সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ২৮ বছরের মধ্যে প্রথম বড় কোন টুর্নামেন্টে জয়ের একেবারে কাছাকাছি গিয়ে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে স্কটল্যান্ড। কিন্তু দারুন সাহসী পারফরমেন্স দেখিয়ে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী সুইসদের সাথে ১-১ গোলের ড্রয়ের মাধ্যমে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে নক আউট পর্বের আশা টিকিয়ে রেখেছে স্কটিশরা।
স্টিভ ক্লার্কের দল মিউনিখে উদ্বোধনী দিনে স্বাগতিক জার্মানির কাছে ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত হবার মধ্য দিয়ে ইউরোর যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু কোলনে কাল সুইসদের বিপক্ষে অনেক বেশী পরিনত ম্যাচ উপহার দিয়েছে স্কটল্যান্ড। অভিজ্ঞতা ও শক্তিতে পিছিয়ে থাকলেও কাল এগিয়ে গিয়েছিল স্কটিশরাই। বাছাইপর্বে দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের স্কট ম্যাকটোমিনে ১৩ মিনিটে কাউন্টার এ্যাটাক থেকে কালুম ম্যাকগ্রেগরের কাট-ব্যাক থেকে দারুন এক গোলে স্কটল্যান্ডকে এগিয়ে দেন।
যদিও এই লিড বেশীক্ষন ধরে রাখতে পারেনি। ২৬ মিনিটে এন্থনি রালস্টোনের ভুলে জিহার্দান শাকিরি সুইজারল্যান্ডকে ম্যাচে ফেরান। এই একটি ঘটনায় গতকাল রক্ষনভাগে স্কটল্যান্ডকে কিছুটা এলেমেলো মনে হয়েছে। এছাড়া পুরো ম্যাচে তাদের মধ্যে যে ধরনের গতি ও দৃঢ়তা লক্ষ্য করা গেছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। জার্মানির বিপক্ষে যে স্কটল্যান্ডকে সমর্থকরা দেখেছে তার থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন চিত্র ছিল কালকের ম্যাচে।
ম্যাচ শেষে স্কটিশ কোচ ক্লার্ক বলেছেন, ‘আমি মনে করি এটি ভাল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এটি একটি ভাল দলীয় পারফরমেন্স। হতাশাজনক শুরুর পর এভাবে ফিরে আসা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। এখনো আমরা টুর্ণামেন্টে টিকে আছি।’
অভিজ্ঞ রায়ান ক্রিস্টির স্থানে বিলি গিলমোলকে খেলানোর ক্লার্কের সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত কাজে এসেছে। জার্মানির বিপক্ষে ক্রিস্টিকে মধ্যমাঠে কিছুটা এলেমেলো মনে হয়েছিল। ২৩ বছর বয়সী গিলমোর প্রসঙ্গে ক্লার্ক বলেছেন, ‘সে একজন দুর্দান্ত প্রতিভাবান খেলোয়াড়। দ্বিতীয় ম্যাচে বিলিকে মাঠে নামানোর পরিকল্পনা আমার সবসময়ই থাকে। আজও সে আমার আস্থার প্রতিদান দিয়েছে। হতে পারে এজন্যই সে প্রথম ম্যাচে মাঠে ছিলনা। আমি জানি এই বয়সে ম্যাচের শেষ দিকে সে কিছুটা পরিশ্রান্ত হয়ে যাবে। কারন মধ্যমাঠে তার কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হয়।’
নাম্বার টেন জার্সি পড়ে মাঠে নামা ম্যাকটোমিনের উপস্থিতিও সুইসদের বেশ সমস্যায় ফেলেছিল। সুইজারল্যান্ড ম্যাচে বেশ কছিু সুযোগ হাতছাড়া করেছে। এতে স্কটিশদের ভাগ্য খুলে যায়। ড্যান এনডোয়ে একটি দারুন সুযোগ নষ্ট করেন। ব্রিল এমব্রোলো বল জালে জড়ালেও অল্পের জন্য অফসাইডের কারনে তা বাতিল হয়ে যায়। ম্যাচের একেবারে শেষ ভাগে আগের ম্যাচে লাল কার্ড পাওয়া রায়ান পোরটিয়াসের স্থানে খেলতে নামা গ্র্যান্ট হ্যানলের হেড পোস্টে না লাগলে স্কটল্যান্ড হয়তো জয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে পারতো।
৯৬’ ইউরোতে সুইজারল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারানোর পর স্কটল্যান্ড এ পর্যন্ত বড় কোন টুর্ণামেন্টে তাদের হারাতে পারেনি। যে কারনে কালকের ম্যাচে জয় না পাওয়া ছিল সত্যিই হতাশার। ২০২০ ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট সুইজারল্যান্ড শেষ পাঁচটি টুর্নামেন্টেই অন্তত শেষ ষোলতে খেলেছে। ফিফা বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের ৩৯তম স্থানে থাকা স্কটল্যান্ডের থেকে ২০ ধাপ উপরে অবস্থান করছেন সুইজারল্যান্ড।
আগামী রোববার গ্রুপ-এ’র শেষ ম্যাচে হাঙ্গেরির মোকাবেলা করবে স্কটল্যান্ড। এই ম্যাচে জয়ী হতে পারলে প্রথমবারের মত বড় কোন টুর্ণামেন্টে নক আউট পর্বে খেলা নিশ্চিত হবে স্কটিশদের। এর ফলে তাদের পয়েন্ট দাঁড়াবে ৪ এবং এতে অন্তত তৃতীয় স্থান নিশ্চিত হবে। বর্তমান ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপের ফরমেটে চার পয়েন্ট শেষ ষোলতে পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ঠ।
ক্লার্ক বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে চূড়ান্ত পর্বে ড্রয়ের সময় যখন আমরা স্বাগতিকদের বিপক্ষে একই গ্রুপে পড়েছি এবং প্রথম ম্যাচেই আমাদের জার্মানদের বিপক্ষে ম্যাচের সূচী দেখেছি তখনই অন্য দুটি ম্যাচের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আশা করেছি হয়তো এই দুটি ম্যাচ থেকে কিছু পয়েন্ট আসবে। এভাবেই আমরা ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি।’
এ নিয়ে স্কটল্যান্ড বিশ্বকাপ ও ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপে শেষ আটটি ম্যাচের সবকটিতেই জিততে ব্যর্থ হলো। ইউরোতে এ পর্যন্ত খেলা ৩৪টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র ছয়টিতে তারা জয়ী হয়েছে। হাঙ্গেরির বিপক্ষে এই পরিসংখ্যানকে অবশ্যই বাড়াতে হবে। তবে হাঙ্গেরির বিপক্ষে অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার কিয়েরান টিয়ারনিকে পাচ্ছেনা স্কটল্যান্ড। ক্লার্ক জানিয়েছে কালকের ম্যাচে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়েছেন টিয়ারনি, যে কারনে পরবর্তী ম্যাচে তার খেলা হচ্ছে না।
বাসস