম ও উপকরণ আমদানি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে আরও ১০টি আইটেম যুক্ত করা হয়েছে। যার ফলে চিকিৎসা পরিষেবা জনগণের জন্য আরও সহজলভ্য হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশে উন্নতমানের টায়ার উৎপাদনের জন্য টায়ার তৈরির অন্যতম কাঁচামাল, টেকনিক্যালি স্পেসিফাইড ন্যাচারাল রাবারের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

15 − four =