বাংলা নাটকের ইতিকথা

ইরানী বিশ্বাস : সাহিত্যের একটি বিশেষ ধরন হচ্ছে নাটক। নাটকের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো উৎধসধ। গ্রিক উৎধপরহ থেকে উৎধসধ শব্দটি এসেছে। যার অর্থ ঃড় ফড় বা কোনো কিছু করা। নাটক শব্দটির মধ্যেই নাটক কী তার ইঙ্গিত রয়েছে। নাটক, নাট্য, নট, নটী- এ শব্দগুলোর মূল শব্দ হলো নট। নট মানে হলো নড়াচড়া বা অঙ্গচালনা করা। নাটকের মাধ্যমেও আমরা মূলত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নড়াচড়া, কথাবার্তা ইত্যাদির মাধ্যমে জীবনের বিশেষ কোন দিক বা ঘটনার উপস্থাপন দেখতে পাই।
সাধারণত একটি পাণ্ডুলিপি অনুসরণ করে অভিনয়ের মাধ্যমে নাটক পরিবেশিত হয়ে থাকে। নাটকে স্থান, সময় ও পরিবেশের বর্ণনা ছাড়াও সংলাপ লেখা থাকে। সংলাপের মাধ্যমেই একজন অভিনেতা নাটকের বিভিন্ন বিষয়ে কথোপকথন করে থাকেন। সব সময়ই যে সংলাপের মাধ্যমে নাটক পরিবেশিত হয়ে থাকে তা কিন্তু নয়, সংলাপবিহীন অভিনয়ও নাটকের বিশেষ একটি অংশ। নাটকের নানারকম বিষয়বস্তুু অনুসারে নাটককে শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে।
বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদে নাটক অভিনীত হওয়ার উল্লেখ রয়েছে। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায়ও দেখা গেছে, চর্যাপদ নৃত্য ও অভিনয়সহ বৌদ্ধ মন্দিরে পরিবেশিত হতো। এ থেকে বলা যায় যে, বাংলা নাটকের ইতিহাস হাজার বছরের। ভারতবর্ষে বাংলা নাটকের আগম ঘটে ইউরোপ থেকে। ১৭৯৫ সালের ২৭ নভেম্বর ইংরেজি নাটক ‘দ্য ডিজগাইজ’ প্রথম বাংলায় রূপান্তর করে নাম দেওয়া হয় ‘কাল্পনিক সংবদল’। এর অনেক বছর পর ১৭৫২ সালে বাঙালির নিজস্ব রচিত নাটক তারাচাঁদ শিকদারের ‘ভদ্রার্জ্জুন’ মঞ্চায়িত হয়। মহাকবি মাইকেল মধুসুধন রচিত সর্বপ্রথম বাংলাদেশের নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’ রচিত ও মঞ্চায়িত হয়।
১৯৪৭ সালের পূর্ব পর্যন্ত মূলত কলকাতা ছিল বাংলা নাট্যচর্চার প্রাণকেন্দ্র। ভারত বিভাগের পর তৎকালীন পূর্ববঙ্গে ঢাকাকেন্দ্রিক নাট্যচর্চা গড়ে ওঠে। পূর্ববঙ্গের নাট্যচর্চা স্বাভাবিকভাবেই এ অঞ্চলের সমাজবাস্তবতা-সমাজচিত্র বিশেষত বাঙালি মুসলিম সমাজের প্রেক্ষাপট চিত্রায়িত হতে থাকে। বাংলাদেশের আধুনিক ধারার নাট্যচর্চার ক্ষেত্রে মুনীর চৌধুরী ও সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ছিলেন অগ্রজ।
১৯৬৪ সালে ‘পিটিভি’ হিসাবে যাত্রা শুরু করা রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিভিশন বা বিটিভি নামে পরিচিত। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই নানা ধরনের অনুষ্ঠান প্রচার করে দর্শকের বিনোদন চাহিদা পূরণ করে আসছে। অনুষ্ঠান বিভাগের প্রথম ব্যবস্থাপক ছিলেন কলিম শরাফী। বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রথম নাটক ছিল ‘একতলা দোতলা’। এটি ১৯৬৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রচারিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীতে টেলিভিশনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) এবং এর রাষ্ট্রায়ত্তকরণ করা হয়। ১৯৭৫ সালে ডিআইটি ভবন ছেড়ে রামপুরায় টেলিভিশনের নিজস্ব ভবন তৈরি করা হয়। এখন সেটি রামপুরা টেলিভিশন সেন্টার নামে পরিচিত।
এমএল সোনার বাংলা নাটকটি ২৮ মার্চ তারিখে টেলিভিশনে প্রচারে জন্য লেখা হয়েছিল। তখনো বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। সময়টি ছিল বিক্ষোভে উত্তাল। ১৯৭১ সালে ১৬ মার্চ নাটকটি রচনা করেছিলেন আব্দুল্লাহ ইউসুফ ইমাম। পরবর্তীতে এ বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের দিনে এ পান্ডুলিপির ভিত্তিতেই নাটকটি মঞ্চস্থ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
১৯৭১ সালে শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস ‘সংশপ্তক’ থেকে ধারাবাহিক নাটক সংশপ্তক নির্মাণ শুরু হয়েছিল। কিন্তু চার পর্ব প্রচারের পর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় এর নির্মাণ ও প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৮৮ সালে আবার এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
বরাবরই আমাদের টিভি নাটকে মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের কাহিনী উঠে এসেছে আবেগ ঘনভাবে। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক ‘বাংলা আমার বাংলা’। নাটকটি লিখেছিলেন ড. ইনামুল হক, প্রযোজনা করেছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন।
১৯৭২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে আমজাদ হোসেনের রচনা ও মুস্তাফিজুর রহমানের প্রযোজনায় প্রচারিত হয় আলোচিত মুক্তিযুদ্ধের নাটক ‘জনতার কাছে আমি’। মোর্শেদ চৌধুরীর রচনা ও মোহাম্মদ বরকতউল্লাহ প্রযোজিত ‘এরা ছিল এধারে’ এ সময়ের উল্লিখিত আরও একটি নাটক। ১৯৭৩ সালে জেসমিন চৌধুরীর লেখা ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ নাটকটি প্রযোজনা করেন আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম। শুধু তা-ই নয়, ১৯৭২ থেকে ’৭৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে টিভি নাটকে মুক্তিযুদ্ধ এসেছে বহুবার।
একটা সময়ে এসে দেশের একমাত্র টেলিভিশন বিটিভিতে মুক্তিযুদ্ধের নাটক স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে নির্মিত হতে শুরু করে। আশির দশকের কাছাকাছি সময়ে এসে আরো কিছু চেতনাসমৃদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের নাটক বিটিভিতে প্রচার হয়। এর মধ্যে জিয়া আনসারীর ‘কোনো এক কুলসুম’, আতিকুল হক চৌধুরীর ‘কম্পাস’ রাবেয়া খাতুনের ‘বাগানের নাম মালানীছড়া’ জোবেদ খানের ‘একটি ফুলের স্বপ্ন’ এবং রাজিয়া মজিদের ‘জ্যোৎস্নার শূন্য মাঠ’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া হাবিবুল হাসানের রচনা ও আবদুল্লাহ আল মামুনের প্রযোজনায় ‘আমার দ্যাশের লাগি’ নাটকটি সে সময়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। এ ছাড়া মমতাজউদ্দীন আহমেদের লেখা মোস্তফা কামাল সৈয়দের প্রযোজনায় ‘এই সেই কন্ঠস্বর’ নাটকটি দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে। আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘আয়নায় বন্ধুর মুখ’ ও ‘একটি যুদ্ধ অন্যটি মেয়ে’ আসাদুজ্জামান নূরের ‘এ মোর অহংকার’ রাহাত খানের ‘সংঘর্ষ’ আল মনসুরের ‘শেকল বাঁধা নাও’ এবং ‘নয়ন সমুখে তুমি নাই’ আতিকুল হক চৌধুরীর ‘যদিও দূরের পথ’ এবং ‘স্বর্ণতোরণ’ মামুনুর রশীদের ‘খোলা দুয়ার’, রাবেয়া খাতুনের উপন্যাস অবলম্বনে রফিকুল হক রচিত ‘ফেরারী সূর্য’ উল্লেখযোগ্য।
পরবর্তীতে বিটিভিতে শুরু হয় এ সপ্তাহের নাটক, বিশ্বনাটক, হীরামন, কন্যা-জায়া-জননী শিরোনামের নাটক। এগুলো নির্মাণ ও মানের দিক দিয়ে ছিল উচ্চমানের। এ সব নাটক এক সময় বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে পশ্চিমবাংলা, ত্রিপুরা, আগরতলার বাংলাভাষীদের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সাপ্তাহিক নাটকের মধ্যে ছিল দূরবীন দিয়ে দেখুন, বাবার কলম কোথায়, শেষ পৃষ্ঠায় দেখুন, বাঁচা, পারলে না রুমকি, কালো সুটকেস, এখন দুঃসময়, নিলয় না জানি, এখন জোয়ার, কি চাহ শঙ্খচিল উল্লেখযোগ্য। এ সব নাটকের জনপ্রিয়তা খুঁজতে গিয়ে উঠে আসে অনেক কিছু। তারমধ্যে কলাকুশলীরা ছিলেন মঞ্চসংশ্লিষ্ট। তাই তাদের নির্মাণে ও অভিনয়ে ছিল মেধা ও যত্নের ছাপ। এসব নাটকের অধিকাংশই ছিল বিটিভির ইনডোর সেটে নির্মিত।
নব্বই দশকের আগ পর্যন্ত বিটিভির নাটকে গল্প ছিল, ছিল জীবনের নির্যাস। মধ্যবিত্ত সমাজ ড্রয়িংরুমের টেলিভিশন পর্দায় খুঁজে পেত তাদেরই জীবনের প্রতিফলন। গ্রামের খেটে খাওয়া সহজ সরল মানুষ খুঁজে পেত নিজের জীবনের ছোঁয়া। এরপর রাজনৈতিক বা সামাজিক কারণে বিটিভির নাটক কিছুটা হলেও মান হারাতে থাকে।
একই রকমের সেট আর স্বল্প বাজেটের নির্মাণে দর্শক যখন ক্লান্ত তখনই চালু হয় প্যাকেজ নাটক। ১৯৯৫ সালে প্যাকেজ নাটকের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে নির্মাতারা নিজের মত করে গল্প বলার সুযোগ পান। বাজেট বাড়লো, গল্পে বৈচিত্র আসলো, লোকেশনে এলো নতুনত্ব। সব মিলিয়ে প্যাকেজ নাটক হয়ে উঠলো বাংলাদেশের মানুুষের প্রধান বিনোদনের আশ্রয়। ঠিক এ সময়ে বাংলা সিনেমায় শুরু হয় অশ্লীলতা। সিনেমা প্রেমী বাঙালি তখন সিনেমা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে বিটিভিতে মনোনিবেশ করে। সবাই বিটিভির নাটকের অপেক্ষায় থাকতো। রাতে নাটক দেখার পর দিনে অফিস বা ক্লাশে গিয়ে গসিপ হতো। সে সময় হুমায়ুন আহমেদ, অরুণ চৌধুরী, কায়েস চৌধুরী, ফেরদৌস হাসান, মোহন খান, মামুনুর রশীদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন একের পর এক উল্লেখযোগ্য নাটক নির্মাণ করতেন। নাট্যকার হিসাবে ছিলেন ইমদাদুল হক মিলন, প্রণব ভট্ট, মাসুম রেজা। এ সময়ে উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে ছিল তৌকির-বিপাশার প্রিয়জন, তৌকির-শমীর কুসুম, আজিজুল-শমীর নাটের গুরু, জাহিদ-শমীর গাঙচিল ভালবাসা, হুমায়ুন আহমেদ নির্মিত ‘নিতুর বিয়ে’ ভীষণ জনপ্রিয়তা পায়।
ধারাবাহিকের মধ্যে কায়েস চৌধুরীর না, অরুণ চৌধুরীর ছোট ছোট ঢেউ, শায়ের চৌধুরীর ভোলার ডায়রি, হুমায়ুন আহমেদের সবুজ সাথী, মামুনুর রশীদের সুন্দরী, মোহাম্মদ হোসেন জেমীর দমন, লোহার চুড়ি।
প্যাকেজের আওতায় হুমায়ুন আহমেদের নক্ষত্রের রাত, আজ রবিবার, হানিফ সংকেতের পুত্রদায়, অনন্ত হীরার বিষকাঁটা, রিঙ্গোর স্বপ্ন, আরিয়ানা। এ সময়ে প্যাকেজ নাটকের কল্যাণে প্রসিদ্ধ হয় কিছু প্রোডাকশান হাউজ। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও ইনফ্রেম তাদের মধ্যে অন্যতম। এতে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
৯০ দশকের শেষে বাঙালির ড্রয়িংরুমে বিনোদনের এক পশলা বৃষ্টি হয়ে আসে বাংলাদেশের প্রথম টেরিস্ট্রিয়াল টেলিভিশন একুশে টেলিভিশন। বড় বাজেট, বড় আয়োজনের একের পর এক নাটক তাক লাগায় গ্রামের গল্প সালাউদ্দিন লাভলুর বন্ধুবরেষু, গিয়াসউদ্দিন সেলিমের শহুরে গল্প বিপ্রতীপ, মোস্তফা সারোয়ার ফারুকীর সুচরিতাসু, আহির আলমের প্রেত, অমিতাভ রেজার অপেক্ষায় বৃষ্টি, একটি গোল্ডফিশের অপমৃত্যু, আফসানা মিমির বন্ধন উল্লেখযোগ্য।
ধারাবাহিক নাটকের মধ্যে সেলিম আলদীন এবং মাসুম রেজার রচনায় এবং সালাউদ্দিন লাভলুর পরিচালনায় ‘রঙের মানুষ’ ভিন্নমাত্রা যোগ করে। ধারাবাহিকটি খুবই জনপ্রিয়তা পেলে এ আদলে আরো অনেক নাটকের জন্ম হয়েছে। তবে রঙের মানুষের মতো এত জনপ্রিয়তা আর কোন ধারাবাহিক পায়নি।
একুশে টেলিভিশনের সাথে প্রথম থেকেই জড়িত ছিলেন কিছু স্বপ্নদ্রষ্টা মানুষ। যারা বিটিভির স্বর্ণযুগের নাটক নির্মাণে জড়িত ছিলেন। একঝাঁক তরুণ পরিচালকের স্বপ্নচোখে নির্মিত হয়েছিল এসব অসাধারণ নাটক। এ ধারা অব্যাহত থাকে একুশে টেলিভিশন বন্ধ হবার আগ পর্যন্ত। তবে এনটিভি, এটিএন, চ্যানেল আই ও ভাল নাটক উপহার দিয়েছে।
বর্তমান সময়টাকে বলা হয়ে থাকে নাটকের মন্দাকাল। অর্থাৎ বাংলা নাটকের প্রতি নাট্যপ্রেমীরা আস্থা রাখতে পারছেন না। তাই দিনে দিনে নাটকের প্রশংসা তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে অনেকে অনেক কারণ দর্শানোর চেষ্টা করছেন। নাটক নির্মাণের প্রধান উপজীব্য হলো বাজেট বা অর্থ বরাদ্দ। এর উপরই নির্ভর করছে নাটকটির গুনগত মান কেমন হবে। আবার অনেক সময় নির্মাতার নিজস্ব কোয়ালিটির উপরও নির্ভর করে নাটকটির মান। কারণ নাট্য নির্মাতার কোয়ালিটি না থাকলে বাজেট বেশি হলেও তিনি গুনগত মানের নাটক নির্মাণ করতে পারবেন না।
আমাদের দেশে নাট্য পরিচালকদের কোন শ্রেণি নির্বাচন করা নেই। যে কারণে নাটক নির্মাণের বাজেট বরাদ্দেও কোন পার্থক্য নেই। সিনিয়র নাট্য পরিচালক এবং জুনিয়র পরিচালকদের জন্য আলাদা কোন ক্যাটাগরি নেই। কর্তৃপক্ষ বা প্রযোজককে খুশি করে যে যত পারছে নাটক নির্মাণে বাজেট বরাদ্দ নিচ্ছে। এতে এক শ্রেণির অপেশাদার লোক নিজেকে পরিচালক পরিচয় দিয়ে ফায়দা লুটে নিচ্ছে। এ ধরনের তথাকথিত পরিচালকরা সাধারণত নতুন কোন ব্যবসায়ী বা বিত্তশালীকে বিভিন্ন চাকচিক্যের লোভ দেখিয়ে অর্থলগ্নী করতে উৎসাহিত করেন। তারা মনে করছেন একজন ভাল ক্যামেরা ম্যান এবং একজন ভাল সহকারী পরিচালক নিলেই নাটক নির্মাণ হয়ে যায়। এভাবে নাটক নির্মাণের নামে চলছে প্রহসন। যার ফলে এ সব পরিচালকের নাটক অনেক সময় প্রচারিত হয় না। নির্মিত নাটক পড়ে থাকে ড্রয়ারবন্দী হয়ে। ফলে নতুন প্রযোজকরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।
নতুন প্রযোজকদের মিডিয়ার নাটক নির্মাণ এবং প্রচারের জন্য বিক্রির বিষয়টি অজানা থেকেই যাচ্ছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেকেই ইচ্ছামতো নাটকের বাজেট নিয়ে নাটক নির্মাণ করছেন। কিন্তু প্রত্যেক টেলিভিশন চ্যানেল একই বজেটের নাটক প্রচার করছে না। আমাদের দেশে বর্তমানে প্রোগ্রামভিত্তিক চ্যানেল আছে বেশ কিছু। তবে সব চ্যানেলে একই মানের নাটক প্রচার করে না। যে কারণে নাটকের মান বা নাটকের বাজেটে থাকে ব্যবধান। তাছাড়া এক চ্যানেল কমেডিভিত্তিক নাটক প্রচারে আগ্রহ বেশি। অন্য অনেক চ্যানেল শহুরে প্রেমের নাটক প্রচারে আগ্রহ বেশি। আবার অন্য চ্যানেল সময়োপযোগী ম্যাসেজধর্মী নাটক প্রচারে আগ্রহ বেশি। এছাড়াও কোন কোন চ্যানেলে বিদেশি আদলের নাটক প্রচারের আগ্রহেরও কম নেই। একটি একক নাটক নির্মাণ করতে সাধারণত ২-৩ দিন সময় লাগে। তবে বর্তমানে নাটকের বাজেট কমে যাওয়ার কারণে প্রযোজক বা পরিচালক ১ দিনের মধ্যে নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করতে চেষ্টা করেন। এতে নাটকের মান কমে যাচ্ছে।
বাংলা নাটকের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হলে টেলিভিশনে নাটক প্রচার বা নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি বা ব্যাক্তিবর্গের আরও পেশাদারি মনোভাব থাকতে হবে। তা না হলে উপমহাদেশের প্রশংসিত বাংলা নাটকের অবস্থান বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

fourteen − 10 =