মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্তের আগে বন্দীকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না: হাইকোর্ট রায়

কোন ব্যাক্তির মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে তাকে কনডেম সেলে বন্দী রাখা যাবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন এডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি এটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

এডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির আদালতের রায়ের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিনজনের উচ্চ আদালতে আপিল শুনানির পূর্বে কনডেম সেলে (মৃত্যু সেল) বন্দী রাখার বিষয়ে ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে উচ্চ আদালত রুল ও নির্দেশনা দেয়।  মৃত্যুদণ্ডের সাজা চূড়ান্ত হওয়ার পূর্বে কনডেম সেলে বন্দি রাখা কেন অবৈধ হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি কতজন নারী ও পুরুষ কনডেম সেলে বন্দী আছে, তার একটি তালিকা আদালতে দাখিলে আইজি প্রিজনের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়।

এডভোকেট শিশির মনির জানান, ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে আজ রায় ঘোষনা করে হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়েছে, ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার পূর্বে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বলা যাবে না এবং কনডেম সেলে বন্দী রাখা যাবে না। রায়ে বলা হয়,  মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে আসামির হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে মামলা নিষ্পত্তি, প্রশাসনিক অনান্য কার্যক্রম ও রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার পরই মৃত্যুদণ্ডের রায় চূড়ান্ত হয়। এরপর নির্জন কক্ষে বন্দী রাখা যাবে।

এডভোকেট শিশির মনির বলেন, রায়ে বলা হয়েছে বিশেষ বিবেচনায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কোন ব্যক্তির সংক্রামক জনিত সমস্যা বা অন্য কোন বিশেষ কারণে তার শুনানি নিয়ে তাকে নির্জন কক্ষে আটক রাখা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।  রায়ে বলা হয়েছে, অন্যান্য মামলায় যেরূপ হাইকোর্ট বিভাগে আপিল ও জামিন শুনানি হয়, শুনানি শেষে আদেশ হয়, তেমনি মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে সংক্ষুদ্ধ ব্যাক্তি আপিলের পাশাপাশি জামিনের দরখাস্ত করতে পারবেন। উপযুক্ত আদালত তার জামিন আবেদন বিবেচনা করতে পারবেন।

রায়ে দেশের জেল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিতের বিষয়ে তথ্য অধিকার আইনে কোন তথ্য চাইলে তা যেন দেওয়া হয়। একই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তাদেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড সংক্রান্ত মামলার তথ্য সুপ্রিম কোর্ট ওয়েবসাইটে পরিবেশন করার জন্যও আদেশ দেওয়া হয়েছে।

এডভোকেট শিশির মনির জানান, মামলাটির শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষ জানায় কারা আইন নতুন করে প্রণয়ন করা হচ্ছে। আজ রায়ে আদালত বলেন, রায়ের ফাইন্ডিংস ও পর্যবেক্ষণ নতুন আইনটিতে সংযুক্ত করতে যেন বিবেচনা করা হয়। রায়ে বলা হয়, আগামী দুই বছরের মধ্যে কনডম সেলে আটকদের সাধারণ কয়েদিদের সাথে রাখা নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে, আজ দেওয়া হাইকোর্টের রায় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

রিট আবেদনকারীরা হলেন – চট্রগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

five × 1 =