সুরমার পানি বিপদসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত

ব্যাপক পাহাড়ি ঢল ও শিলাবৃষ্টিতে ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জ জেলায় শুরু হয়েছে বন্যা। মঙ্গলবার (১৮ জুন) দুপুর ১২ টায় সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে বিপদ সীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ও ছাতক উপজেলায় ১৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

ভারতের মেঘালয়-চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী সদর উপজেলার বনগাঁও নখরিয়া ছড়া সীমান্ত নদী,ধোপাজান চলতি নদী,তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা ও পাটলাই নদী এবং দোয়ারাবাজার উপজেলার খাসিয়ামারা, চিলাই ও ছেলা নদী দিয়ে পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুতবেগে প্রবাহিত হয়ে জেলার প্রধান নদী সুরমা কালনী ও কুশিয়ারা কানায় কানায় ভরপুর হয়ে ভাটির জনপদে এই স্বল্প মেয়াদী বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে সিলেট জেলার বন্যার পানি ছাতক উপজেলায় আঘাত হেনে জেলার অন্যতম দেখার হাওর ও জাউয়ার হাওর অতিক্রম করে সুনামগঞ্জ শহরকে প্লাবিত করে চলেছে।

সুনামগঞ্জ পৌরসভার, আফতাবনগর, পাটানবাড়ি, ওয়েজখালী, গনিপুর, কালিপুর, মোক্তারপাড়া, মধ্যবাজার, পশ্চিমবাজার, পূর্ব সুলতানপুর, মল্লিকপুর, জামতলা, মরাটিলা, কাজিরপয়েন্ট, ধারারগাঁও, মোহাম্মদপুর, নবীনগর,উত্তর আরপিননগর, তেঘরিয়া, নতুনপাড়াসহ বর্ধিত পৌর এলাকার প্রায় আড়াই সহস্রাধিক বাসাবাড়িতে পানি উঠেছে। সকাল থেকে শহরের কাজিরপয়েন্ট, তেঘরিয়া, পূর্ব সুলতানপুর ও নতুনপাড়াসহ প্রায় ২৫টি আবাসিক এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আহমদ নুর।

বৃষ্টির পানি পাহাড়ী নদী দিয়ে এপারে নামায় জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের পাশ দিয়ে প্রবাহিত খাসিয়ামারা নদীর বেড়ি বাঁধ ও বোগলাবাজার ইউনিয়নের চিলাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে আশপাশের ৫০টি গ্রাম ও সড়ক প্লাবিত হয়ে প্রায় লাখো মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। ইতিমধ্যে বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে জগন্নাথপুর উপজেলার নীচু এলাকা। সুনামগঞ্জ বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার একমাত্র ১০০ মিটার সংযোগ সড়কটিতে পানি উঠে যাওয়ায় গত তিনদিন ধরে জেলা সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন রয়েছে। সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ডলুরা সড়কটি প্লাবিত হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।

সীমান্তের ওপার মেঘালয় চেরাপুঞ্জিতে গেল চারদিন ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে। গেল ৪৮ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে ৩৬৫ মিলিমিটার এবং সীমান্তের ওপারে হয়েছে ৪৪১ মিলিমিটার।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, আমার বাসায় পানি উঠেছে। আমি অফিসিয়াল কাগজপত্র ও আসবাবপত্র দোতালায় তুলে নিচ্ছি। ঈদুল ফিতরের দিনে দোয়ারাবাজার উপজেলায় ত্রাণ তৎপরতায় ব্যস্ত ছিলাম। তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যা শুরু হয়েছে আমি উপর মহলকে জানিয়েছি। সকলকে ধৈর্য্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সবিনয় অনুরোধ করছি।

সুনামগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, বিপদসীমা অতিক্রম করে নদীর পানি আরও বাড়ছে। সকলে দ্রুত  নিরাপদ ও উচু স্থানে আশ্রয় নিয়ে শুকনো খাবার,সুপেয় পানি ও মোমবাতি যাতে সঙ্গে রাখেন এবং শিশু বয়স্ক ও গর্ভবতী নারীদের ব্যাপারে যাতে সতর্ক থাকেন আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দুর্গত মানুষকে সে পরামর্শ দিচ্ছি। এবং বন্যা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মানুষের পাশে থাকার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য ব্যারিস্টার এম এনামুল কবীর ইমন ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা ফজলে রাব্বী স্মরণ,ঈদুল ফিতরের দিন থেকেই দূর্গত মানুষের পাশে থেকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে যাচ্ছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন,সুরমা কালনী ও কুশিয়ারার পানি মেঘনা নদীতে গিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কিছুটা দুর্ভোগ বাড়বে। তবে আগামী তিনদিনের মধ্যে পানি স্থির হয়ে ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে পারে। তিনি বড় ধরনের বন্যা হবেনা বলে সকলকে সতর্ক করে বর্তমান পরিস্থিতি ধৈর্য্যে সাথে মোকাবেলা করার আহবান জানান।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

6 + 13 =