জয় পেতে ভুলে গেছে বাংলাদেশ

সালেক সুফী

অবশেষে ব্যার্থতার ষোলোকলা পূর্ণ হলো। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মরুভূমি থেকে জয়হীন আরো একটি বিফল মিশন শেষ হলো বাংলাদেশের। এশিয়া কাপ ২০২২ এবারের আসরটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব কাপ সামনে রেখে টি ২০ ঢঙে। বদলে যাবার  অনেক বড় স্বপ্ন দেখিয়ে দুবাই গিয়েছিলো বাংলাদেশ।  প্রথমে খুদে আফগানিস্তানের সঙ্গে ৭ উইকেটের ব্যাবধানে শোচনীয় পরাজয়। এর পর শ্রীলংকার বিরুদ্ধে সোনার হরিনের মতো হারিয়ে যাওয়া জয় বাংলাদেশকে খালি হাতে ফেরালো। আমার বলার কিছু ছিল না। পরিবর্তনের হাওয়া লাগিয়েও জয় পেলো না বাংলাদেশ। প্রশ্ন করবো জয় কেন মরীচিকা বাংলাদেশের। চার পাঁচ বার আউট করার সুযোগ হারিয়ে কিভাবে একটি দল জয় পাবে আন্তর্জাতিক ম্যাচে?   কি অজুহাত দিবে বাংলাদেশ?  টি ২০ বিশ্বকাপের পর এবারের এশিয়া কাপ থেকেও জয় বঞ্চিত হয়ে ফিরে আশা বাংলাদেশকে গভীর ভাবে অনুসন্ধান করতে হবে গলদ কোথায়?  কেন ফর্ম হীন মুশফিক, মাহমুদুল্লার বিকল্প গড়ে উঠে নি বাংলাদেশে?  অপেক্ষাকৃত তরুণদের খেলা টি ২০ ফরম্যাটে আর কবে যথাযথ দল গড়ে উঠবে। সকল ফরম্যাটে অধিকাংশ খেলায় পরাজয় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মন্ডলে টিকে থাকাকেই প্রশ্ন বিদ্ধ করছে। দেয়ালে পিঠ থেকে গাছে অসহায় বাংলাদেশের। এতো কথা এতো বাগাড়ম্বর,  বিসিবির কি লজ্জা বলতে কিছু নেই?  কি করছে বাংলাদেশের মহামূল্যের টীম ডিরেক্টর, নামি দামি কোচিং স্টাফ?  প্রথম ম্যাচে পরাজয়ের পর খোল নলচে পাল্টে ফেলা হয়েছিল বাংলাদেশ দলের। বিজয়, নাঈমকে পাল্টে মেরাজ সাব্বিরকে দিয়ে ওপেন করানোয় চমক থাকলেও ছিল। সাব্বির না পারলেও মেরাজ উড়ন্ত সূচনা দিয়েছিলো। দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের মেরাজ (৩৮), আফিফ (৩৯),  মাহমুদুল্লাহ (২৭),  সাকিব (২৪), মোসাদ্দেক (২৪) রান  করে ১৮৩/৭  করেও জয় পেলো না কিছুটা দুর্ভাগ্য আর অনেকটাই শিশুতোষ ফিলডিংয়ের কারণে। কোনো ম্যাচে প্রতিপক্ষ দলের অন্যতম প্রধান ব্যাটসম্যানকে ৪ বার ব্যাটিং করার সুযোগ দিলে কোনো দল জয় পেতে পারে না। পরাজয়ে আফসোস থাকবেই। কিন্তু বাংলাদেশ দলের জয় পরিকল্পনায় অনেক গলদ ছিল সেটি স্লোগ ওভারে বাজে বোলিং,  আফিফকে দিয়ে চেষ্টা না করানো  বা নাসুমাকে উপেক্ষা করাকে অজুহাত দেয়া যায়।

আমি নতুন করে কিছু বলতে চাই না। বাংলাদেশের ক্রিকেটের চিন্তা ধারায় আমূল পরিবর্তন না হলে জয় নামের সোনার হরিণ আশা জাগিয়েও ক্রমাগত মরীচিকা হয়ে হারিয়ে যেতেই থাকবে। আর কত ব্যার্থতার পর ঘুম ভাঙবে বিসিবির। শুনি বিসিবি প্রধান বলেন আইপিএল, বিগ বাসের পর বিপিএল নাকি সেরা টি ২০ ফ্রাঞ্চাইজ। তাহলে সেখান থেকে এখনো কেন বাংলাদেশ একটি ম্যাচ জয়ী দল গড়ে তুলতে পারছে না?  কেন ফর্ম হীন মুশফিক, মাহমুদুল্লাহকে বাহন করতে হচ্ছে? এতোদিনেও কেন ওদের বিকল্প গড়ে উঠছে না?  কেন ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসাবে ক্রমাগত পরীক্ষা নিরীক্ষা?  টপ অর্ডার বাটিঙের হতশ্রী অবস্থা কবে দূর হবে?  কেন  ব্যাটসম্যানরা  ২০-৩০ রান করে কেন উইকেট ছুড়ে আসছে বার বার?  এগুলোর কি কোনো স্হায়ী সমাধান নেই?

এবারের এশিয়া কাপে প্রথম খেলায় দাঁড়াতেই পারলো না বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা খুদে আফগানদের বিরুদ্ধে। আনকোরা নবীন ফজল হক ফারুকী বা নবীন হক শুরুতেই ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিলো বাংলাদেশকে। আর মুজিব, রশিদকে খেলার মতো কৌশল নেই বাংলাদেশের সেটি সবার জানা। ফলাফল ৭ উইকেটে লজ্জাজনক পরাজয়। ভাবা হয়েছিল করো না হয় মরো ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। দুজন ওপেনার পরিবর্তন করে। প্রথম খেলায় উপেক্ষিত এবাদাতকে দলে এনে জুয়া খেলেছিল বাংলাদেশ। মেরাজ,  এবাদত সফলতার ইঙ্গিত দিলেও স্কুল ছাত্রদের চেয়েও দুর্বল ফিল্ডিং,  স্লোগ ওভারে বাজে বোলিং তীরে এসে তরী  ডোবালো। আরো একবার হতাশার সাগরে ভাসলো বাংলাদেশ। জয়হীন ব্যার্থতার ষোলো কলা পূর্ণ করে দেশে ফিরবে বাংলাদেশ। অনেক আশা ছিল তুখোড় চৌকষ নেতৃত্ব দিয়ে জয়ের ধারায় ফেরাবে বাংলাদেশকে বিতর্কিত শাকিব আল হাসান। পারলো কই?  মানি লিটন, সোহান না থাকায় দলের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। কিন্তু একটি দল বর্তমান সময়ে কিছু ব্যাক্তি নির্ভর হয়ে থাকলে টেকসই উন্নয়ন হয় না। দলের যে বেহাল অবস্থা সেখান থেকে দ্রুত কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবে তার কোনো চট জলদি ব্যবস্থাপত্র দেয়া যাবে না। কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ পতনের পিচ্ছিল পথ থেকে? আমি মনে করি টি২০ ফরমেট থেকে মুশফিক,  মাহমুদুল্লার অবসর নেয়ার সময় এসেছে। নতুন কিছু মুখ বিবেচনার সময় এখন। আক্রমণে মৃত্যুঞ্জয়কে সুযোগ দেয়া যায়। সৌম্যকে কি বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলেছে?  কাল মেরাজ, সাব্বিরকে দিয়ে ওপেন করানো থেকেই প্রমান হলো দলে অস্থিরতা বিরাজ করছে। দুয়ারে প্রস্তুত আইসিসি বিশ্ব কাপ। এই দল অস্ট্রেলিয়ায় তুখোড় প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই পারবে না। বিড়ম্বনা আর হতাশা থেকে বাঁচতে হলে এখনই প্রয়োজন ব্যার্থতার চুলচেরা বিশ্লেষণ। শুধু কোথায় খৈ ভিজবে না। টপ অর্ডার ব্যাটিং বার্থ,  মিডল অর্ডারে দায়িত্বহীনতা,  লেট অর্ডারে ধুম ধারাক্কা ব্যাটসম্যান কি?  এই ব্যাটিং নিয়ে বাংলাদেশ হংক থেকেও জয় পেত বলে মনে হয় না। এখন দেখার সময় কি বলে বিসিবি?  বিবর্ণ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নিয়ে আমার স্বপ্ন দেখার পালা আপাতত স্থগিত হলো হতাশায়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

six + twenty =