সৃজনশীল আড্ডাবাজি

আজকের এই কর্পোরেট ভুবনে আবেগের কোন মূল্য নেই। শুধু অর্থ, যশ আর প্রতিপত্তির পিছে লাগামহীনভাবে ছুটছে সবাই।অনেক ক্ষেত্রে আজ আবেগশূন্য এই পারস্পরিক সম্পর্ক। নতুন করে কি ঘরোয়া আড্ডা আমরা আবার কিছুটা ফিরে পেতে পারি না! কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই’। না, ইচ্ছা করলেই কিন্তু আমরা সেই পুরনো আড্ডা, সেই পুরনো সংস্কৃতি নতুন করে প্রবর্তিত করতে পারি। নতুনদের কাছে ওয়ান-ডিশ বা শেয়ার-লাঞ্চ করে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে ভিন্ন পরিবেশে। কোথাও কোন খোলা-প্রান্তরে, সমুদ্র পাড়ে কিংবা নতুন কোন কফি হাউসে। সবকিছুই যে সংগঠনভিত্তিক, বাণিজ্যিক বা পেশাদারী হতে হবে এমন তো কোন কথা নেই। এসবের বাইরেও কিছু নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব, নিজস্ব এলোমেলো আলাপন, কিছু একান্ত ঘরোয়া আয়োজন থাক না আমাদের চিন্তা, মননে ও মানসিকতায়।

পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ওয়ান-ডিশ বা শেয়ার-লাঞ্চের ধারণাটা খারাপ নয়। জমিয়ে আড্ডা মারার জন্যই তাদের এ আয়োজন। আড্ডা দিতে হলে আড্ডার জন্যই বসতে হবে। ভূরিভোজের সঙ্গে মিলিয়ে বা গুলিয়ে ফেলা যাবে না। পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে ওয়ান-ডিশ একটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার যা আন্তরিকতার প্রকাশ। বাংলা সংস্কৃতিতে আড্ডার ক্ষেত্রে তা উদার মনে গ্রহণ করা দরকার কেননা বিদেশী সব সংস্কৃতিই যে খারাপ তা কিন্তু নয়।

আড্ডা বাঙালী মননের একটা অনিবার্য-চাহিদা, বলা যায় আকুতি ও তৃষ্ণা। নিরন্তর এই বাস্তব জীবনে আজ আমরা আড্ডা দেয়ার জন্য যেটুকু সময় খুঁজে বের করি তা শুধু জমা রাখি সপ্তান্তে জন্মদিন কিংবা বিয়ের দাওয়াত এর জন্য। এটা আসলে ভূরিভোজ। একে মোটেই সত্যিকারের আড্ডা বলা যায় না। বিয়ে বা জন্মদিনকে আড্ডা বলা যায় না এ জন্য যে আয়োজনটা ব্যক্তিকেন্দ্রিক বা উপলক্ষভিত্তিক। আড্ডা মানে শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি–চর্চার কিংবা যে কোন ঘটনার তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। এক কথায় বলা যায় ঘরোয়া শিল্পচর্চা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

seventeen + thirteen =