ফ্রান্সকে বিদায় করে ফাইনালে স্পেন

টুর্নামেন্ট ফেবারিট ফ্রান্সকে ২-১ গোলে পরাজিত করে ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে উড়তে থাকা স্পেন। ১৬ বছর বয়সী স্প্যানিশ তরুণ লামিন ইয়ামাল ইউরোর ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে গোলের রেকর্ড গড়েছেন।

মিউনিখে সেমিফাইনালে কিলিয়ান এমবাপ্পের ক্রস থেকে ৯ মিনিটে রানডাল কোলা মুয়ানির হেডে এগিয়ে গিয়েছিল ফ্রান্স। কিন্তু চার মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করে স্পেন পুরো ম্যাচের চেহারা পাল্টে দেয়। এর আগে পাঁচ ম্যাচে মাত্র এক গোল হজম করা ফ্রান্সকে কোন প্রতিরোধই গড়ার সুযোগ দেননি ইয়ামাল, ডানি ওলমোরা।

আগামী রোববার  ফাইনালের আগেরদিন ১৭ বছরে পা রাখতে যাওয়া ইয়ামাল ২১ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক কোনাকুনি শটে বল জালে জড়ান। ডাইভ দিয়েও এই বল ধরতে ব্যর্থ হন ফরাসি গোলরক্ষক মাইক মেইগন্যান। চার মিনিটর পর আরেক তরুণ তুর্কি ডানি ওলমো লো শটে বল জালে জড়ান। মেইগন্যান পরাস্ত হলেও শেষ খেলোয়াড় হিসেবে জুলেস কুন্ডের ডিফ্লেকশনে বল জালে প্রবেশ করে।

দুর্দান্ত স্ট্রাইক প্রসঙ্গে ইয়ামাল বলেন, ‘আমি বলটি দারুন জায়গায় পেয়েছিলাম। ঐ সময় খুব বেশী চিন্তা করিনি, শট নিয়ে নেই। ফাইনালে খেলতে পেরে আমি দারুন গর্বিত। এই মুহূর্তগুলো প্রাণভরে উপভোগ করতে চাই।’

তিনবারের চ্যাম্পিয়ন স্পেন ইউরোর ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে টানা ছয় ম্যাচে জয় নিশ্চিত করেছে। রেকর্ড ভঙ্গকারী চতুর্থ শিরোপার পথে তাদের সামনে আর মাত্র একটি ম্যাচ বাকি রয়েছে।

ম্যাচের আরেক গোলদাতা ওলমো বলেছেন, ‘শিরোপা হাতে নিতে আর মাত্র একধাপ বাকি আছে। আমরা খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। এই দলটি অবিশ^াস্য। এটা আমাদের প্রাপ্য ছিল।’

২০১২ ইউরোর ফাইনালে ইতালিকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে শিরোপা জয়ের পর বড় কোন টুর্ণামেন্টে এটাই স্পেনের প্রথম ফাইনাল ম্যাচ হতে যাচ্ছে।

ম্যাচ পরিকল্পনায় মধ্যমাঠের মাস্টার হিসেবে পরিচিরত স্পেন লিড নেবার পর থেকে ফ্রান্সকে আর দাঁড়াতেই দেয়নি। বারবার পজিশন নিজেদের করে নিয়েছে, কাউন্টার এ্যাটাক থেকে ফ্রান্সের রক্ষনভাগকে ব্যস্ত রেখেছে। যোগ্য দল হিসেবেই কাল তারা জয় আদায় করে নিয়েছে।

ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশ্যম বলেছেন, ‘স্পেন দুর্দান্ত একটি দল। আমরা সেটা জানতাম, আজ রাতে তারা আবারও তার প্রমান দিল। এমনকি প্রথমে আমরা গোল দিয়েও তা সেটা ধরে রাখতে  পারিনি। আমাদের থেকে ভালভাবে ম্যাচের নিয়ন্ত্রন স্পেন নিয়ে নিয়েছিল, যে কারনে আমাদের খেলতে সমস্যা হয়েছে।’

আগের চারটি বড় টুর্নামেন্টের তিনটি ফাইনালে খেলা ফ্রান্সের আক্রমনভাগ পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড এমবাপ্পে পুরো আসরেই ছিল ম্রিয়মান। অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে নাক ভেঙ্গে যাওয়ায় মাস্ক পড়ে আগের ম্যাচগুলো খেললেও কাল সেটা ছিলনা। কিন্তু তারপরও এমবাপ্পের স্বাভাবিক খেলা চোখে পড়েনি। রিয়াল মাদ্রিদের এই স্ট্রাইকার ইউরোর ক্যারিয়ারে নয় ম্যাচে মাত্র এক গোল করেছেন। পোল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রু পর্বে ১-১ গোলের ড্রয়ের ম্যাচটিতে করা ঐ গোলটিও ছিল স্পট কিক থেকে।

সেমিফাইনালের পথে ফ্রান্স জার্মানির মাটিতে মাত্র তিন গোল করেছেন। কিন্তু কোন গোলই ওপেন প্লেতে হয়নি। এর মধ্যে দুটি গোল ছিল আবার আত্মঘাতি। দেশ্যম যে কারনে অভিজ্ঞ আঁতোয়ান  গ্রিজম্যানের পরিবর্তে মূল দলে ডেকেছিলেন ওসমানে ডেম্বেলেকে। চার মিনিটে ইয়ামাল প্রথম সুযোগ তৈরী করেন। তার কার্লিং ক্রসে ফাবিয়ান রুইজের হেড অল্পের জন্য ক্রসবারের উপর দিয়ে চলে যায়। চার মিনিটর পর বাম দিক থেকে এমবাপ্পের ক্রসে কোলো মুয়ানির হেড অবশ্য ধরতে পারেননি স্প্যানিশ গোলরক্ষক উনাই সাইমন। নিষেধাজ্ঞায় থাকা ডানি কারভাহাল ও রবিন লি নরমান্ডের স্থানে কাল মূল দলে খেলেছেন অভিজ্ঞ জেসুস নাভাস (৩৮) ও নাচো (৩৪)। কোলো মুয়ানির প্রথম গোলের জন্য তরুণ অমারিক লাপোর্তে ও মার্ক কুকুরেলাকে দায়ী করা যায়।

ফ্রান্সের স্ট্রাইকাররা পুরো টুর্নামেন্টেই নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। বিশেষ করে বার্সেলোনার তরুণ ইয়ামাল নিজেকে যে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তাতে অনেকেই তাকে ভবিষ্যতের সুপারস্টারের তকমা দিয়ে দিয়েছেন। যেভাবে তিনি বক্সের বাইরে থেকে বল নিয়ন্ত্রনে নিয়ে কোন চিন্তা না করেই পোস্টের দিকে তাকিয়ে শটটি করেছেন তাতে বল জালে জড়ানোর আগেই অনেক স্প্যানিশ সমর্থক উল্লাস শুরু করে দিয়েছিল।  ইতোমধ্যেই ইউরোতে তিনটি এ্যাসিস্ট করা ইয়ামালের শুধু স্কোর করাটাই বাকি ছিল। চার মিনিটর পর ওলমোর গোলে এগিয়ে যায় স্পেন। ডিফেন্ডারদের মধ্য থেকে ওলমোর জোড়ালো শট শেষ মুহূর্তে কুন্ডের ডিফ্লেকশন হয়ে জালে জড়ায়। ম্যাচ শেষের পাঁচ মিনিট আগে গোলরক্ষক উনাই সাইমনকে একা পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি ফরাসি অধিনায়ক এমবাপ্পে।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

four × five =