সালেক সুফী
অনেক আশা-নিরাশা, সাফল্য-ব্যর্থতার দোলায় দুলে ২০ জাতির টি২০ বিশ্বকাপ এখন ৪ দলের সেমি ফাইনালে উন্নীত হয়েছে। একটি গ্রুপ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ড এবং অন্যগ্রুপ থেকে ভারত ও বিশ্বাস করুন আফগানিস্তান উত্তীর্ণ হয়েছে সেমি ফাইনালে।
প্রথম রাউন্ড থেকে নিউ জিল্যান্ড, পাকিস্তান এবং শ্রীলংকা বিদায় নেওয়ার পর দ্বিতীয় রাউন্ড শেষে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেই এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম হট ফেভারিট দুটি দল অস্ট্রেলিয়া এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
আজ শেষ হওয়া দ্বিতীয় রাউন্ডে বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের মধ্যে অনুষ্ঠিত খেলার আগে সমীকরণ এমন ছিল যে অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ থেকে যেকোনো একটি দেশ সেমি ফাইনালে যেতে পারে।
আফগানিস্তান দল প্রথমে ব্যাটিং করে ১১৫/৫ রান সংগ্রহ করলে বাংলাদেশের দ্রুত ম্যাচ জিতে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন মাইলফলক স্থাপনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কিন্তু আফসোস ১৭.৫ ওভারে ১০৫ রান করা বাংলাদেশ না পেরেছে ম্যাচ নির্ধারিত ওভারে জয় করতে, না পেরেছে পরাজয় এড়াতে।
বাংলাদেশকে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ৮ রানে পরাজিত করে আফগানিস্তান নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে সাফল্যের নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে। ২৭ তারিখ ভারত সেমি ফাইনালে মোকাবিলা করবে ইংল্যান্ডকে, অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকাকে মোকাবিলা করবে আফগানিস্তান। বলতেই হবে এই বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের অব্যাহত সাফল্য রুপকথাকেও ছাড়িয়ে গেছে।
আজ সকালে মিশ্র সম্ভাবনার সমীকরণ নিয়ে বিশ্বজোড়া ক্রিকেট অনুরাগীরা নানা মাধ্যমে খেলা দেখতে শুরু করেছিল। আফগানিস্তান আগের ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করেছিল। এই টুর্নামেন্টে এর আগে গ্রুপ পর্যায়ে নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে বিদায় করেছিল আফগানিস্তান।
বাংলাদেশ প্রথম রাউন্ডে ৩টি ম্যাচ জয় এবং চতুর্থটি সামান্য ব্যবধানে হেরে বিশ্বজোড়া বাংলাদেশিদের স্বপ্নের পরিধি আকাশ ছোঁয়া করেছিল। দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম দুই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের সঙ্গে পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশ। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে হারলেও অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেয় আফগানিস্তান।
আজ কিংস্টন ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামের কঠিন উইকেটে টস জয় করে ব্যাটিং করা আফগানিস্তান উজ্জীবিত বাংলাদেশের ভালো বোলিং এবং তুখোড় ফিল্ডিংয়ের মুখে সংগ্রাম করে পৌঁছাতে পারে ১১৫/৫ রানে।
অমনি বাংলাদেশের অনুরাগীদের স্বপ্ন বাসনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। সাতক্ষীরা থেকে সুন্দরবন যাত্রাপথে আমরা সারাক্ষণ ডিজিটাল ডিভাইসে খেলাটি নিবিড় আগ্রহে দেখতে থাকি। স্বপ্ন দেখি টাইগার বাহিনী বাংলাদেশের জয় আমরা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের অভয়ারণ্য সুন্দরবনে উপভোগ করবো।
স্বপ্ন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেও আফগান দলের তুখোড় বোলিং মোকাবিলায় বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচটি ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ৮ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। প্রকৃতির বিচারে এই টুর্নামেন্টে অনেক ভালো খেলা আফগানিস্তান যোগ্যতর দল হিসেবেই পেয়েছে সেমি ফাইনাল খেলার অধিকার।
বাংলাদেশকে তৃপ্ত থাকতে হয়েছে দ্বিতীয় রাউন্ড খেলার সান্তনা নিয়ে। সত্যি বলতে কি টুর্নামেন্ট জুড়ে যেভাবে ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ তাতে যতটুকু অর্জন সেটিই যথেষ্ট। বাংলাদেশ সেমি ফাইনাল খেলার যোগ্য ছিল না।
আজকের আফগানিস্তানের জয়ে ব্যাট হাতে ভূমিকা রেখেছে শুরুতে গুরবাজ (৪৩), শেষ দিকে রশিদ খান ( ১৯*)। বল নিয়ে দুর্ধর্ষ ছিল রশিদ খান (৪/২৩) এবং নাভিন উল হক (৪/২৬)।
বাংলাদেশের হয়ে ভালো বোলিং করেছে রিশাদ হোসেন (৩/২৬)। লিটন দাস শুরু থেকে শেষ অবধি উইকেটে থেকে অপরাজিত ৫৪ রান করলেও কেউ তার পাশে দাঁড়াতেই পারেনি। বিশেষ করে দুই বর্ষীয়ান সাকিব (গোল্ডেন ডাক) এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৬) ছিল হতাশার চূড়ান্ত রূপ।
আফগানিস্তান দলকে টুপি খোলা অভিনন্দন। সেমি ফাইনাল বাধা পেরিয়ে আফগানিস্তান ফাইনাল খেললেও বিস্মিত হবো না।