শীতের শুরুতে নিজের যত্ন নিন

নীলাঞ্জনা নীলা

ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের জীবনযাত্রা অনেক বদলে যেতে থাকে। আর কিছুদিনের মধ্যে শীত পড়ে যাবে। শীতের আগমনে পোশাক-আশাক খাবার-দাবার সবকিছুই বদলে যাবে। গরমের শেষের দিকে ও শীতের শুরুতে ত্বকে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। তাই বছরের অন্যান্য সময় থেকে ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে ত্বকের চাই বাড়তি যত্ন। আজ জানব কিভাবে ঋতু পরিবর্তনের সময়ে নিজের ত্বকের যত্ন কিভাবে নেওয়া যায়।

ঠোঁটের যত্ন

শীতে ঠোঁট নিয়ে সবাই অস্বস্তিতে পড়ে। কারণ বাইরের রুক্ষতার ছাপ পড়ে ঠোঁটে। কিছুক্ষণ পর পর ঠোঁট শুকিয়ে যেতে থাকে। অনেক সময় ঠোঁট ফেটে রক্ত পড়ে, যা বেশ ব্যথাযুক্ত হয়ে থাকে। ঠোঁট রুক্ষ হয়ে যাওয়ার ফলে লিপস্টিক ঠিক মতো বসতে চায় না। তাই ঠোঁট সুস্থ রাখতে চাইলে শীতের শুরু থেকেই ঠোঁটের যত্ন নিতে হবে। ঠোঁটে নারিকেল তেল কিংবা অলিভ ওয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে ঠোঁটের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে। এছাড়া পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা যেতে পারে। একটি ছোট প্যাকের পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যাগে রাখা যেতে পারে। একটু পরপর ঠোঁটে জেলি লাগাতে হবে। এছাড়া চিনি ও মধু দিয়ে ঠোঁটের জন্য ঘরেই স্ক্রাব বানিয়ে নিতে পারেন। চিনি, মধু ও লেবু ভালো করে মিশিয়ে ঠোঁটে ভালো মতো ম্যাসাজ করুন, এতে ঠোঁটের মরা চামড়া উঠে আসবে। তবে শীত ছাড়াও অনেকের সারাবছরই ঠোঁটজনিত নানাধরনের সমস্যা থাকে। তাই শীতের অপেক্ষা না করে বারো মাস ঠোঁটের যত্ন নিতে হবে।

পায়ের যত্ন

শীতের সময় পায়ের পাতা ফেটে যাওয়ার মতো সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন অনেকেই। শরীরের অন্যান্য স্থানের যত্ন আমরা কমবেশি করে থাকলেও পায়ের যত্নের বেলায় অবহেলা করে থাকি। তাই শীতের শুরুতে পায়ের প্রতিও যত্নশীল হওয়া জরুরি। বাইরে থেকে বাড়ি ফিরে প্রথমে ভালো করে পা পরিষ্কার করতে হবে। অনেকেরই অজানা যে সবচেয়ে বেশি রোগজীবাণু পায়ের পাতার মধ্যেই থাকে। সম্ভব হলে হালকা গরম পানিতে কিছুক্ষণ পা ডুবিয়ে বসে থাকুন। এতে পায়ের পাতায় থাকা রোগজীবাণু পরিষ্কার হয়ে যাবে। গরম পানি দিয়ে পা পরিষ্কার করলে পায়ের রুক্ষতা কমে আসে। শীতের সময় পায়ে মোজা পরার চেষ্টা করবেন। প্রতিদিন পায়ে অলিভ অয়েল কিংবা নারিকেল দিয়ে পা ম্যাসাজ করবেন। ম্যাসাজের ফলে রক্ত চলাচল দ্রুত হবে। অনেকেই পায়ের পাতা ফেটে যায় তখন পা অতিরিক্ত ঘষাঘষি করলে রক্তপাত হতে পারে। তাই পা ফেটে গেলে ঘষাঘষি করা যাবে না। ঘরোয়া উপায়ে বিভিন্নভাবে ফাটা পায়ের যত্ন নেওয়া যেতে পারে। এক চামচ ভ্যাসলিন নিয়ে তাতে লেবুর রস মিশিয়ে পায়ে লাগিয়ে সারারাত রেখে নিন। এতে ফাটা ভাব অনেকটা কমে আসবে। এছাড়া শুধু লেবুর রসও ব্যবহার করতে পারেন। লেবুর রস পায়ের মরা চামড়া তুলে ফেলতে সাহায্য করে। পা যাতে ময়েশ্চারাইজড থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

হাতের যত্ন

শীতের শুরুতে হাতের চামড়াও রুক্ষ হয়ে যায়। হাত রুক্ষ হয়ে যাবার কারণ হচ্ছে সারাদিন বাসন ধোয়া, কাপড় ধোয়াসহ নানা কাজে পানি স্পর্শ করতে হয়। আর পানির স্পর্শ পেলে চামড়া আরো বেশি আর্দ্রতা হারায়। শীতের সময় হাত দিয়ে পানির কাজ করার সময় গ্লাভস ব্যবহার করুন। বাজারে নানা ধরনের হ্যান্ড ক্রিম পাওয়া যায়। ভালো মানের একটি হ্যান্ড ক্রিম ব্যবহার করুন যা হাতকে ময়েশ্চারাইজড রাখবে। গাছ থেকে অ্যালোভেরা নিয়ে তার জেল ভালো করে হাতে লাগাতেন পারেন। এটি হাতকে কোমল রাখতে সাহায্য করবে। এছাড়া টক দই হাতে মেখে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে হাতের রুক্ষতা অনেকটা কমে গিয়ে মসৃণ হবে।

মুখের যত্ন

শরীরের অন্যান্য অংশ থেকে মুখের ত্বক নিয়ে সবাই বেশ সচেতন থাকেন। শীতের সময় মুখ অনেকটা অনুজ্জ্বল দেখায়। তাই হারিয়ে যাওয়া উজ্জ্বলতা ফিরে আনতে ত্বকের চাই যত্ন। শীতের সময় মুখে ভালো করে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। তবে ময়েশ্চারাইজারটি ভারী বেজের হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ এইসময়ে চামড়া শুকিয়ে আসে। শুধু একবার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করাই যথেষ্ট নয়, যতবার পানির স্পর্শ লাগবে ঠিক ততোবার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া ঘরোয়া বিভিন্ন প্যাক ব্যবহার করা যেতে পারে। চাইলে পাকা কলা চটকে মুখে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে মুখ অনেক মসৃণ হবে। গোসলের পর মুখে অল্প করে অলিভ ওয়েল ব্যবহার করতে পারেন।

সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন

অনেকেই মনে করেন শীতের শুরুতে রোদ কম থাকে তাই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত নয়। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারনা। বারো মাসই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। যেকোনো ঋতুতেই সানবার্ন হতে পারে। তাই সানস্ক্রিন এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। সানস্ক্রিন হাইপার পিগমেন্টশন কমিয়ে দেয় ও ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখে। অতিবেগুনি রশ্মির ফলে ত্বকে খুব সহজেই বলিরেখা পড়ে অকালেই বয়স বাড়িয়ে দেয়। সানস্ক্রিন বলিরেখা থেকে মুক্তি দেয়। দিনের পর দিন রোদের আলো সরাসরি ত্বকে পড়ার ফলে মেছতা হতে পারে। তাছাড়া শীতজনিত নানা ত্বকের সমস্যা থেকেও সানস্ক্রিন মুক্তি দিয়ে থাকে। তাই ঋতু যাই হোক না কেন সানস্ক্রিন কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।

হাইড্রেট থাকুন

শীতকালে ঘাম কম হয় বলে আমরা কম পানি পান করে থাকি। কিন্তু পানি কম পান করার কারণে আমাদের ত্বক আরো বেশি শুষ্ক হয়ে পড়ে। শরীর যখন তার চাহিদার তুলনায় কম পানি পায় তখন দেহের বিভিন্ন স্থান থেকে পানি শুষে নিতে থাকে। ফলে দেহের বিভিন্ন স্থান রুক্ষ হয়ে পড়ে। তাই পরিমাণ মতো পানি পান করতে হবে। এছাড়া তাজা ফলের রস, ডাবের পানি, স্যুপ ইত্যাদি পান করতে হবে। ঘাম হোক বা না হোক আমাদের শরীর সচল থাকতে সবসময় পানি প্রয়োজন হয়। তাই অবশ্যই ৩ লিটার পানি রোজ পান করতেই হবে।

প্রোডাক্ট বদলে ফেলুন

সাশ্রয়ের কথা চিন্তা করে অনেকে একই স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কিংবা মেকআপ বছরের পর বছর ব্যবহার করেন। যা ত্বকের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। গরমের সময় যে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা হয় তা কখনো শীতে ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ শীতে প্রয়োজন ভারী বেজের ময়েশ্চারাইজার। ভুল প্রোডাক্ট ব্যবহারের ফলে শীতের সময় আরো নানাধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া মেকআপ প্রোডাক্টেও পরিবর্তন নিয়ে আসা উচিত। এখন মেকআপ ব্র্যান্ডগুলো প্রতিটি ঋতুর কথা চিন্তা করে তাদের পণ্যগুলো তৈরি করে থাকে। কোনো পণ্য কেনার আগে সেখানে কি কি উপাদান রয়েছে তা অবশ্যই জেনে নিতে হবে। কারণ সব উপাদান সব ধরনের স্কিনের জন্য উপযোগী নয়।

ত্বকের অন্যান্য সমস্যা

শুষ্কতা, রুক্ষতা ছাড়াও শীতে ত্বকের আরো নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। যেমন অ্যালার্জি, র‌্যাশ, অ্যাকজিমা ও বিভিন্ন ফ্যাংগাল ইনফেকশন। অনেকের পায়ের ফাঁকে ফাংগাল হতে দেখা যায়। শীতের সময় উলের পোশাক পরিধান করার কারণে শরীরে নানারকম র‌্যাশ দেখা দেয়। আবার ঢেকে রাখা স্থানে হতে পারে দাদ। মুখের মধ্যেও গুটি গুটি দানা দেখা দেয়। ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যাওয়ার কারণে রাতে ঘুমানোর সময় অনেকের শরীর খুব চুলকায়। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়ে থাকে। তবে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিলে খাবারে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসতে হবে। এছাড়া ভিটামিন যুক্ত খাবার খেতে হবে।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: আরশী

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

three × four =