ম্যাক্সিমিলিয়ান ওবারের আত্মঘাতি গোলে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে জয় দিয়ে ইউরো যাত্রা শুরু করেছে ফেবারিট ফ্রান্স। ম্যাচের একবারে শেষ মুহূর্তে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় কেভিন দানসোর সাথে সংঘর্ষে নাকের হাড় ভেঙ্গেছে কিলিয়ান এমবাপ্পের।
বিরতির সাত মিনিট আগে এমবাপ্পের কাটব্যাক ক্লিয়ার করতে গেলে ওবার নিজের জালেই বল চড়ান। অস্ট্রিয়ার কঠিন প্রতিরোধের মুখে এই ব্যবধান আর বাড়াতে পারেনি বিশ^কাপের রানার্স-আপ দল ফ্রান্স।
সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ রাল্ফ রাংনিকের অধীনে অনেকটাই বদলে যাওয়া অস্ট্রিয়া কাল দারুন ছন্দে ছিল। তারকা সমৃদ্ধ ফ্রান্সকে তারা কোন ছাড়ই দেয়নি। ম্যাচের ৯০ মিনিটে হেড করতে গিয়ে দানসোর ঘাড়ে আঘাত লেগে এমবাপ্পের নাক থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। কোচ দিদিয়ে দেশ্যম আর কোন ঝুঁকি নেননি। সাথে সাথে দলের মূল তারকাকে উঠিয়ে নেন। পরবর্তীতে ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনের এক বিবৃতিতে এমবাপ্পের ইনজুরির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে এমবাপ্পের নাকে কোন ধরনের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন নেই বলে তারা জানিয়ছে।
এর আগে ম্যাচের পরপরই এ সম্পর্কে দেশ্যম বলেছিলেন, ‘তাকে দেখে খুব একটা ভাল মনে হয়নি। নাকে ভালই আঘাত লেগেছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। এটা আজকের ম্যাচে আমাদের সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা। এটা সত্যি যে আক্রমনভাগে আজ আমাদের আরো ভাল করা উচিৎ ছিল। কিন্তু তারপরও জয় দিয়ে শুরু করাটা দারুন বিষয়।’
এমবাপ্পের ইনজুরি ছাড়া এই জয়ে কিছুটা হলেও ফরাসি শিবিরে স্বস্তি ফিরে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ফুটবলের বাইরে পুরো দলকে দেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে বেশী দেখা গেছে। ফ্রান্সের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সম্প্রতি বেশ কিছু গণমাধ্যমে ফরাসি খেলোয়াড়দের সময় ব্যয় করা নিয়ে বেশ সমালোচনাও হয়েছে। কালকের ম্যাচে কোন ধরনের অঘটন হলে পুরো দলকে এর দায়ভার অবশ্যই নিতে হতো। একই সাথে ফুটবলকে ছেড়ে অন্য বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব নিয়ে সমালোচনাও শুনতে হতো।
এই জয়ে গ্রুপ-ডি’তে তিন পয়েন্ট নিয়ে নেদারল্যান্ডসের পরে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। রোববার প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডস ২-১ গোেল পোল্যান্ডকে পরাজিত করেছিল। আগামী শুক্রবার লিপজিগে নেদারল্যান্ডস ও ফ্রান্স মুখোমুখি হবে। একইদিন বার্লিনে অস্ট্রিয়ার প্রতিপক্ষ পোল্যান্ড।
রাংনিক বলেছেন, ‘এই ফলাফলে অবশ্যই আমরা হতাশ। ১০০ মিনিটে কোন ফরাসি খেলোয়াড় আমাদের গোল দিতে পারেনি। অথচ আত্মঘাতি গোলে আজ আমাদের পরাজয় বরণ করতে হলো। আমি মনে করি ম্যাচ শেষে দিদিয়ের দেশ্যম আজ দারুন খুশী হয়েছে। ফ্রান্সও দেখেছে আজ আমরা কতটা ভাল খেলেছি।’
এই টুর্নামেন্টে আসার আগে বেশ কিছু ম্যাচে অস্ট্রিয়া দারুন ফল করেছে। এবারের ইউরোতে বেশ কিছু মাঠের সাথে অস্ট্রিয়ার এই দলটি পরিচিত। রাংনিক জার্মানীর নাগরিক, এছাড়া এই দলের মুল একাদশে খেলা আটজন খেলোয়াড় গত মৌসুমে জার্মান বুন্দেসলিগায় খেলেছে। যে কারনে তারা স্বাচ্ছন্দ্যেই এবারের ইউরোর সাথে মানিয়ে নিতে পারবে।
এদিকে এবারের টুর্নামেন্টে খেলতে আসা দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রতিভাবান দল হিসেবে ফ্রান্সের নামই সবাই একবাক্যে স্বীকার করবে। ২০২১ সালের ইউরোতে ফ্রান্স অধিনায়ক এমবাপ্পের সময়টা মোটেই ভাল যায়নি। একটি গোলও তিনি করতে পারেননি, উল্টো শেষ ষোলতে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে তার পেনাল্টি মিসেই ফ্রান্স বিদায় নিয়েছিল। রিয়াল মাদ্রিদে সদ্য যোগ দেয়া এমবাপ্পে কালও কোন গোল করতে পারেননি।
আট মিনিটে তিনি প্রথম বড় সুযোগটি পেয়েছিলেন। আঁতোয়ান গ্রীজম্যান ও থিও হার্নান্দেজ মিলে এমবাপ্পের দিকে বল বাড়িয়ে দেন। বাম দিক থেকে এগিয়ে আসা এমবাপ্পে সেই পাসে শট নিলেও তার পোস্টের অল্প বাইরে দিয়ে চলে যায়। অস্ট্রিয়া গোলরক্ষক প্যাট্রিক পেনটেজ এরপর ফ্রান্সের কয়েকটি আক্রমন রক্ষা করেছেন। ৩৬ মিনিটে অস্ট্রিয়া এগিয়ে যাবার দারুন এক সুযোগ পেয়েছিল। বামদিক থেকে মিখায়েল গ্রেগোরিশের ক্রস অধিনায়ক মার্সেল সাবিটাইজার কাজে লাগাতে পারেননি। দুই মিনিট পর ওসমানে ডেম্বেলে এমবাপ্পের দিকে বল বাড়িয়ে দেন। এমবাপ্পের কোনাকুনি ভাবে শট নিলে দূর্ভাগ্যবশত ওবার তার নিজের জালেই বল জড়ান। প্রথমার্ধের স্টপেজ টাইমে এমবাপ্পে পেনটেজকে পরীক্ষায় ফেলেছিলেন।
দ্বিতীয়ার্ধে ফ্রান্স বেশ কিছু আক্রমন করেও ব্যবধান বাড়াতে পারেনি। আদ্রিয়েন রাবোয়িতের এ্যাসিস্টে অস্ট্রিয়ান রক্ষনভাগ ভেঙ্গে গোলরক্ষককে একা পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি এমবাপ্পে।
বাসস