স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় সংগীত বিভাগে মাধ্যমিক স্তরে দেশসেরা হয়েছেন ময়মনসিংহের আদিশ্রী সাহা। তিনি নিজের লেখা ও সুরের গান দিয়েই এ সাফল্য অর্জন করেছেন। গানটির শিরোনাম ‘বিজয়ের দেশ আমার বাংলাদেশ’।
গত রোববার (২৭ মার্চ) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন। আদিশ্রী ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার নগেন্দ্র নারায়ণ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী।
জানা গেছে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জাতীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ স্তরের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কুইজ, নৃত্য, সংগীত, চিত্রাঙ্কন এবং রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে এ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। সেখানে আদিশ্রী উপজেলা, জেলা, অঞ্চল ও বিভাগীয় পর্যায়ে দেশাত্মবোধক গান গেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে জাতীয় পর্যায়ে উন্নীত হন।
জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতার প্রজ্ঞাপনে শর্ত ছিল- প্রতিযোগীকে গাইতে হবে ‘মুক্তিযুদ্ধের নতুন গান’। এর প্রেক্ষিতে আদিশ্রী নিজেই প্রস্তুত করেন তার গান। কথা লিখে তাতে সুর দেন। যা তার হাতে এনে দেয় জাতীয় পর্যায়ের সম্মাননা।
এ প্রসঙ্গে আদিশ্রী বলেন, ‘যখন জানতে পারি নতুন গান গাইতে হবে ঢাকায়, তখন সময়টা খুবই কম ছিল। আমার আগে থেকেই গান লেখা ও সুর করার একটা শখ রয়েছে। কিছু গান লিখে সেগুলো সুরও করি শখের বশেই। সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ওই গানটি নির্ধারণ করি।’
উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, জাতীয় প্রতিযোগিতায় নিজের লেখা ও সুরের গান কেমন হবে, এই ভেবে প্রথমে একটু নার্ভাস ছিলাম। পরে আমার পরিবারের অনুপ্রেরণায় ও সঙ্গীতগুরু মামুনুল ইসলাম রনি স্যারের সাহায্য নিয়ে গানটি নতুন করে সাজাই। আর এখন আমি খুবই আনন্দিত এজন্য যে, আমার সৃষ্টি করা ‘বিজয়ের দেশ আমার বাংলাদেশ’ গানটি গেয়েই আমি জাতীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছি। এর চেয়ে ভালো লাগার আর কিছু হতে পারে না। এতটা মানসিক শান্তি আগে কখনো পাইনি।
গান নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা জানিয়ে আদিশ্রী বলেন, ‘আমি গান গেয়ে দেশের এবং দেশের বাইরের মানুষের কাছে ভালোবাসা পেতে চাই। ভালো কিছু গান সৃষ্টি করতে চাই। এই পুরস্কার আমার আত্মবিশ্বাস বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই ভবিষ্যতে লেখা ও সুরের দিকে আরও মনোযোগী হবো।’
আদিশ্রীর বাবা তাপস কুমার সাহা পেশায় কলেজ শিক্ষক আর মা রিতা রাণী রায় একজন গৃহিনী। দুই ভাইবোনের মধ্যে ছোট আদিশ্রী। মায়ের মুখে গান শুনেই গানের প্রতি ভালোলাগা শুরু তার। এরপর প্রয়াত সীমা কুন্ডুর হাত ধরে মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সেই তার সংগীতে হাতেখড়ি। পরে দীর্ঘ ৯ বছর ধরে তালিম নিচ্ছেন সঙ্গীতগুরু মামুনুল ইসলাম রনির কাছে।
এই বয়সেই আদিশ্রীর অর্জনের খাতায় যুক্ত হয়েছে চারটি জাতীয় পদক। এছাড়াও জেলা ও উপজেলার পর্যায়সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অন্তত ২০টি পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি। ২০১৯ সালে ‘চ্যানেল আই গানের রাজা’য় শীর্ষ ১২-তেও স্থান করে নেন আদিশ্রী।
ঢাকা পোস্ট