লুজ ফিট জ্যাকেটের নাম ব্লেজার

নাহিন আশরাফ

আজকাল তরুণ-তরুণীরা বেশ ফ্যাশন সচেতন। তারা ট্রেন্ডের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে ভালোবাসে। শীত শুরু হতেই ফ্যাশন হাউজগুলো মধ্যেও তোড়জোড় পড়ে যায় বাহারি সব কালেকশন নিয়ে আসবার। প্রায় প্রতি বছর শীতে ফ্যাশনের ভিন্নতা দেখা যায়। আসে নানারকম পোশাক। তবে যার কদর বিন্দুমাত্র কমে না তা হলো ব্লেজার। ফরমাল লুক মানেই ব্লেজার। তবে এখন ক্যাজুয়াল লুকেও ব্লেজার পরা হয়ে থাকে।

শুরুতেই জেনে নেওয়া যাক, ব্লেজার কিভাবে এতো জনপ্রিয় হলো। ইতিহাস ঘেটে জানা যায় ১৯৫২ সালে প্রথম ব্লেজার শব্দের সৃষ্টি হয়। আইভি লীগ বিশ্ববিদ্যালয় সব ধরনের লুজ ফিট জ্যাকেটের নাম দেয় ব্লেজার। নারীদের মধ্যে ব্লেজার পরার প্রচলন শুরু করে বিখ্যাত ব্র্যান্ড কোকো শ্যানেল। ব্লেজার তৈরির আইডিয়া মূলত আসে জলবিরোধী পোশাক থেকে। অফিসের প্রেজেন্টেশন কিংবা মিটিং যাই হোক না কেন ব্লেজার ছাড়া পুরুষদের চলে না। তবে এখন শুধু মিটিংয়ের জন্য নয়, পুরুষরা হরহামেশাই নিশ্চিতে ব্লেজার পরছে। অন্যান্য পোশাকের মতো পুরুষদের ব্লেজারেও এসেছে নানা পরিবর্তন।

শীতের পোশাক বলতে নারীরা শুধু শাল আর সোয়েটার পরলেও এখন ব্লেজার পরা থেকে পিছিয়ে নেই। নারীরা ফরমাল প্যান্টের সাথে ব্লেজার পরার পাশাপাশি শাড়ি ও কামিজের সাথেও ব্লেজার পরে থাকে। বাজারে এখন বিভিন্ন ধরনের ব্লেজার পাওয়া যায়। যেমন জ্যাকেট ব্লেজার। জ্যাকেট ব্লেজার এখন বেশ ট্রেন্ডে রয়েছে। এটি জ্যাকেট ও ব্লেজারের মিশ্রণে করা হয়ে থাকে। এ ধরনের জ্যাকেট টাইপ ব্লেজার পুরুষরা বেশি পরে থাকে। জ্যাকেট ব্লেজারে অনেক সময় হুডিও দেওয়া হয়ে থাকে। আবার সামনে চেইন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নারীদের ক্ষেত্রে ব্লেজারে নানা ধরনের প্রিন্ট করা হয়ে থাকে।

এবছর বাজারে বেশি দেখা যাচ্ছে খাটো ঝুলের ব্লেজার। নারীরা স্লিম ফিট ব্লেজার সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে। নারীদের ব্লেজারে ফুল, পাখি, লতাপাতার প্রিন্টও করা হয়ে থাকে। এছাড়া অনেকে বেছে নিচ্ছে লাল, নীল, সবুজের মতো উজ্জ্বল রঙের ব্লেজার। তবে পুরুষরা একরঙা ব্লেজারই বেশি পছন্দ করে। একটা সময় নারীরা ব্লেজার পরা শুরু করলেও শুধু অফিসে ছেলেদের সাথে তালে তাল মিলিয়ে কাজ করার জন্য ব্লেজার পরতো। তবে এখন অফিস নয় ফ্যাশন সচেতন নারীরা সব জায়গায় ব্লেজার পরছে। ব্লেজারের সাথে সবচেয়ে বেশি জিন্স পরা হলেও এখন গাউন ও স্কার্টের সাথেও ব্লেজার পরে থাকে।

ব্লেজার সাধারণত সুতি, জর্জেট, উলের ইত্যাদি কাপড়ের হয়ে থাকে। তবে এবছর ব্লেজারে সুতি কাপড়ের ব্যবহার বেশি দেখা যাচ্ছে। কারণ সুতি পরতে বেশ আরামদায়ক। এছাড়া অতিরিক্ত শীতের জন্য উল কিংবা লাইলন কাপড়ের ব্লেজার বানানো হয়ে থাকে। যেকোনো পোশাকেই নকশার ভিন্নতা না আনলে একঘেয়ে হয়ে যায়। তাই ব্লেজার নিয়েও চলে নানা নীরিক্ষা। রঙ, কাটিং ও নকশায় নিয়ে আসা হয়েছে বৈচিত্র্য। ভিন্নতা নিয়ে আসার জন্য গোল গলার ব্লেজারে নকশা করা হচ্ছে। এছাড়া ব্লেজারে নিদিষ্ট একটা জায়গায় নকশা করা হচ্ছে। কখনো শুধু হাতায় বৈচিত্র্য আনা হচ্ছে, কখনো বা গলায়। যেকোন একদিকের ভিন্ন কাটিং ব্লেজারকে আরো বেশি ফ্যাশনেবল করে তুলছে।

তাছাড়া এখন তরুন-তরুনীদের রুচির বেশ পরিবর্তন হয়েছে। সবাই এখন সাজ পোশাক নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালোবাসে। তাই ব্লেজারে নানা রঙ ও প্রিন্টের মাধ্যমে বৈচিত্র্য নিয়ে আসা হয়। ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে প্যাচওয়ার্ক-এর ব্লেজার। প্যাচওয়ার্ক হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের টুকরা, প্রতিটি টুকরা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। টুকরা কাপড় একসাথে জোড়া লাগিয়ে হয় প্যাচওয়ার্ক। এটি বেশ কালারফুল হয়ে থাকে। যারা পোশাকে রঙ ভালোবাসে তারা বেছে নিতে পারে প্যাচওয়ার্ক ব্লেজার। এমব্রয়ডারি করা ব্লেজারও পাওয়া যাচ্ছে, একরঙা ব্লেজারের উপর রঙিন সুতার কাজ করা হচ্ছে।

তবে ব্লেজার যে শুধু শীতের পোশাক তা নয়, কিছু ব্লেজার এমন কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয় যা বারো মাস পরিধানযোগ্য। শীতের মৌসুমে আমাদের প্রায়শই দাওয়াত থাকে। সাধারণত অফিসেই পরেই বেশিরভাগ মানুষ সন্ধ্যার দাওয়াতে যায়। সেক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য ব্লেজারের বিকল্প কিছুই হতে পারে। অফিস কিংবা পার্টি সবকিছুতেই মানিয়ে যায় ব্লেজার। শীতের সময় নারীদের কোনো অনুষ্ঠানে গেলে সবচেয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়। শীতের সাথে যুদ্ধ করবে নাকি সাজ পোশাক ঠিক রাখবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়তে হয়। সেক্ষেত্রে ভিন্নধর্মী লুক দিতে চাইকে এক রঙের সাথে এমব্রয়ডারি করা ব্লেজার পরা যেতে পারে। শীত থেকে বাঁচার পাশাপাশি ফ্যাশনও হয়ে যাবে। অনেক সময় ব্লেজার আর প্যান্ট দুটো একসাথে সেট হিসেবে বিক্রি করা হয়ে থাকে, যাকে ‘টু পিস’ বলা হয়।

ব্লেজারের ক্ষেত্রে বেশি খেয়াল রাখতে হয় ফিটিংয়ে। কারণ ব্লেজার ঠিকমতো ফিট না হলে অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে। ক্যাজুয়াল লুকের জন্য ব্লেজার পরতে চাইলে এক বোতামের ব্লেজার নেওয়া উচিত। তবে ফরমালের ক্ষেত্রে দুই বোতামের ব্লেজার বেছে নিতে হবে। স্বাস্থ্যবান হলে খেয়াল রাখতে হবে ব্লেজারের পেছনে জোড়া আছে কি না। মৌচাক মার্কেটে অবস্থিত জোনাকি টেইলার্সের কারিগর জাহিদ বলেন, অনেকে শীতের শুরুতে ব্লেজার বানিয়ে নিয়ে যায়। কারণ রেডিমেড ব্লেজার অনেক সময় ভালো মতো ফিট হয় না। জাহিদ বলেন, ব্লেজারের ক্ষেত্রে দেখতে হবে কাঁধের মাপ ঠিক আছে কি না। ব্লেজারের দৈর্ঘ্য এমন হতে হবে যাতে প্যান্টের চেইন ঢাকা থাকে। কাঁধের পর দেখতে হবে কলারের সামনের অংশ ফাঁকা আছে কি না। ফাঁকা থাকলেই বুঝতে হবে ব্লেজারের মাপ ঠিক আছে। অনেক সময় ব্লেজার পরিধানের পর স্বচ্ছন্দে পকেটে হাত দেওয়া যায় না। তাই ব্লেজার পরে দেখতে হবে পকেটে ঠিকমতো হাত যাচ্ছে কি না। রেডিমেড কিনলে অনেক সময় দৈর্ঘ্য ছোট বা বড় হয়ে যায়, তখন দেখতে বেমানান লাগে।

পুরুষদের ব্লেজার বানাতে দুই মিটার কাপড়ের প্রয়োজন হয়। সাথে মিল রেখে প্যান্ট চাইলে কাপড় লাগে ৪ মিটার। বানানো ব্লেজারের কাপড় কেমন হবে তা নির্ভর করছে কাস্টমারের চাহিদার উপর। বানানোর ব্লেজারের ক্ষেত্রে অনেকেই পাইপিং দিয়ে থাকেন। অনেকে শার্টের কাফ বের করে রাখতে চান, তাদের ক্ষেত্রে হাতা ছোট রাখতে হয়। ব্লেজার বানিয়ে নেওয়ার সুবিধা হলো বাজারে সবসময় মনের মতো নকশার ব্লেজার পাওয়া যায় না, সেক্ষেত্রে বানিয়ে নিলে নিজের পছন্দমতো কাস্টমাইজড করে নেওয়া যায়।

ঢাকা নিউ মার্কেটে গিয়ে দেখা যায় শীত আসতে না আসতেই অনেকেই শীতের পোশাক কিনতে এসেছে। কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, বেশিরভাগ মানুষই ব্লেজার কিনতে এসেছে। কারণ একটি ভালো মানের ব্লেজার বেশ কয়েক বছর আরামে পরিধান করা যায়। আর জমিয়ে শীত পড়লে পোশাকের দাম হয়ে যাবে আকাশচুম্বি। তাই অনেকেই আগেভাগে শীতের পোশাক কিনে রাখছে। ফ্যাশন হাউজ লা রিভে গিয়ে কথা হয় একজন ক্রেতার সাথে। তারা বেশ বড় বাজেট নিয়েই ব্লেজার কিনতে এসেছে। কারণ এতে করে প্রতিবছর ব্লেজার কেনার ঝামেলায় পড়তে হয় না। এছাড়া ফ্যাশন হাউজ ক্যাটস আই, ইয়েলো, এক্সট্যাসি, ইজি, রিচম্যান, ইনফিনিটি ইত্যাদি ফ্যাশন হাউজগুলোতে ব্লেজার পাওয়া যায়। ব্লেজারের দাম নির্ভর করছে কাপড়ের মানের উপর। ভালো মানের ব্লেজার পেতে গুনতে হবে ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। তবে এর থেকেও অনেক দামী ব্লেজার বাজারে রয়েছে।

 লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ফ্যাশন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

19 − seventeen =