২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘দ্য লক্ষণ দাস সার্কাস’ প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন ঝুমুর আসমা জুঁই। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৫টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী দেখান হবে।
ষাটের দশকে বরিশালের গৌরনদীর লক্ষণ দাসের হাত ধরে যাত্রা করা সার্কাসের যে দলটি একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল, স্বাধীনতার অর্ধশতকে বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়েও তার আলো নেভেনি। দলটির দীর্ঘ পালাবদালের গল্প আর সার্কাস শিল্পীদের টিকে থাকার লড়াইয়ের কাহিনী নিয়ে আসছে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘দ্য লক্ষণ দাস সার্কাস’।
নির্মাতা ঝুমুর আসমা জুঁই বলেন, “সামান্য প্রাপ্তি আর নির্মম বাস্তবতা। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। তারপরও প্রদর্শনী শেষে বিশ্বজয় করার অনাবিল প্রশান্তি। একজন সত্যিকারের শিল্পীর পক্ষেই সম্ভব নিজেকে বিলিয়ে অন্যকে আনন্দ দেওয়া। মূলত লক্ষণ দাসের হাতে যে সার্কাস দলটি গড়ে উঠেছিল, সেই দিলটির বিভিন্ন পালাবদল এই চলচ্চিত্রের মূল উপজীব্য।
তিনি জানান, গৌরনদীর লক্ষণ দাস ষাটের দশকের শুরুতে ‘দি রয়্যাল পাকিস্তান সার্কাস’ নামে একটি সার্কাসের দল খোলেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সহযোগিতা করেন মুক্তিযোদ্ধাদের। এ কারণে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হয় তাকে; আহত হন তার স্ত্রী। তাদের টাকাপয়সা, সোনার অলঙ্কার লুটপাটের পাশাপাশি সার্কাস দলের হাতিটিকেও হত্যা করা হয়।
তবে লক্ষণ দাসের সেই সার্কাস দল নিঃশেষ হয়ে যায়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ‘দি রয়্যাল বেঙ্গল সার্কাস’ ও ‘দি লক্ষণ দাস সার্কাস’ নামে আত্মপ্রকাশ করে দলটি। লক্ষণ দাসের ছেলে অরুণ দাস ও বিরেণ দাস সার্কাসের দল বাঁচিয়ে রাখতে ‘সংগ্রাম’ করে যাচ্ছেন বলে জানান ঝুমুর আসমা জুঁই। ঝুমুর আসমা জুঁই বলেন, লক্ষণ দাসের সার্কাস দলে সব সময় ৭০/৮০ জন কাজ করেছে। তাদের পরিবারের জীবিকা এ কাজের ওপরই নির্ভর করে। কিন্তু প্রদর্শনীর সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে।
তিনি বলেন, “লক্ষণ দাসকে এ অঞ্চলের সার্কাস শিল্পের জনকও বলা হয়। এই শিল্পকে জনপ্রিয় করে তুলতে তিনি সারাজীবন কঠোর পরিশ্রম করেছেন। গুণী এই শিল্পী মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন।” নির্মাতা জানান, সার্কাসের বিভিন্ন সরঞ্জাম, হাতি, বাঘ, সিংহসহ অন্যান্য প্রাণী নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় দলটি সার্কাস দেখিয়ে বেড়ায়, এক সময় তাদের প্রধান বাহন ছিল নৌকা।
বিডিনিউজ