চট্টগ্রাম টেস্টে ঘটনাবহুল দিন শেষে চালকের আসনে বাংলাদেশ

দ্বিতীয় টেস্টের রোদেলা প্রথম দিন শেষে চট্টগ্রামের সাগরিকায় জিম্বাবুয়ে দল করেছে ২২৭/৯। বলা যায় চালকের আসনে বাংলাদেশ। অথচ সকাল দেখে বিকেল চেনা যায়নি এই ম্যাচে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রিয় প্রতিদ্বন্দ্বী জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিলেট স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট হেরে চট্টগ্রাম টেস্টে জয় ছাড়া কোন বিকল্প নেই। এমনি টেস্টে টস হেরে ফিল্ডিং করা বাংলাদেশ সফরকারী দলের প্রতিরোধের মুখে প্রথম দুই সেশন কোনঠাসা ছিল। চা বিরতির পর বাংলাদেশের বিশ্বস্ত স্পিন সেনানী তাইজুল ইসলামের সঙ্গে তরুণ নাঈম হাসান সংহারী রূপে আবির্ভুত হওয়ায় সফরকারী দল ৫০ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ২২৭ /৯ দিন শেষ করে। বলা যায় বাংলাদেশ ম্যাচে চালকের আসনে। আজ এবং তৃতীয় দিনের একটা অংশ জুড়ে পরিকল্পিত ব্যাটিং করে বাংলাদেশ যদি প্রথম ইনিংসে ভালো লিড নিতে পারে তাহলে হয়তো টেস্টে অতিথি দলকে চেপে ধরতে পারবে। কিন্তু সবাই জানি বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা বাটে এখন রান খরা। ভরসা রাখার মত স্বপ্ন দেখতেও ভয় হয়।

যাক সে কথা। কাল কিন্তু সকাল, দুপুরটা ছিল অতিথি দলের। দুই পেসার আর তিন স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজানো বাংলাদেশ আক্রমণের বিরুদ্ধে বুক চেতিয়ে লড়াই করেছে অতিথি দলের টপ অর্ডার ব্যাটিং। বেনেট (২১), কুরান (২১) ৪১ রানের ওপেনিং পার্টনারশীপ গড়ে তোলার পর অভিষিক্ত তানজিম সাকিব বেনেটকে ফেরায়। তাজুল কিছু পরে কুরানের উইকেট তুলে নেয়ার পর তৃতীয় উইকেটে শোন উইলিয়ামস এবং নিক ওয়েলচ প্রতিরোধের দুর্গ গড়ে তোলে। তৃতীয় উইকেট জুটি ৯০ রান যোগ করে স্বাচ্ছন্দে খেলছিল। ক্রমাগত ভালো বল করতে থাকা তাইজুল ওএলচকে (৫৪) সরাসরি বোল্ড করে মোক্ষম আঘাত হেরে পতনের সূচনা করে। জেগে ওঠে এই টেস্টে দলে ফেরা অফ স্পিনার নাঈম হাসান। পর পর উইকেটে স্থিতু সন উইলিয়ামস (৬৭) এবং অধিনায়ক ক্রেগ আরভিনকে (৫) ফিরিয়ে মড়ক লাগায় অতিথি দলের বাটিংয়ে। ১৭৭ থেকে ২২৭ একে একে ৭ উইকেট তাসের ঘরের মত ঝরে পরে অতিথি দলের। একসময় ভাবনা ছিল অতিথি দল হয়তো বড় ধরণের সংগ্রহের পথেই। কিন্তু বাংলাদেশ বিশ্বস্ত তাইজুল (৫/৬০) আর নাঈম হাসানের (২/৪২) ঘূর্ণি জাদুতে অতিথিদের সম্মোহিত করে চালকের আসনে দিন শেষ করে। ভাবতে অবাক লাগে স্পিনারদের যজ্ঞে প্রথম টেস্টে ১০ উইকেট নেওয়া মেহেদী মিরাজ ২৭ ওভার বোলিং করেও উইকেটের দেখা পায়নি।

টেস্টের এখন ৪ দিন বাকি। টেস্ট ক্রিকেটে কিন্তু প্রতি সেশন গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশকে আজ সকালে দ্রুত শেষ উইকেট তুলে নিয়ে নিজেদের প্রয়োগ করে ভালো ব্যাটিং করতে হবে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের নিদেন পক্ষে ১০০ রান এগিয়ে থাকা প্রয়োজন। এই টেস্টে শেষ ইনিংস খেলতে হবে বাংলাদেশকে। টেস্ট কিন্তু বাংলাদেশকে জিততেই হবে সম্মান আর সম্ভ্রম রক্ষার তাগিদে। আনামুল হক বিজয়ের জন্য আরো একটা সুযোগ টেস্ট ক্রিকেটে নিজেকে প্রমান করার। মোমিনুল, শান্তকে লম্বা ইনিংস খেলতে হবে দায়িত্ব নিয়ে। মুশফিককে প্রমান করতে হবে দলকে দেয়ার মোট যথেষ্ট অবশিষ্ট আছে ওর মাঝে। ৩৫০ রান নিদেন পক্ষে প্রয়োজন হবে বাংলাদেশের টেস্ট জয়ের সম্ভাব্য অবস্থানে পৌঁছাতে। ভাবছি লিখছি যত সহজে মাঠে খেলাটা যদি তেমনি সহজ হত। তবে বল এখন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের কোর্টে। খেলার ভাগ্য ঝুলছে নিতান্তই ব্যাটসম্যানদের সাফল্যের উপর। পিছু হটার পথ নেই। দেয়ালে পিঠ থেকে গাছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

twenty + fifteen =