ওবায়দুর রহমান ও তার রহস্যময় সময় পরিভ্রমণ

জ্ঞান-বিজ্ঞান ও বাস্তব-কল্পনার আলোকে একটি বিষয় যা মানুষের মনকে বারবার আলোড়িত করে তা হলো সময় পরিভ্রমণ, ইংরেজিতে যাকে বলা হয় টাইম ট্রাভেল। মাঝে মধ্যে কার না মনে এই প্রশ্নটা আসে, “আসলেই কি সময় পরিভ্রমণ সম্ভব”? বস্তুত, এই টাইম ট্রাভেল অথবা সময় পরিভ্রমণের মতো একটি পরাবাস্তব অভিজ্ঞতা এবং আশ্চর্যজনক বিষয়ের প্রতি মানুষের সব সময়েই ব্যাপক আগ্রহ ছিল। সত্যি কথা বলতে, কে না চায় টাইম ট্রাভেলের সাহায্যে ও  টাইম মেশিনের মাধ্যমে অতীতে ফিরে যেতে আর পাশাপাশি ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা করতে, এবং তার প্রেক্ষাপটে সময়ের বিভিন্ন দ্বারপ্রান্তের বাস্তবতা ও নতুনত্ত্বকে অধীর আগ্রহে অন্নেষন করতে।

এই টাইম ট্রাভেল নিয়ে আজ পর্যন্ত বহু গবেষণা হয়েছে, লেখা হয়েছে অসংখ্য বই, তৈরি হয়েছে সিনেমা, ডকুমেন্টারি, টিভি প্রোগ্রাম আর কত কি।  আর তাতে, সময়ের সাথে সাথে, সময় পরিভ্রমণের রহস্যময়তার কোনো রকম কমতি হয়নি, বরং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে সময় পরিভ্রমণের গুরুত্বটা আরো অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে অধিকাংশ গবেষণাগুলো  পাশ্চাত্য কেন্দ্রিক, তারপরেও বাংলাদেশে টাইম ট্রাভেলের মতো একটি রোমাঞ্চকর বৈজ্ঞানিক বিষয়ের প্রতি পাঠকদের আগ্রহের কোনো কমতি নেই।

আর তারই প্রেক্ষিতে সময় পরিভ্রমণের বাস্তবতা এবং টাইম মেশিনের সকল সম্ভাবনার খুঁটিনাটি নিয়ে সম্প্রতি বের হয়েছে বাংলাদেশি লেখক ওবায়দুর রহমানের নতুন বই “দি মিস্ট্রি অফ টাইম ট্রাভেল”। ইংরেজি ভাষায় অত্যন্ত সহজ ভাবে লেখা এ গবেষণাধর্মী বইটির মাধ্যমে লেখক ওবায়দুর রহমান, বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক, এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে মূলত যুক্তিসঙ্গতভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন সময় পরিভ্রমণ এর সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়। আর তারই মাধ্যমে, লেখক তার বইয়ে টাইম ট্রাভেলের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা ও যৌক্তিক সম্ভাবনা সম্পর্কে নানারকম তথ্য অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পাঠকদের কাছে খুব সাবলীল ভাবে উপস্থাপন করেছেন।

“দি মিস্ট্রি অফ টাইম ট্রাভেল” বইটিতে আছে মূলত পাঁচটি অধ্যায়, যেগুলোতে লেখক সময় ভ্রমণের সাথে সংশ্লিষ্ট বহু তাত্ত্বিক এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অত্যন্ত প্রজ্ঞা ও সহজভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। আসলে সময় পরিভ্রমণ যে একটি যুক্তিসঙ্গত বৈজ্ঞানিক সম্ভাবনা, তারই বিভিন্ন দিক লেখক ওবায়দুর রহমান, তার অনুসন্ধানী লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।

“দি মিস্ট্রি অফ টাইম ট্রাভেল” বইটির সেই পাঁচটি অধ্যায়ে টাইম ট্রাভেল কেন্দ্রিক যেসব প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো হলো: (১) সময় পরিভ্রমণের বৈচিত্র্যময় ব্যাখ্যা এবং বৈজ্ঞানিক ও যৌক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে মূলত টাইম ট্রাভেল বলতে আসলে কি বুঝায়, (২) ইতিহাসজুড়ে সময় পরিভ্রমণের যাবতীয় রোমাঞ্চকর ও বিস্ময়কর ঘটনাগুলো, (৩) সময় মূলত কি, তার বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিক বিশ্লেষণ, (৪) বাস্তবতা ও পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে সময় পরিভ্রমণের নানাবিধ চ্যালেঞ্জ, যেখানে টাইম ট্রাভেল প্যারাডক্স  নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে (প্যারাডক্স শব্দের বাংলা হলো “আপাতত দৃষ্টিতে স্ব-বিরোধী), আর (৫) সময় পরিভ্রমণ কিভাবে সম্ভব হতে পারে এবং কোন পন্থাগুলো অবলম্বন করলে টাইম মেশিনের মাধ্যমে মানুষ অতীত এবং ভবিষ্যৎ ভ্রমণ করতে সক্ষম হবে।

লেখক ওবায়দুর রহমান তার “দি মিস্ট্রি অফ টাইম ট্রাভেল” বইটিতে, তার সুলেখনীর মাধ্যমে, এই  সময় পরিভ্রমণের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন একাডেমিক বিষয় যেমন: পদার্থবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, দর্শন, ইতিহাস, ও মহাকাশবিজ্ঞান সহ বেশ কিছু জটিল বিষয় অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ও সাবলীল ভাবে এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করেছেন। লেখক আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের আলোকে টাইম ট্রাভেলের আরো বিভিন্ন রোমাঞ্চকর দিক তুলে ধরেছেন, যেমন: (১) ব্ল্যাকহোলের মাধ্যমে সময় পরিভ্রমণ, (২) আইনস্টাইন-এর থিওরিতে সময় পরিভ্রমণের বাস্তবতা আর স্টিফেন হকিংয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে সময় পরিভ্রমণের উপায়, (৩) কিভাবে ওয়ার্মহোলকে একটি টাইম মেশিন রূপান্তর করা যায়, (৪) আলোর গতিতে ছুটতে পারে এমন মহাকাশযানের মাধ্যমে সময় পরিভ্রমণ, (৫) মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অর্থাৎ গ্রাভিটি কিভাবে সময় পরিভ্রমনের দারকে উন্মুক্ত করে দিতে পারে, এগুলো সহ  আর অনেক তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় তার বইটিতে উঠে এসেছে।

বলাই বাহুল্য যে, গত শতাব্দী থেকে বিজ্ঞানীরা নিরলসভাবে গবেষণা ও অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন টাইম ট্রাভেলকে একটি বাস্তবে রূপান্তর করতে। যদিও অফিসিয়ালি এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনো উত্তর বা চূড়ান্ত প্রমাণ সাধারণ মানুষের কাছে এখনো এসে পৌঁছায়নি। আর তার হয়তো একটি প্রধান কারণ টাইম ট্রাভেল ও টাইম মেশিন নিয়ে সকল গবেষণার চরম গোপনীয়তা, যা সাধারণত পাশ্চাত্যের দেশগুলো অতি গুরুত্বের সাথে বজায় রাখে। তবে অনেকের মতোই লেখক ওবায়দুর রহমান মনে করেন যে, সময় পরিভ্রমণের সম্ভাবনা অবশ্যই আছে, যদিওবা তার পদ্ধতিটা অত্যন্ত জটিল।

নিঃসন্দেহে লেখক ওবায়দুর রহমানের “দি মিস্ট্রি অফ টাইম ট্রাভেল” বইটি পাঠকদেরকে টাইম ট্রাভেলের মতো একটি মন্ত্রমুগ্ধকর বিষয় সম্পর্কে অধীর আগ্রহী করে তুলবে। লেখকের এই অত্যন্ত তথ্যপূর্ণ এবং সময় পরিভ্রমণের সাথে সংশ্লিষ্ট অতি বিস্ময়কর সব ঘটনাবলি নিয়ে লেখা সহজপাঠ্য এই “দি মিস্ট্রি অফ টাইম ট্রাভেল” বইটি, যা তার নিবেদিত গবেষণার এক তাৎপর্যপূর্ণ বহিঃপ্রকাশ, পাঠকদের নিশ্চিতভাবে, এই চমকপ্রদ বিষয়ে, একইসাথে অবগত ও আলোকিত করবে।

লেখক ওবায়দুর রহমানের আশা যে তার এই বই “দি মিস্ট্রি অফ টাইম ট্রাভেল” পাঠকদের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হবে। আর পাঠকবৃন্দ লেখকের এই ওয়েবসাইটে থেকে: (https://independent.academia.edu/ObaidurRahman26), তার এই বইটি সম্পূর্ণভাবে পড়তে এবং অতি সহজেই বইটির পিডিএফ সংস্করণটি ডাউনলোড করতে পারবেন। “দি মিস্ট্রি অফ টাইম ট্রাভেল” লেখক ওবায়দুর রহমানের চতুর্থ বই এবং এটি বার করেছে স্লিক পাবলিকেশন্স।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

three × four =