চির সবুজ জাফর ইকবালের জন্মদিন আজ

জাফর ইকবাল ছিলেন সময়ের চেয়ে এগিয়ে। ফ্যাশনে, চিন্তা-ভাবনায় তিনি ছিলেন সবার চেয়ে আলাদা। আশির দশকে তরুণ-তরুণীদের স্বপ্নের নায়ক ছিলেন। সুদর্শন চেহারা আর নজরকাড়া সব স্টাইলে মাতিয়েছেন দর্শকদের। আজ ২৫ সেপ্টেম্বর এই চিরসবুজ নায়কের জন্মদিন।

১৯৫০ সালের এই দিনে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন জাফর ইকবাল। তবে তার পৈতৃক নিবাস সিরাজগঞ্জে। জাফর ইকবালের বেড়ে ওঠা সাংস্কৃতিক পরিবারে। তার বড় ভাই আনোয়ার পারভেজ ছিলেন দেশের খ্যাতিমান সঙ্গীত পরিচালক। এছাড়া তার ছোট বোন দেশবরেণ্য কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ।

ভাই-বোনের মতো জাফর ইকবালও তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন সংগীত দিয়ে। গায়ক হিসেবে তার অসামান্য প্রতিভা ছিল। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি গানেও ছিলেন দক্ষ। ঘনিষ্ঠজনেরা বলতেন, জাফর ইকবালের গিটার বাজিয়ে ইংরেজি গান গাওয়ার দৃশ্য যে কোনো তরুণীর জন্য স্বপ্নের মুহূর্ত ছিল।

১৯৬৬ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে বন্ধুদের একটি ব্যান্ড গঠন করেছিলেন জাফর ইকবাল। সে ব্যান্ডের নাম ছিল ‘রোলিং স্টোন’। এরপর ভাই আনোয়ার পারভেজের হাত ধরে প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেন জাফর ইকবাল। তার গাওয়া প্রথম প্লেব্যাক ছিল ‘হয় যদি বদনাম হোক আরও’। সেই সময় গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

এরপর আরও বেশ কিছু সিনেমায় প্লেব্যাক করেছিলেন জাফর ইকবাল। তবে তার গাওয়া চারটি কালজয়ী গান হলো- ‘সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী’, ‘তুমি আমার জীবন, আমি তোমার জীবন’, ‘এক হৃদয়হীনার কাছে হৃদয়ের দাম কি আছে’ এবং ‘হয় যদি বদনাম হোক আরও’।

জাফর ইকবাল নায়ক হিসেবে সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেন ১৯৬৯ সালে। সিনেমার নাম ছিল ‘আপন পর’। এতে জাফর ইকবালের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন কবরী। তবে জাফর ইকবালের সঙ্গে ববিতার জুটি সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছিল। তারা একসঙ্গে প্রায় ৩০টি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন।

কেবল অভিনয় কিংবা গানে নয়, জাফর ইকবাল অমর হয়ে আছেন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্যও। সশরীরে তিনি লড়েছিলেন পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে।

জাফর ইকবাল জনপ্রিয়তার প্রথম সারিতে আসেন ১৯৭৫ সালের ‘মাস্তান’ সিনেমা দিয়ে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দেড় শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করে নিজেকে সফল তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার অভিনীত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সিনেমা হলো- ‘বাঁদি থেকে বেগম’, ‘সুর্য সংগ্রাম’, ‘দিনের পর দিন’, ‘অংশীদার’, ‘মেঘ বিজলী বাদল’, ‘আশীর্বাদ’, ‘মর্যাদা’, ‘নয়নের আলো’, ‘মিস লংকা’, ‘প্রেমিক’, ‘অপেক্ষা’, ‘যোগাযোগ’, ‘অবুঝ হৃদয়’, ‘বদনাম’, ‘গর্জন’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘অবদান’ ইত্যাদি।

ব্যক্তিগত জীবনে জাফর ইকবাল বিয়ে করেছিলেন সনিয়া নামের এক নারীকে। তাদের দুই সন্তান রয়েছে। জানা যায়, পারিবারিক অশান্তির কারণে একটা সময় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন এ নায়ক। পরবর্তীতে মদ্যপানসহ অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের কারণে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তার হার্ট এবং কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। ১৯৯২ সালের ৮ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন কালজয়ী এই নায়ক।

ঢাকা পোস্ট

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

4 × three =