ফুটবলে মেয়েদের প্রতিভা অন্বেষণে ইউনিসেফ ও বাফুফের উদ্যোগ

ইউনিসেফ ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সী মেয়েদের দেশব্যাপী ফুটবল প্রতিভা অন্বেষণে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। লৈঙ্গিক পার্থক্যকে চ্যালেঞ্জ জানানো এবং লৈঙ্গিক অসমতা ও শিশুবিয়ের মতো সমস্যা, যা শিশু ও সমাজের অনেক ক্ষতি করে, সেগুলো মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে খেলাধুলায় অংশ নিতে মেয়েদের উৎসাহ দেওয়া। বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি টোমো হোযুমি বলেন, ‘মানুষকে একসাথে নিয়ে আসার এক অবিশ্বাস্য গুন আছে খেলাধুলার। এটি মেয়েদের মাঝে থাকা সম্ভাবনা এবং সমাজে তারা যে ভূমিকা পালন করতে পারে সে সম্পর্কে মানুষের ধারণাকে পুরোপুরি বদলে দিতে পারে। খেলাধুলা মেয়ে ও ছেলেদের প্রতি সমানভাবে অবদান রাখতে পারে। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ছাড়াও খেলাধুলা আত্মসম্মান, আত্মবিশ্বাস ও আত্মপ্রত্যয়ের বোধ গড়ে তোলে।’
স্কুল বন্ধ থাকা এবং লকডাউন বিধিনিষেধের কারণে গত এক বছরে শিশুদের শরীরচর্চা এবং তাদের বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ করার সুযোগ মারাত্মকভাবে সীমিত হয়ে পড়েছে, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উভয়েরই ভীষণ ক্ষতি করছে। ফুটবল প্রতিভা অন্বেষণ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হচ্ছে খেলাধুলায় সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হতে শিশুদের উৎসাহ দেওয়ার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী মো. সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা এই কর্মসূচি নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত। আমরা জানি যে অনেক মেয়ে, বিশেষ করে যারা প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলে বাস করে, তারা সাধারণত খেলাধুলা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। আমরা আশা করি খেলাধুলায় মেয়েদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে এই উদ্যোগ বাবা-মা এবং কমিউনিটিগুলোকে অনুপ্রেরণা দিতে পারবে। খেলাধুলার অনেক উপকারিতা যা মাঠ ছাড়িয়েও অনেক দূর পর্যন্ত উপভোগ করা যায়।’
মেয়েদের ফুটবল প্রতিভা অন্বেষণ কার্যক্রমটি খেলাধুলায় মেয়েদের অংশগ্রহণ জোরদার করার লক্ষ্যে ইউনিসেফ ও বাফুফের মধ্যে একটি অংশীদারিত্ব। টুর্নামেন্টের মেয়েরা জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে খেলবে এবং ঢাকায় এই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়নশিপ লড়াই হবে। শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড়দের জন্য আরও প্রশিক্ষণ এবং অবশেষে জাতীয় নারী ফুটবল দলে যোগদানের সুযোগ থাকবে, যেখানে তারা হবে বাংলাদেশের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ের রোল মডেল।
সারাদেশের শিশুরা ইউনিসেফের টিভি সিরিজ ‘ইচ্ছে ডানা’য় তানজিলাকে কুসংস্কার কাটিয়ে উঠতে এবং একজন ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নের পেছনে ছুটতে দেখেছে। এখন বাংলাদেশজুড়ে মেয়েরা তাদের কমিউনিটিতে যে পরিবর্তন দেখতে চায় সেই পরিবর্তন হওয়ার এবং ফুটবল নিয়ে নিজেদের স্বপ্ন সত্যি করার সুযোগ পাচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে মেয়েদের উৎসাহ দিচ্ছেন ইউনিসেফের ইয়ুথ অ্যাডভোকেট রাবা খান। ‘মেয়েরা আগে থেকেই শক্তিশালী। তাদের শুধু নিজ পরিবার ও কমিউনিটির থেকে সঠিক সুযোগ এবং একটু উৎসাহ প্রয়োজন। বাংলাদেশে আমাদের অবশ্যই মানসিকতা ও চিন্তায় পরিবর্তন আনতে হবে। ফুটবল এবং অন্যান্য খেলাধুলায় অংশগ্রহণের ব্যাপারে একটি মেয়ের সক্ষমতায় কোনো ঘাটতি নেই। এই ছোট ছোট উজ্জ্বল তারকাদের ফুটবল প্রতিভা দেখার অপেক্ষায় আছি,’ রাবা খান বলেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 × 1 =