বিদায়ের শঙ্কা কাটিয়ে শেষ আটে ইংল্যান্ড

ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের শেষ ষোল থেকে অস্বস্তিকর বিদায়ের শঙ্কা থেকে শেষ পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছে ইংল্যান্ড। পিছিয়ে পড়েও ইনজৃুরি টাইমে জুড বেলিংহামের  ওভারহেড কিকের পর অতিরিক্ত সময়ে হ্যারি কেনের গোলে স্লোভাকিয়াকে রোববার ২-১ ব্যবধানে পরাজিত করে ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের  কোয়র্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের দল ইংল্যান্ড।

থ্রি লায়ন্সরা অন্যতম ফেবারিট হিসেবে এবারের আসর খেলতে জার্মানিতে এসেছিল। বড় টুর্নামেন্টে ৫৮ বছরের শিরোপা খরা কাটিয়ে গতবারের রানার্সÑআপরা এবার আর কোন ভুল করতে চায়নি। হয়তো সেই লক্ষ্য পূরনই বেলিংহাম, কেনদের মনে বারবার আঘাত হেনেছে। যে কারনে ২৫ মিনিটে ইভান শারাঞ্জের গোলে পিছিয়ে পড়েও নাটকীয় এই জয়  তারা নিশ্চিত করলো।

স্টপেজ টাইমের পঞ্চম মিনিটে বেলিংহামের দুর্দান্ত গোলে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে ইংল্যান্ড। এরপর তাদেরকে আটকানোর সাধ্য আর ছিলনা স্লোভাকিয়ার। এই গোলে সাউথগেট ইংলিশ বস হিসেবে যেন নতুন জীবন ফিরে পান। অতিরিক্ত সময় শুরু না হতেই কেনের হেডে ইংল্যান্ড জয়ের সুবাতাস পেতে শুরু করে। আগামী  শনিবার কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ ইতালিকে বিদায় করা সুইজারল্যান্ড।

ম্যাচ শেষে অধিনায়ক কেন বলেছেন, ‘এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি, এটাই আমাদের লক্ষ্য। ম্যাচটা ধীরে ধীরে যখন কঠিন হয়ে উঠছিল তখনই আমরা ঘুড়ে দাঁড়িয়েছি। এক বিন্দুও কেউ ছেড়ে দেয়নি। শেষ পর্যন্ত লড়াই করে গেছে। জুডের যা করার ছিল সেটাই সে করেছে। এটা একটা অবিশ্বাস্য গোল ছিল।’

গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচে মাত্র দুই গোল করার পর সি-গ্রপের শীর্ষ দল হিসেবেই ইংল্যান্ড পরের রাউন্ডে ওঠে। আক্রমনভাগের কম্বিনেশনটা ঠিক করার পথ খুঁজতে তাই সাউথগেটকে হিমশিম খেতে হয়েছে। কোবি মেইনুকে কাল প্রথমবারের মত মূল একাদশে খেলিয়েছেন সাউথগেট। এটাই দলে একমাত্র পরিবর্তন ছিল। কিন্তু কোচের আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি তরুণ মেইনু। মধ্যমাঠে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ১৯ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। সাউথগেট বলেন, ‘আমাদের আরো ভাল করতে হবে। এটা নিয়ে আমার কোন গোপনীয়তা নেই। কিন্তু সকলের মধ্যে আমি সেই গতি ও দৃঢ়তা দেখেছি, যে কারনে আমরা ম্যাচের শেষ পর্যন্ত লড়াই করে গেছি।’

গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডের পারফরমেন্স সমর্থকদের মন ভরাতে পারেনি। যদিও বদলে যাওয়া রক্ষণভাগের কারনে তিন ম্যাচে মাত্র এক গোল হজম করেছে ইংলিশরা। কিন্তু গতকাল বিশ^ র‌্যাঙ্কিংয়ের ৪৫তম স্থানে থাকা স্লোভাকিয়ার কাছে প্রথমে গোল হজম করে সেই রক্ষনভাগও প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। এই গোলের আগে ডেভিড হানকো ও লুকাস হারসালিন দুইবার ইংলিশ রক্ষনভাগকে বিপদে ফেলেছিল। ২৫ মিনিটে আর শেষ রক্ষা হয়নি। ডেভিড স্টারলেকের বাড়ানো বলে আত্মবিশ্বাসী শারাঞ্জ ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ডকে কোন সুযোগই দেননি। টুর্নামেন্টে এটি তার তৃতীয় গোল।

বিরতির বাঁশি বাজার সাথে সাথে ইংলিশ সমর্থকরা দুয়ো ধ্বনি দিতে থাকে। কিন্তু সাউথগেট তার একই দল নিয়ে অটল ছিলেন এবং দ্বিতীয়ার্ধের ২৫ মিনিট পর্যন্ত কোন পরিবর্তন  করেননি। ইংল্যান্ড অন্তত দ্বিতীয়ার্ধে ভাল সূচনা করেছে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে তারা বল জালেও পাঠিয়েছিল। কিয়েরান ট্রিপিয়ারের ক্রস থেকে ফিল ফোডেন গোল করলেও ভিএআর রিভিউ অফসাইডের কারনে তা বাতিল করে দেয়।

এর পরপর স্লোভাকিয়া ব্যবধান দ্বিগুন করার সহজ সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি। ইংল্যান্ড বলের পজিশন হারালে স্টারলেক পিকফোর্ডকে একা পেয়েও লাইনে বল রাখতে পারেননি। ৬৬ মিনিটে ট্রিপিয়ারের ইনজুরিতে শেষ পর্যন্ত সাউথগেট খেলোয়াড় পরিবর্তনে বাধ্য হন। কিন্তু তারপরও সমতায় ফিরতে পারছিলনা ইংল্যান্ড। ডেক্লান রাইসের দুরপাল্লার একটি বল থেকে কেনের হেড বাইরে চলে গেলে হতাশ হতে হয় ইংলিশদের। স্টপেজ টাইমে ইভান টনিকে সাউথগেট যখন মাঠে নামান তখন ক্ষুব্ধ সমর্থকরা চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘তুমি নিজেও জানো না তুমি কি করছো।’

যদিও ম্যাচের নাটকীয়া তখনো বাকি। যোগ হওয়া সময়ের শেষ মিনিটে গুয়েহির ফ্লিক-অনে বেলিংহাম অসাধারন ওভারহেড কিকে ইংল্যান্ড শিবিরকে উল্লাসে মাতান। গোলটি দেখে মনে হয়েছে ঠিক এই মুহূর্তটির জন্য এবং এমন একটি গোলের জন্যই যেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ও পুরো ইংল্যান্ড দল এতক্ষন অপেক্ষায় ছিল।

স্মরণীয় এই গোল করা বেলিংহাম বলেছেন, ‘এই ধরনের অনুভূতির অন্য কোন কিছুর সাথে তুলনা হয় না। বাড়ি ফিরতে মাত্র ৩০ সেকেন্ড বাকি ছিল, চারিদিক থেকে হতাশাজনক সব মন্তব্য, মনে হচ্ছিল আমরা দেশকে খাটো করছি। ৩০ সেকেন্ডে একটি সঠিক কিক সবকিছু বদলে দিল।’

অতিরিক্ত সময়ে ইংল্যান্ড যেন আরো উজ্জীবিত হয়ে মাঠে নামে। তারই ধারাবাহিকতায় ৯১ মিনিটে বদলী খেলোয়াড় টনির ক্রস থেকে কেনের শক্তিশালী হেডে ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত হয়।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

14 + twelve =