নেদারল্যান্ডসকে কাঁদিয়ে ইউরোর ফাইনালে ইংল্যান্ড

বদলী খেলোয়াড় ওলি ওয়াটকিন্সের ইনজুরি টাইমের দুর্দান্ত গোলে নেদারল্যান্ডসকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মত ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ইংল্যান্ড।

যদিও ম্যাচের শুরুটা গ্যারেথ সাউথগেটের দলের মোটেই ভাল হয়নি। জাভি সিমন্সের গোলে ডর্টমুন্ডের সেমিফাইনালে শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে ইংল্যান্ড। তবে হ্যারি কেনের পেনাল্টিতে দ্রুতই সমতায় ফিরে ইংলিশরা। ভিএআর’র জার্মান রেফারি ফেলিক্স জয়ারের সিদ্ধান্তে পেনাল্টি উপহার পায় ইংল্যান্ড। ওয়াটকিন্সের গোলের আগ পর্যন্ত ম্যাচটি অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো সময়ের ব্যপার হয়ে গিয়েছিল।

কেনের পরিবর্তে ৮১ মিনিটে মাঠে নামা ওয়াটকিন্স আরেক বদলী খেলোয়াড় কোল পালমারের কাছ থেকে বল পেয়ে স্টপেজ টাইমের প্রথম মিনিটে গোল করে ইংল্যান্ডকে ফাইনালের টিকেট উপহার দেন। গোল হজম করে স্টেডিয়াম ভর্তি কমলা সমর্থকরা নিস্তব্ধ হয়ে যায়।

এ্যাস্টন ভিলা স্ট্রাইকার ওয়াকিন্স বলেছেন, ‘আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এ ধরনের অনুভূতি আমার আগে কখনই হয়নি। অবশ্যই এটা আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম বিশেষ এক মুহূর্ত।’

সাউথগেটের দলের জন্য এটা অবশ্যই দারুন এক জয় ছিল। তিন বছর আগে ইউরোর ফাইনালে ইতালির কাছে পরাজিত হবার হতাশা কাটিয়ে ১৯৯৬ সালের পর প্রথমবারের মত বড় কোন শিরোপার সুযোগ এবার আর কোনমতেই হাতছাড়া করতে চাইবে না কেন-বেলিংহামরা।

কিন্তু সেটা করতে হলে জার্মানিতে এ পর্যন্ত খেলা সবকিছুকে তাদের ছাপিয়ে যেতে হবে। কারন ফাইনালে প্রতিপক্ষ দলটার নাম স্পেন, এ পর্যন্ত প্রতিটি ম্যাচে দাপুটে জয়ে যে দলটি দারুন ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে। সেমিফাইনালে ফেবারিট ফ্রান্সকে ২-১ গোলে পরাজিত করে যোগ্য দল হিসেবেই ফ্রান্স ফাইনাল নিশ্চিত করেছে।

ইংলিশ বস সাউথগেট বলেন, ‘আমরা এমন একটি দলের বিপক্ষে ফাইনাল খেলতে যাচ্ছি যারা টুর্নমেন্টের সেরা দল। তার উপর প্রস্তুতির জন্য আমরা একদিন সময় কম পাচ্ছি। সে কারনে কাজটা অনেক কঠিন। কিন্তু এখনো আমরা এখানে টিকে আছি এবং লড়াইয়ে আছি।’

১৯৮৮ সালে সর্বশেষ জার্মানীতে অনুষ্ঠিত ইউরোতে শিরোপা জিতেছিল মার্কো ফন বাস্তেন, রুড গুলিতের নেদারল্যান্ডস। সেই একই আশা নিয়ে এবার মাঠে নেমেছিলেন কোডি গাকপো, মেমফিস ডিপে, ভার্জিল ফন ডাইকরা। এই ম্যাচে জয়ী হতে পারলেও ২০১০ বিশ^কাপের পুনরাবৃত্তি দেখতে পারতো ফুটবল বিশ^। কিন্তু তার পরিবর্তে ডাচদের বাড়ি ফেরার ফিরতি প্লেন ধরতে হচ্ছে।

নেদারল্যান্ডস কোচ রোনাল্ড কোম্যান বলেছেন, ‘এই ফলাফলে আমি সত্যিই হতাশ। যে ম্যাচটি দারুনভাবে শুরু হয়েছিল তার এমন শেষটা দেখতে চাইনি। দারুন এক গোলের পর সব শেষ। এটা মেনে নেয়া সত্যিই কঠিন।’

শেষ চারটি ম্যাচের কোনটিতেই নির্ধারিত ৯০ মিনিটে জয়ী না হয়ে ফাইনাল পর্যন্ত গেছে ইংল্যান্ড। এর মধ্যে স্লোভাকিয়া ও সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে নক আউট পর্বের আগের দুটি ম্যাচই খেলেছে অতিরিক্ত সময়ে। আর এটাই ডাচদের শারিরীক ভাবে কিছুটা হলেও এগিয় রেখেছিল। গ্রুপের তৃতীয় স্থান পেয়ে নক আউট পর্বে এসে তারা রোমানিয়া ও তুরষ্ককে পাত্তাই দেয়নি। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে কাল রক্ষনভাগে মার্ক গুয়েহিকে স্বাগত জানিয়েছিল ইংল্যান্ড। কোম্যান আক্রমনভাগে তারকা ফরোয়ার্ড ডোনিয়েল মোলেনকে ফিরিয়েছিলেন। এই মাঠেই ক্লাব ফুটবলে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে মালেনের।

ম্যাচের ৭ মিনিটে সিমন্সের দুর্দান্ত গোলে এগিয়ে যায় নেদারল্যান্ডস। ৩৫ মিটার দুর থেকে ডিক্লান রাইসকে কাটিয়ে অসাধারণ ভলি তিনি জর্ডান পিকফোর্ডকে পরাস্ত করেন। ডাচ খেলোয়াড়রা এই গোলের পরপরই দৌড়ে স্ট্যান্ডের দিকে গিয়ে সমর্থকদের কাছে গিয়ে গোল উদযাপন করেন। টানা তৃতীয় ম্যাচে পিছিয়ে পড়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা পায় ইংল্যান্ড। কোয়ার্টার ফাইনালে সুইসদের বিপক্ষে যা হয়েছিল ঠিক সেভাবে দ্রুতই সমতায় ফিরে ইংলিশরা। কেনের একটি শট রুখে দেন বার্ট ভারব্রাগেন। পরের মুহূর্তে তার ভলি বারের উপর দিয়ে চলে যায়। কিন্তু এই ভলির আগে ডেনজেল ড্রামফ্রাইস তার গতিরোধ করেছিলেন। কিন্তু বিষয়টি ভিএআর’র চোখ এড়াতে পারেনি। রিভিউতে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন জয়ার। ২০২২ বিশ্বকাপে ফ্রান্সের বিপক্ষে কেনের পেনাল্টি মিসে ইংল্যান্ড বিদায় নিয়েছিল। এবার আর সেই ভুল করেননি ইংলিশ অধিনায়ক। জোড়ালো শটে তিনি দলকে সমতায় ফেরান।

এরপর ম্যাচটি দারুন উপভোগ্য হয়ে ওঠে। আক্রমন পাল্টা আক্রমনে দুই দলই এগিয়ে যাবার সুযোগ খুঁজতে থাকে। ফিল ফোডেনের শট শেষ মুহূর্তে লাইনের উপর থেকে ক্লিয়ার করেন ডামফ্রাইস। সিমন্সের কর্ণার থেকে ডামফ্রাইসের হেড বারে ক্রসবারে লেগে বাইরে চলে যায়। ফোডের দারুন এক কার্লিং শট বারে লেগে ফেরত আসে। মেমফিস ডিপের ইনজুরিতে ফরোয়ার্ড জো ভারমানকে মাঠে নামান কোম্যান।

বিরতির পর মালেসের স্থলাভিষিক্ত হন ওট উইগর্স্ট। ৬৫ মিটি ভার্জিল ফন ডাইককে হতাশ করেন পিকফোর্ড। ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়রা কিছুটা পরিশ্রান্ত হয়ে গেলে নেদারল্যান্ডস ম্যাচের নিয়ন্ত্রন নেয়। কাইল ওয়াকারের কাটব্যাক থেকে বুকায়ো সাকা ৭৯ মিনিট বল জালে জড়ালেও অফসাইডের কারনে তা বাতিল হয়ে যায়। এরপর সাউথগেট ফোডেন ও কেনকে উঠিয়ে নেবার সিদ্ধান্ত নেন। তাদের পরিবর্তে মাঠে নামা ওয়াটকিন্স ও পালমারই শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

nineteen + fifteen =