বাংলাদেশ ভালো ব্যাট করলেও নিয়ন্ত্রণ ওয়েস্ট ইন্ডিজের

সালেক সুফী: ২৫ মার্চ ২০২২।  দেশে এবং প্রবাসে আজ বাংলাদেশের আজ জয়ধ্বনি।  প্রমত্তা পদ্মা নদীর বুকে আজ চালু হচ্ছে উত্তর-দক্ষিণ বাংলাদেশের মিলন মোহনা, গর্ব আর অহংকারের প্ৰতীক বহুমুখী সেতু।

দূরদেশে ক্যারিবিয়ান সাগর পাড়ে সেন্ট ভিন্সেন্ট ড্যারেন সামি স্টেডিয়ামে অনিশ্চিত বাউন্সের উইকেটে প্রথম ব্যাটিং করে  বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ২৩৪ করে মন্দের ভালো করেছে।  শুরুতে তামিমের ৪৬ এবং শেষ দিকে লিটনের ৫৩ রান ইনিংসের হাইলাইট ছিল। শরিফুল-এবাদত ৯ম উইকেট জুটির ৩০ বলে ৩৬ রানের জুটি দলকে এই উইকেটে স্বস্তির স্থানে নিয়েছে।

দিন শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ  বিনা উইকেটে ৬৭ করে   ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে। আবারো দেখা গেলো বাংলাদেশ ব্যাটিং করার সময় উইকেট বোলিংবান্ধব মনে হলে আপাতদৃষ্টিতে উইকেট চরিত্র পাল্টে যায়। প্রতিপক্ষের ব্যাটিং করার সময় বাংলাদেশ ভুলে যায় খেলাটি।

৫ দিন ১৫ সেশনের খেলা। দ্রুত ৩০-৪০ রান করার চেয়ে ধীরে স্থিরে খেলে প্রথম ইনিংসে নিদেনপক্ষে ৩০০-৩৫০ রান করার টার্গেট হওয়া উচিত। প্রথম দিনে দুই সেশনের কিছু বেশি সময়ে সব উইকেট হারালে প্রতিপক্ষ অনেক সময় পায় পরিকল্পনা করে এগিয়ে যাবার।

ভাগ্যের কিছুটা সহায়তা পেলে বড় স্কোর করা আওতায় ছিল। ভালো খেলতে থাকা শান্ত (২৬) আর বহুদিন পর দলে ফেরা বিজয় (২৩) আম্পায়ার্স সিদ্ধান্তে আউট হলে একসময় বাংলাদেশ ইনিংসের ছন্দ পতন ঘটেছিলো। অধিনায়ক সাকিব নিজের বিশ্বখ্যাতির সাথে অবিচার করে দায়িত্বহীনের মতো আউট হলে দায়িত্ব এসে পড়ে লিটন দাসের উপর।

উইকেটে কিন্তু পেস এবং ল্যাটেরাল মুভমেন্ট সীমিত হলেও অসম বাউন্স আছে।  এই উইকেটে ক্র্যাক দেখা যাচ্ছে। অনুমান করা যায় এই উইকেটে তৃতীয় চতুর্থ দিনে ব্যাট করা আদৌ সহজ হবে না। তবে তামিম আরো একটু দায়িত্ব নিয়ে খেললে এবং সাকিব গে কাভিলিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করলে ২৫০ রান হতে পারতো। তবে যে রান হয়েছে সেটি কিন্তু যুদ্ধ করার মতো পুঁজি।  বাংলাদেশের বোলাররা সঠিক লেংথে বোলিং করলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে এখানে ব্যাটিং করা সহজ হবে না।

জানিনা কেন এই উইকেটে স্বাগতিক দল একমাত্র স্পিনার গুরুকেশ মটিকে পরিবর্তন করেছে। একজন পেসার পরিবর্তন করে  অ্যান্ডার্সন ফিলিপসকে অবশ্যই  খেলানো যেত। হয়তো এই সিদ্ধান্ত ওদের পস্তানোর কারণ হতে পারে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ অফ ফর্মে থাকা প্রাক্তন অধিনায়ক মোমিনুল হককে পরিবর্তন করে অভিজ্ঞ এনামুল হক বিজয়কে এবং কাটার মাস্টার মুস্তাফিজকে বিশ্রাম দিয়ে দেশ থেকে জরুরি ভিত্তিতে উড়িয়ে আনা শরিফুলকে অন্তর্ভুক্ত করে।

শুরুতে তামিম রিভিউ করে রক্ষা পেয়ে স্বভাব সুলভ ছন্দে ব্যাটিং করছিলো। ওপর প্রান্তে জয় ছিল অস্বস্তিতে। অভিষিক্ত ফিলিপ্স টেস্ট জীবনের দ্বিতীয় বলে জয়ের উইকেট ভেঙে দিয়ে প্রথম আঘাত হানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলাররা একটু বেশি হালকা বল করে বাউন্ডারি আসছিলো সহজে। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জোসেফের বলে ব্লাকউডের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৪৬ রান করে অসময়ে ফিরে যায়। তার মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসমান নিজের উইকেটের প্রকৃত মূল্য দিলে দলের উপকার হতো।

বলবো ভালো খেলছিল বহুদিন পর শান্ত, দলে ফেরা বিজয়ের বাটিংয়েও ছিল আত্মবিশ্বাস।  কিন্তু আগেই বলেছি ভাগ্য মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় দুইজনই আম্পায়ার্স কলে  উইকেট হারায়।  সোহান, সাকিব, মেরাজের আউট হবার ধরন আনাড়ির মতো ছিল। একমাত্র লিটনের ৫৩ রানের ইনিংসটি ছিল দেখার মত। ঘুরে দাঁড়িয়েছিল এবাদত -শরিফুল জুটি।  ৯ম উইকেটে ওদের যোগাযোগে যোগ হয় মূল্যবান। ৩৬ রান খেলায় বড় ভূমিকা রাখলে অবাক হবো না। ৫টি বাউন্ডারি সমৃদ্ধ ২৬ রান শরিফুলকে ভালো বোলিং করতে উদ্বুদ্ধ করবে হয় তো।

৩৯টি বাউন্ডারি হয়েছে বাংলাদেশ ইনিংসে।  এন্টিগুয়া টেস্টের প্রথম ইনিংসের ১০৩ রানের তুলনায় ২৩৪ রান অনেক উন্নত। তবে খেলাটা যেহেতু টেস্ট ম্যাচ।  ৬৪.২ ওভারে গুটিয়ে যাওয়া প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে কিন্তু রয়ে শোয়ে খেলার সুযোগ উপহার দেয়। আজারি জোসেফ (৩/৫৩), জেইডেন সিলসের (৩/৫০), অ্যান্ডার্সন ফিলিপসের (২/৩০) আবারো প্রমাণ করলো বাংলাদেশ পেস বোলিং খেলতে এখনো গুলিয়ে ফেলে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারসরা ওদের ইনিংসে যেভাবে বোলিং করেছে বাংলাদেশ কিন্তু নতুন বলে সেটি করতে পারে নি. ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওপেনারস অনেক স্বচ্ছন্দে ব্যাটিং  করে  স্বস্তির অবস্থানে  আছে। ব্রাফেট ৩২ রানে এবং ক্যাম্পবেল ৩০ রানে অপরাজিত আছে।  এই টেস্টে প্রথম ইনিংস এগিয়ে থাকা মূল ভূমিকা পালন করবে।

বলবো না বাংলাদেশ খেলা থেকে ছিটকে পড়েছে। তবে টেস্ট ম্যাচ জিততে হলে ভালো ব্যাটসম্যানদের ৪০-৫০ যথেষ্ট নয়।  তামিম, লিটনের অন্তত একজনের অন্তত শতরান দলকে এগিয়ে দিতো। সাকিবের আরো দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করা উচিত ছিল। বাংলাদেশ ১৬ ওভার ভালো বোলিং করেছে বলবো না।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

ten + sixteen =