ভবিষ্যতের ডিজিটাল পোশাক

আশফাক আহমেদ

প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে পোশাকের ফ্যাশন ও ট্রেন্ড। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কেমন হবে ভবিষ্যতের পোশাক। তারই এক ঝলক দেখালো ফটোশপের নির্মাতা কোম্পানি অ্যাডোবি। ভবিষ্যতের ডিজিটাল পোশাক উন্মোচন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যেখানে কেবল একটি বাটন ক্লিক করলে জামার প্যাটার্ন বদলাতে পারবেন পরিধানকারী। অ্যাডোবি বলছে, শুধু ডিজাইনাররা ক্লোদিং বা পোশাক নয়, ফার্নিচার এমনকি অন্যান্য ক্ষেত্রেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে। যা অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে।

‘প্রজেক্ট প্রিমরোজ’ নামে প্রকল্পের অধীনে পুঁতির তৈরি পোশাক বানিয়েছে অ্যাডোবি। আর তরলকৃত ক্রিস্টালের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে এর ‘রিফ্লেক্টিভ লাইট-ডিফিউজার মডিউল’। সাধারণত স্মার্ট লাইটিং ব্যবস্থায় এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। গবেষকরা বলছেন, এর পুঁতিগুলো আসলে একেকটি ছোট স্ক্রিন, যেখানে ব্যবহৃত হয়েছে স্মার্ট কাঁচামাল।

অ্যাডোবি আয়োজিত ম্যাক্স সম্মেলনে দর্শকদের এই পোশাকের প্রথম ঝলক দেখানো হয়। আর একে প্রাণবন্ত ফেব্রিক হিসেবে ব্যাখ্যা করে সফটওয়্যার কোম্পানিটি। ফিতাবিহীন পোশাকটি পরে সবার সামনে আসেন অ্যাডোবি’র গবেষক ক্রিস্টিন ডিয়ের্ক। প্রথমে একে সাধারণ ককটেল ড্রেসের মতো দেখালেও রিমোটের বাটনে চাপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এর স্তরগুলো বদলাতে থাকে। গবেষক থেকে ফ্যাশন মডেলে রূপ নেওয়া ডায়ের্ক আরও দেখান, এতে বিভিন্ন অ্যানিমেটেড নকশা ফেইড ইন ও ফেইড আউট করার সুযোগ রয়েছে। পোশাকটি নকশা করার পাশাপাশি এর সেলাইয়ের কাজও করেছেন ডায়ের্ক। এমনকি শরীর নাড়াচাড়ার সময়ও এটি কাজ করে, তারও নমুনা দেখানো হয়। গবেষকরা বলছেন, নতুন ধাঁচের এ পোশাকে ব্যবহৃত হয়েছে প্রতিফলনযোগ্য পলিমার-ডিস্পার্সড লিকুইড ক্রিস্টাল বা পিডিএলসি নামের উপাদান, যেটি সাধারণত স্মার্ট উইন্ডোতে ব্যবহার করা হয়। এ উপাদান নিজেকে যে কোনো আকারে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি আলো নিয়েও খেলতে পারে। তবে ওই পোশাক কতোটা ভারী, সে বিষয়ে তথ্য মেলেনি।

তবে এটা বলাই যায় যে এই প্রযুক্তির ব্যবহার ফ্যাশন জগতে অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে। এর মধ্যে নকশা ডাউনলোড করার এমনকি নিজ পছন্দের ডিজাইনারের সর্বশেষ নকশা ব্যবহারের সুবিধাও রয়েছে। কোম্পানিটি আরও বলেছে, প্রজেক্ট প্রিমরোজের অন্যান্য পণ্যেও ব্যবহৃত হয়েছে এইসব হাই-টেক পুঁতি, যার মধ্যে রয়েছে হ্যান্ডব্যাগ এমনকি ক্যানভাসও। নিশ্চিতভাবে এটি ফ্লেক্সিবল ডিসপ্লে নিয়ে কাজ করা ডিজাইনারদের ভবিষ্যতে অনুপ্রাণিত করবে।

ধাতব গ্রহাণু গবেষণায় নাসার অভিযান

সাইক নামের এক ধাতব আদি গ্রহাণু গবেষণার জন্য নতুন রকেট উৎক্ষেপণ করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। বেশিরভাগ গ্রহাণুতে পাথর বা বরফের অস্তিত্ব মিললেও ধাতব কোনো জগতের দিকে এটাই নাসার প্রথম অভিযান। ছয় বছরের এ যাত্রায় সাইক গ্রহাণুর নামে রাখা নভোযানটিকে বহন করছে স্পেসএক্স-এর ফ্যালকন হেভি রকেট। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৯ সাল নাগাদ ওই গ্রহাণুতে গিয়ে পৌঁছাতে পারে মহাকাশযানটি।

অনেক বিজ্ঞানীর মতে, এটা হয়তো কোনো গ্রহের অবশিষ্ট ধ্বংসাবশেষ, যেটি থেকে পৃথিবী ও অন্যান্য পাথুরে গ্রহের কেন্দ্রে থাকা বিভিন্ন উপাদান সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ১৩ অক্টোবর সকালে নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে নভোযানটি উৎক্ষেপণ করে স্পেসএক্স। আর ২০২৯ নাগাদ বড় ‘আলু আকৃতির’ গ্রহাণুটিতে পৌঁছাতে পারে এটি। বেশ কয়েক দশক পাথর, বরফ ও গ্যাসবেষ্টিত গ্রহাণুতে অভিযান চালানোর পর এবারই প্রথম কোনো ধাতব গ্রহাণুতে পাড়ি জমানোর লক্ষ্যস্থির করেছে নাসা।

এখনও পর্যন্ত নয়টির মতো ধাতব গ্রহাণুর খোঁজ মিলেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় হল সাইক। এর অবস্থান মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মাঝামাঝি, লাখ লাখ গ্রহাণুর মধ্যে। এর প্রথম খোঁজ মিলেছিল ১৮৫২ সালে। গ্রিক পুরাণে থাকা আত্মার দেবির নামে এর নামকরণ করা হয়। এ ব্যাপারে অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রধান বিজ্ঞানী লিন্ডি এলকিন্স-ট্যানটন বলেন, দীর্ঘ সময় ধরেই মানবজাতির স্বপ্ন হলো পৃথিবীর ধাতব কেন্দ্রে পৌঁছানো। কিন্তু এর চাপ ও তাপমাত্রা অনেক বেশি। আর সেখানে পৌঁছানোর মতো প্রযুক্তি তৈরি করাও সম্ভব নয়। তবে, সৌরজগতে থাকা ধাতব কোনো গ্রহাণুতে গিয়ে সে সম্পর্কে ধারণা মিলতে পারে।

জোতির্বিদরা রেডারের মাধ্যমে যাচাই করেছেন যে গ্রহাণুটি আকারে অনেক বড়। এর প্রস্থ প্রায় ২৩২ কিলোমিটার। আর দৈর্ঘ্য ২৮০ কিলোমিটার। তাদের মতে, এতে লোহা, নিকেল ও অন্যান্য ধাতুর ভান্ডারও থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আর মহাজাগতিক প্রভাবে একে হয়তো আবৃত করে রেখেছে সিলিকেট নামের নিস্তেজ ধূসর পৃষ্ঠের দানা। এটা আমাদের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যাবে, এমন সম্ভাবনাও প্রবল।

বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, সাড়ে চারশ কোটি বছর আগে সৌরজগৎ গঠনের প্রথম দিকের কোনো গ্রহের টুকরা হতে পারে এটি। এলকিন্স-ট্যানটনের মতে, পৃথিবীতে কীভাবে জীবনের উৎপত্তি হলো বা গ্রহটি বাসযোগ্য কেন, এমন মৌলিক প্রশ্নগুলোর জবাবও মিলতে পারে এ গ্রহাণু থেকে। এ বছরই বেন্নু নামের আদিম গ্রহাণু থেকে নমুনা নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে এসেছে নাসার আরেক মহাকাশযান অসিরিস-রেক্স।

ফেসবুক, মেসেঞ্জারে ব্রডকাস্ট চ্যানেল সুবিধা

সামাজিকমাধ্যম ফেসবুক ও মেসেজিং অ্যাপ মেসেঞ্জারে ‘ব্রডকাস্ট চ্যানেল’ ফিচার আনার ঘোষণা দিয়েছে মেটা। এই ফিচারের মাধ্যমে কোনো একক ব্যক্তি একইসঙ্গে তার সকল ফলোয়ারের কাছে বার্তা পৌঁছানোর সুবিধা পান। অনলাইনের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবহারকারীদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে প্রায়শই বিভিন্ন নতুন ফিচার চালু করে থাকে সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলো।

প্রতিদ্বন্দ্বী মেসেজিং সেবা টেলিগ্রামে এই ফিচারের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র মুক্তিকামী দল হামাস। যা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের চলমান সংঘাতেও বড় ভূমিকা রেখেছে। এমন বাস্তবতাতেই নতুন এই ফিচারের ঘোষণা দিল মেটা। মেসেজিং সেবা হোয়াটসঅ্যাপে দেড়শ’র বেশি দেশের ব্যবহারকারীদের জন্য চ্যানেলস ফিচারটি চালু করে মেটা। এমনকি ইনস্টাগ্রামেও ব্যবহার করা যায় এটি।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন নিয়ে অনলাইনে হ্যাকারদের যুদ্ধ

ইসরায়েল ও মধ্যপ্রাচ্যের দ্বন্দ্ব নিয়মিতই বৈশ্বিক ও রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকা হ্যাকারদের আকৃষ্ট করে। নানা মতাদর্শে চালিত এইসব হ্যাকাররা পরিচিত ‘হ্যাক্টিভিস্ট’ নামে। শব্দটি হ্যাকার ও অ্যাক্টিভিস্টের যোগফল। ইসরায়েল ও গাজার মধ্যে চলছে সংঘাত। আর সে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইন হ্যাকার দলগুলোর মধ্যেও।

বিভিন্ন হ্যাক্টিভিস্ট দল দাবি করেছে, সংঘাত শুরু পর থেকে তারা অনলাইনে ইসরায়েলি শিকারের ওপর হামলা চালানোর পাশাপাশি জেরুজালেম পোস্টের মতো সংবাদ মাধ্যমের সাইটেও ভজঘট পাকিয়েছে। এমন যুদ্ধময় পরিস্থিতিতে তারা নিজেদের পছন্দের পক্ষকে সমর্থন দিচ্ছে। অনেকে কেবল নাম ফাটানোর জন্যও নানা কাণ্ড ঘটাচ্ছে। সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি রেকর্ডেড ফিউচার বলছে, তারা প্রতিদিনই অনেকের ওপর আক্রমণ চালায়। এর মধ্যে কিছু হ্যাক্টিভিস্ট দল আগেই প্রতিষ্ঠিত, আবার কয়েকটি নতুন। এমন হ্যাকিং কার্যক্রমে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির ঝুঁকি হয়তো নেই, তবে ভূপৃষ্ঠের যুদ্ধ কিভাবে এই ধরনের অ্যাক্টিভিজমের হাত ধরে অনলাইন পর্যন্ত চলে আসে তার বর্ণনা মেলে। এখনও পর্যন্ত যেসব ঘটনা দেখা গেছে, তার একটি চালিয়েছে হামাস সমর্থিত হ্যাকার দল ‘আননঘোস্ট’। নিজস্ব সামাজিকমাধ্যম চ্যানেলে দলটি দাবি করে, ইসরায়েলের জরুরি সতর্কতা সেবায় ব্যাঘাত ঘটায় তারা।

‘আননিমাসসুদান’ নামের আরেক দল টেলিগ্রামে বলেছে, তারা সক্রিয়ভাবে ইসরায়েলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে শিকার বানিয়েছে। তবে এ দাবির পক্ষে প্রমাণ খুবই অল্প। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের তথ্য অনুসারে, ইসরায়েলের একশ’র বেশি ওয়েবসাইট ‘ডিডিওএস’ আক্রমণের মুখে পড়েছে। আক্রমণকারীরা কয়েকদিন সেগুলোকে অফলাইনে থাকতে বাধ্য করে।

তবে, হ্যাক্টিভিস্টদের বিভিন্ন দাবি কতটা নির্ভুল তা যাচাই করা জটিল। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন শুরুর দিকেও এমনই ঘটেছিল। যেখানে ইউক্রেনপন্থী হ্যাকার দলগুলো রাশিয়ার বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও অনলাইন পরিষেবায় আক্রমণ চালানোর দাবি করে। বিশ্লেষকদের মতে, এগুলো সাইবার গুপ্তচরবৃত্তির উদ্দেশ্যে ঘটতে পারে, এমন ঝুঁকিও আছে।

মাইক্রোসফট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে আসে কিভাবে ইসরায়েলের বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ, প্রতিরক্ষা ও এনার্জি কোম্পানির ওপর সাইবার গুপ্তচরবৃত্তি করে গাজাভিত্তিক হ্যাকার দল ‘স্টর্ম ১১৩৩’। অনেক গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, ইরানভিত্তিক হ্যাকার দলও সক্রিয় যারা হামাসের হয়ে কাজ করছে।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: টেক ট্রেন্ড

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

one × 4 =