মানুষ প্রতিনিয়ত ছুটে চলে জীবনের তাগিদে। তবে দিনশেষে তাকে ঘরেই ফিরতে হয়। এখানেই আশ্রয় নিতে হয় সব ক্লান্তি দূর করতে। ঘরবাড়ি যদি আরামের না হয় বলা চলে সব শান্তির সন্ধানই বৃথা। তাই চেষ্টা করতে হবে সাধ্যের মধেই নিজের আবাসটুকু মনের মতো করে সাজিয়ে-গুজিয়ে নিতে। বিশেষ করে সময়টা যখন গ্রীষ্মের তখন ঘরবাড়ির অন্দরসজ্জাতে বিশেষ নজর রাখা উচিত। লিখেছেন হিমু আহমেদ
ঘর হালকা রাখুন
গরমে প্রথমেই মাথায় রাখুন ঘরবাড়ি যতোটা সম্ভব হালকা রাখতে। শীতে ব্যবহার করা কাপড় চোপড়, লেপ-কম্বল ও কাঁথাগুলো রোদে দিয়ে ঝেড়ে তুলে রাখুন। নইলে একদিকে যেমন শীত নিবারণের এসব অনুষঙ্গ ঘরের জায়গা নষ্ট করবে এবং ঘরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেবে অন্যদিকে নষ্টও হবে।
ঘরে নতুনত্ব
নতুন কিছু সবসময়ই আমাদের মনকে আনন্দ। ঘরেও আনন্দ খুঁজে পেতে পারেন গরম উপলক্ষ্যে এর ভেতরের সাজসজ্জায় কিছু পরিবর্তন আনলে। যেমন বাসার পর্দাগুলো বদলে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে সাদা বা হালকা রঙের উপর মনযোগ দিন। ঘরের বিছানা-বালিশের রঙেও হালকা রঙকে প্রাধান্য দিন। যদি পর্যাপ্ত জায়গা থাকে তবে বদলে নিতে পারেন আসবাবের জায়গাগুলো। দেখবেন ঘরটাকে অচেনা লাগছে। যা আপনাকে একটা রোমাঞ্চ দেবে। আসবাবগুলো এমনভাবে সেট করুন যেন দরজা জানালাগুলো খোলামেলা থাকে। বাতাস চলাচলে সমস্যা না হয়।
কম খরচে ঘরের সাজ
অনেকেই ঘর সাজাতে হবে শুনলেই আঁৎকে উঠেন অনেক খরচের কথা ভেবে। কিন্তু ঘর সাজানো মানেই অনেক খরচ নয়। স্বল্প খরচেই সাজিয়ে তুলতে পারেন আপনার ঘরের পরিবেশ। একটুখানি বুদ্ধি খাটালে আপনার সাদামাটা ঘরটিও হয়ে উঠবে জমকালো। সেইসঙ্গে মিলবে আপনার রুচিশীলতার পরিচয়। জানা দরকার কিছু উপায়। যেমন কম খরচে দেয়াল সাজাতে ব্যবহার করতে পারেন ওয়ালপেপার। স্যান্ডস্টোন, রাস্টিক টাইলস, টেরাকোটা বা প্রাকৃতিক দৃশ্য সব ধরনের ওয়াল পাবেন বাজারে। ঘরের যে কোনো একটা দেয়ালে পছন্দমতো ওয়ালপেপার লাগিয়ে নিন। তবে গরমকে মাথায় রেখে রঙ নির্বাচন করুন।
ঘরে কিছুটা বৈচিত্র্য আনতে একটা কর্নার সাজাতে পারেন। গাছ, পটারি আর ল্যাম্পশেড দিয়ে। গাছ আর মাটি। দুটোই সহজলভ্য। একটা কর্নারে মাটির পটারিতে ছোট-বড় বিভিন্ন আকৃতির ইনডোর প্ল্যান্ট রাখুন। গাছের ফাঁকে ফাঁকে মাটির শোপিস দিন। একটা মাটির চাড়িতে পানি দিয়ে তাতে কিছু কচুরিপানা আর অ্যাকুয়ারিয়ামের মাছ ছেড়ে দিন। আর একটা স্পটলাইট। ঘরটা নিজের কাছেই অচেনা মনে হবে। কম খরচে ঘর সাজাতে দেশীয় উপকরণের জুড়ি নেই। এ ক্ষেত্রে ঘর সাজানোর খুব ভালো থিম হতে পারে বাঁশ। বাঁশের সোফা সহজলভ্য, দামেও সাশ্রয়ী। চাইলে ইচ্ছেমতো ডিজাইন দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন। জায়গা থাকলে বসার ঘরের একপাশে শীতল পাটি বিছিয়ে দিন। এর ওপর ফ্লোরিং করে বাড়তি বসার ব্যবস্থা করতে পারেন। ঘরের খালি দেয়ালে বাঁশের বেড়া ফ্রেম করে ঝুলিয়ে দিন। বাঁশের বাঁশি, একতারা কিংবা মাথাল সাজান বাঁশের বেড়ার সঙ্গে। কর্নারে একটা বাঁশের শেলফ করে তাতে দেশীয় উপকরণের শোপিস রাখুন।
ঘর ঠাণ্ডা রাখতে গাছ
গাছ দিয়ে ঘর সাজানোটা আজকাল খুবই কমন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এককালে নারীরা টাকা জমিয়ে নিজের সাজের অনুষঙ্গ কিনতো। আজকাল তারা নানা রকম গাছ কিনে এনে ঘরে বড় করছে। এই গাছ ঘরকে সুন্দর-সবুজ করে তুলে। পাশাপাশি ঘরে আনে দারুণ এক প্রশান্তি। তবে গাছ সম্পর্কে অনেক তথ্যই আমরা জানি না। কিছু গাছ আছে যা গরমে ঘরকে অতি সহজে ঠাণ্ডা রাখতে পারে। জেনে নিন তেমন কিছু গাছ সম্পর্কে।
ছোট বট জাতীয় গাছ
বট উদ্ভিদ বাতাসকে শীতল এবং আর্দ্র রাখে। এই গাছ যেখানে লাগানো হয় সেই পার্শ্ববর্তী এলাকায় আর্দ্রতার পরিমাণও বাড়ে। সেজন্য বটগাছকে কেন্দ্র করে কালে কালে অনেক বাজার, মঠ-মন্দির গড়ে উঠেছে। আপনি চেষ্টা করুন বারান্দায়, ঘরের ভেতরে বিছানার আশপাশে ছোট বট জাতীয় কোনো গাছ লাগাতে পারেন কিনা।
মানি প্ল্যান্ট
মানি প্ল্যান্ট অনেকের প্রিয় গাছ। এই গাছ তেমন রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয় না। গরমে ঘর ঠাণ্ডা রাখার জন্য এ গাছের জুড়ি নেই। আপনিও যোগাড় করে নিন।
অ্যালোভেরা
ত্বক ও চুলের যত্নে অ্যালোভেরার জেল অনেক উপকারী। অ্যালোভেরা পাতায় পানির পরিমাণ প্রচুর। তাই এই গাছ ঘরও ঠাণ্ডা রাখে।
রাবার ফিগ
রাবার ফিগ গাছটি বাতাস থেকে বিষাক্ত পদার্থ টেনে নেয়। এছাড়া ঘরের তাপমাত্রার ভারসাম্য বাড়ায়।
অ্যারিকা পাম
অ্যারিকা পাম গাছে অক্সিজেন উৎপাদন বৃদ্ধি করে। এই গাছ ঘর ঠাণ্ডা রাখে।
খেয়াল রাখুন
১. ঘর-বাড়ির সাজ-পোশাকের ক্ষেত্রে সবার আগেই মাথায় রাখতে হবে আপনার ফ্ল্যাটের আয়তন, আপনার প্রয়োজন, পছন্দ ও মেনটেনেন্স। সব হিসেব এক না হলে সাজাতে গিয়ে ঘরের সৌন্দর্যটা কদর্য হয়ে উঠতে পারে।
২. ফ্ল্যাট ছোট হলে ঝালর দেওয়া, স্যাটিনের ইলাবোরেট পর্দা, ফার দেওয়া সোফা একেবারেই বেমানান। যদি বেশ বড় হলঘর থাকে, সেখানে এমন পর্দা লাগাতে পারেন।
৩. আজকালকার মাঝারি মাপের ফ্ল্যাটের কথা মাথায় রেখে বলা যায়, ভাল কটন কিংবা খাদির পর্দা, সোফা কভার খুব ভাল। জুট-কটনও ব্যবহার করতে পারেন। আমাদের গ্রীষ্মপ্রধান দেশে সুতি চোখেরও আরাম বটে। তবে যতই অর্থের সাশ্রয় হোক না কেন, সিনথেটিক পরদা লাগাবেন না প্লিজ।
৪. গরমকালে মোটা ভারী পর্দা বহার করুন। গরমে ঘর অন্ধকার করতে চাইলে পর্দায় ইন্টারলাইনিং ব্যবহার করুন।
৫. সাদা মসলিনের পরদায় সারা ঘরে আলো বিচ্ছুরিত হতে সুবিধে হয়।
৬. পুরনো শাড়ি কেটেও বানিয়ে নিতে পারেন মনের মতো পর্দা। ফর্ম্যাল লুক চাইলে সিল্ক, ভেলভেট, স্যাটিন সিল্ক আদর্শ।
৭. সোফা কভারের জন্য অফহোয়াইট কাপড় বেছে নিলে রঙিন কুশন অ্যাড করতে ভুলবেন না। নিউট্রাল শেডের সঙ্গে রঙের সংযোজন ঘরকে উজ্জ্বল দেখায়। সাধারণ বেতের চেয়ারও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে যথাযথ কুশনের সম্মিলনে।
৮. যে ধরনের কাপড়ই বাছুন না কেন, কালার স্কিমটা ভেবে নেবেন। রঙেরঙে যুদ্ধ না লেগে যায়।
৯. খাবার টেবিলে টেবিল কভার কটন প্রিন্টেড বা একরঙা টেবিল ক্লথ ব্যবহার করতে পারেন। ডার্ক পলিশের টেবিল হলে কাজ করা রানার রাখলেও ভাল দেখাবে। শখের টেবিল কভার ঝোল-ঝালের দাগ থেকে বাঁচাতে প্লাস্টিক কভার দেবেন না যেন বরং টেবিল ম্যাট পাতুন।
১০. বেডরুমে পর্দার সঙ্গে মিলিয়ে বেডকভার কিনুন। বেডশিট সাধারণত হালকা রঙেরই হয়। তবে ধবধবে সাদা বেডশিটের জবাব নেই বেডকভার নানারকম পাওয়া যায়।