যুক্তরাজ্যের সমুদ্রের তীরে ২৫ মিটার লম্বা অতি দীর্ঘাকৃতির সামুদ্রিক সরীসৃপের ফসিল পাওয়া গেছে। এই প্রাণীটি ২শ ২ মিলিয়ন বছর আগে ডাইনোসরের পাশাপাশি এই পৃথিবীতে বাস করতো। গণবিলুপ্তির মুখে পড়ে একসময় পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায় তারা।
২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যের সমারসেট সমুদ্রের তীরে এক ফসিল-গবেষক প্রথম এটির সন্ধান পান। এরপর ২০২০ সালে ওই সমুদ্রে তীরে বাবা ও মেয়ে বেড়াতে গিয়ে আরেকটি হাড়ের ফসিল খুঁজে পান। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সামুদ্রিক এই সরীসৃপ সাঁতার জানতো না। দুটো বাস মুখোমুখি রাখলে যতটা লম্বা দেখায়, এই প্রাণীটি ছিল তার চেয়েও লম্বা।
এ বিষয়ে ইউনির্ভাসিটি অব ব্রিস্টল প্লিয়নটোলজিস্ট (প্রাণী বা গাছের ফসিল গবেষক) ডা. ডিন লোম্যাক্স বুধবার (১৭ এপ্রিল) প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে জানান, সরীসৃপ জাতীয় সামুদ্রিক এই প্রাণীটি নীল তিমির মতোই লম্বা। বলা চলে ২৫ মিটার। তিনি বলেন, প্রাণীটির চোয়ালের দুটি হাড় পাওয়া গেছে। এর একটি এক মিটারের চেয়েও লম্বা। অপরটি লম্বায় দুই মিটার। এর ভিত্তিতেই বলা যেতে পারে, এটি ২৫ মিটার লম্বা ছিল।
তবে তিনি তার লেখায় এটাও উল্লেখ করেন, শুধুমাত্র চোয়ালের হাড় দেখেই প্রাণীটির আকৃতি সম্পর্কে নিশ্চিত ধারণা পাওয়া যায় না; অনুমান করা যায় মাত্র। এ জন্য প্রাণীটির মস্তিষ্ক এবং কঙ্কাল পাওয়া প্রয়োজন। ডা. ডিন লোম্যাক্স জানান, বিশালাকৃতির এই সামুদ্রিক প্রাণী গণভাবে বিপন্ন হয়ে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায়। এরপর বিশালাকৃতির শরীর নিয়ে তারা আর ফিরে পৃথিবীতে ফিরে আসেনি।
২০১৬ সালে ফসিল-গবেষক পল ডি লা স্যালি সমারসেট সমুদ্র তীরে বিশালাকৃতির চোয়ালের একটি হাড় খুঁজে পান। তিনি ফসিল বিশেষজ্ঞ স্টিভ ইচেজের কাছে ফসিল বিষয়ে হাতেখড়ি হওয়ার ২৫ বছর পর এই বিশালাকৃতির সরীসৃপের চোয়ালের একটি হাড় খুঁজে পান। এই সময় ডি লা স্যালি তার স্ত্রীকে নিয়ে সমুদ্র তীরে ফসিল খুঁজে ফিরছিলেন।
এরপর তিনি ২০১৮ সালে যখন ডিন লোম্যাক্সের সঙ্গে তার পাওয়া চোয়ালের হাড়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তখনই জানা যায় যে, তারা একটি বড় ধরনের একটি আবিষ্কার করে ফেলেছেন। তারা তাদের প্রাপ্ত উপাত্ত নিয়ে একটি গবেষণা প্রবন্ধ লেখেন।
প্রাণীটি আসলে লম্বা বা আকৃতিতে কত বড়, সে সম্পর্কে তথ্য পেতে তারা অনুসন্ধান শুরু করেন। ডিন লোম্যাক্স বলেন, ২০২০ সালে বাবা জাস্টিন ও মেয়ে রুবি রেনোল্ডস এ বিষয়ে বড় কিছু আবিষ্কার করে ফেলেন।
তিনি বলেন, আমি সত্যি সত্যি ভীষণভাবে অভিভূত হয়ে যাই, বাবা ও মেয়ের এই আবিষ্কারে। তিনি বলেন, পল ডি লা স্যালি যেভাবে বলেছিলেন, চোয়ালের দ্বিতীয় হাড়টি ঠিক সেভাবেই পাওয়া গেছে।
তাদের এই খবর জানার পর পল সমারসেট সমুদ্রে তীরে ছুটে আসেন এবং তার সহযোগিতায় সেখানকার মাটি খুঁড়তে শুরু করি। প্রায় একঘণ্টার চেষ্টায় শক্ত কিছু একটা খুঁজে পাই। তারপর দেখি, প্রাণীর চোয়ালের হাড়টি একদম ঠিকঠাক মতো সুরক্ষিত রয়েছে।
২০২২ সালে গবেষক দলটি হাড়ের শেষ টুকরোটির সন্ধান পান। এই আবিষ্কার প্রাণীটির প্রকৃত আকৃতি সম্পর্কে নিশ্চিত ধারণা দেয়। তারা বলেন, এই প্রামাণ্য উপাত্ত নতুন একটি প্রজাতি ‘ইচথিওসোর’ সম্পর্কে ধারণা দেয়। তখন এটির নামকরণ করা হয়, ‘ইচথিওটিটান সেভারনেনসিস (Ichthyotitan severnensis) বা দ্য সেভার্নের বিশালাকৃতির লেজওয়ালা মাছ।
রুবি রেনোল্ডসের সহলেখক ডিন সর্বশেষ গবেষণাপত্রে জানান, এই প্রজাতির প্রাণীর নাম একসময় ‘রুবি’ হয়ে যেতে পারে। আবিষ্কৃত এই প্রাণীটির ফসিল খুব শিগগিরই ব্রিস্টল মিউজিয়াম অ্যান্ড আর্ট গ্যালারিতে সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।