ছাপাখানার বিবর্তন

মানুষের জীবনযাপন সহজ করে তুলেছে যেসব আবিষ্কার তার মধ্যে একটি ছাপাখানা। ছাপাখানা আবিষ্কারের পর সভ্যতার বিকাশ দ্রুতই বদলে যেতে শুরু করে। আধুনিক সভ্যতার বাহনগুলোর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছাপাখানা কিভাবে আবিষ্কার হলো তা নিয়ে এবারের আয়োজন। লিখেছেন নূরজাহান।

ইতিহাসবিদদের মতে, ১২২১ সালে চীনে সর্বপ্রথম কাঠের টাইপ সাজিয়ে বই ছাপানো হয়। বিশ্বের অনান্য দেশের মানুষেরা এটির সঙ্গে পরিচিত ছিল না। ইতিপূর্বে ৮৬৮ সালে চীনে বই মুদ্রিত হয়েছিল। পৃথিবীর প্রথম ব্লক বই ‘হীরক সূত্র’ নামের বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থটি কাঠের ব্লকের সাহায্যে তুঁত গাছের ছাল দিয়ে তৈরি কাগজের ওপর ছাপা হয়েছিল। বইটি ছিল ১৬ ফুট লম্বা আর এক ফুট চওড়া। বইটিতে মাত্র দুটি পাতা। চীনের পর একই প্রযুক্তিতে জাপানে ২০০ বছর পর মুদ্রিত হয় ‘ধরনীসূত্র’ নামের একটি বই। এরপর ১৩৯২ সালে কোরিয়ার ধাতব হরফে মুদ্রণের কাজ হয়েছিল। মুদ্রণের প্রাচীন কিছু রীতির অস্তিত্ব চীন, জাপান, মিসর কিংবা কোরিয়ায় মিললেও এটা স্বীকার করতে হবে ইউরোপীয়রাই আধুনিক মুদ্রণ পদ্ধতির আবিষ্কারক।

আজ থেকে ৪০০০ হাজার বছর আগে চায়নাতে মূলত কাঠের ব্লক প্রিন্ট এর প্রচলন শুরু হয়। যা মূলত সিল্ক কাপড়ের উপরে অক্ষর ছাপানোর কাজে ব্যবহার করা হতো। ২২০ শতাব্দীর দিকে হান সাম্রাজ্যের রাজত্বকালে ব্লক প্রিন্টের যাত্রা শুরু হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, ইউরোপ থেকে শত শত বছর আগে এশিয়াতে ব্লক প্রিন্টের প্রচলন শুরু হয়। দশম শতাব্দীর দিকে মিশরে ব্লক প্রিন্টের ব্যবহার দেখা যায়, আরবিতে একে বলা হতো ‘তারশ’। সে সময় কাপড় মোমে চুবিয়ে নানা রকম নকশা করা হতো। সেই কাপড় দিয়ে মমি সংরক্ষণ করা হতো। পরবর্তীতে কাপড় ডিজাইন করার জন্য এই পদ্ধতি জাপান, ভারত, শ্রীলংকা, আফ্রিকা সহ বিভিন্ন দেশে ‘বাটিক’ নামে ছড়িয়ে পড়ে। ১২ শতাব্দীতে ভারত উপমহাদেশে ব্লক প্রিন্টিংয়ের জন্য নিদিষ্ট কিছু কেন্দ্র তৈরি হয়। মোগল যুগে ১৬ এবং ১৭ শতাব্দীতে ব্লক শিল্পের জনপ্রিয়তা দারুনভাবে বেড়ে গিয়েছিল। ১৯ শতকে ব্লক প্রিন্টিং শিল্প সারা বিশ্বে পরিচিতি পেতে শুরু করে।

ইউরোপে সর্বপ্রথম নেদারল্যান্ডে ব্লক বই তৈরি হয়েছিল ১৪৫০ সালে। ইংরেজি ভাষায় ইংল্যান্ডে প্রথম গ্রন্থ মুদ্রণ করেছিলেন ইউলিয়াম ক্যাক্সটন। ১৪৫৫ খ্রিস্টাব্দে জোহান্স গুটেনবার্গ ২৬টি ধাতুর তৈরি স্থানান্তরযোগ্য ২৬টি অক্ষর দিয়ে টাইপ ছাপাখানা স্থাপন করেন জার্মানির মেনাজ শহরে। আধুনিক মুদ্রণশিল্পের জনক বলা হয় এই ভদ্রলোককে। গুটেনবার্গই সর্বপ্রথম পুনর্ব্যবহারযোগ্য ধাতব টাইপ আবিষ্কার করে মুদ্রণশিল্পের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিলেন। তিনিই প্রথম তৈলাক্ত কালির ব্যবহার করেন। যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রণযন্ত্র প্রবর্তিত হয়েছিল ১৬৩৮ সালে। এরপর ১৭৯৬ সালে মুদ্রণশিল্পে আসে লিথোগ্রাফি প্রযুক্তি। জার্মান লেখক ও অভিনেতা অ্যালোয়িস সেনেফেল্ডার লিথোগ্রাফি নামে কম খরচে ছাপার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। লিথোগ্রাফিক পাথরের ওপর বিশেষ ধরনের রঙ, মোম বা তৈলাক্ত জিনিস মাখিয়ে ছাপার কাজ করা হয়। চুনা পাথরের ওপর লিথোগ্রাফিতে ছাপা ভালো হয়। লিথোগ্রাফির হাত ধরেই আসে মাইক্রো এবং ন্যানোলিথোগ্রাফি প্রযুক্তি। সকল প্রযুক্তির সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে আজকের আধুনিক ছাপাখানা। বই ছাপার জগতে এক নতুন দিগন্ত এনে দিল ডিজিটাল এবং অফসেট প্রিন্টিং। ১৮৭৫ সালে ইংল্যান্ডে রবার্ট বার্কলে সর্বপ্রথম টিন ব্যবহার করে অফসেটে ছাপার কাজ শুরু করেন।

ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম মুদ্রণযন্ত্রটি স্থাপিত হয় ১৫৫৬ সালে গোয়াতে যা করেছিল পর্তুগিজরা। ১৫৬৭ সালে গোয়ার ছাপাখানা থেকে ভারত উপমহাদেশে প্রথম বই ছাপা হয়। ১৭৭৭ সালে বাংলায় প্রথম ছাপাখানা স্থাপিত হয়। ১৭৭৭ সালে জেমস অগাস্টাস হিকি ‘ইবহমধষ এধুবঃঃব’ নামের সাময়িকপত্র প্রকাশ করেন। প্রথম বই প্রকাশের কৃতিত্ব প্রথম দেখান আরেক ইংরেজ ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হালেদ (১৭৫১-১৮৩০)। ১৭৭৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি থেকে প্রকাশিত তার ‘অ এৎধসসধৎ ড়ভ ঃযব ইবহমধষ খধহমঁধমব’ গ্রন্থে বাংলা হরফের প্রথম মুদ্রিত উপস্থিতি দেখা যায়। অ্যান্ড্রুজ নামক এক ইংরেজ ভদ্রলোক হালেদের বইটি ছেপেছিলেন তার নিজস্ব ছাপাখানা থেকে। ঐতিহাসিক এই ছাপাখানাটি ‘অ্যান্ড্রুস প্রেস’ নামে সবার কাছে পরিচিত।

ব্রিটিশ সিভিলিয়ান চার্লস উইলকিন্সকে বলা হয় বাংলা হরফ নির্মাণকারী তথা বাংলা ছাপাখানা ও মুদ্রণশিল্পের জনক। তিনি লন্ডনে থাকার সময় ছেনি কেটে হরফ তৈরির কৌশল আয়ত্ত করেছিলেন। ভারতে এসে নিজের দক্ষতা ও বিদ্যা কাজে লাগান। ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে চার্লস উইলকিন্স হুগলিতে ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেডের লেখা ‘অ্যা গ্রামার অব দ্য বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ’ বইটি মুদ্রণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। হালেদের অনুরোধে চার্লস উইলকিন্স পর পর সাজানো ধাতুনির্মিত চলনশীল বাংলা হরফ তৈরি করেছিলেন। হরফ নির্মাণে তার সহযোগী ছিলেন বাঙালি খোদাইশিল্পী পঞ্চানন কর্মকার। হুগলির ত্রিবেণীর অধিবাসী পঞ্চানন কর্মকার একমাত্র বাঙালি যিনি ঢালাই করা চলনশীল ধাতব হরফ তৈরি করার কৌশল রপ্ত করতে পেরেছিলেন। তাকে বাংলা মুদ্রণাক্ষরের স্রষ্টা বলা হয়। বাংলা ভাষায় ছাপার ইতিহাসে প্রথম চলনসই বাংলা ও সংস্কৃত অক্ষরের ছাঁচ তৈরির অগ্রদূত হিসেবে পঞ্চানন কর্মকারের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তার আবিষ্কৃত কাষ্ঠনির্মিত বাংলা বর্ণ এবং মুদ্রণাক্ষর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সহজ সংস্করণ প্রস্তাব করার আগ পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৭৯৩ সালে কর্নওয়ালিসের কোড মুদ্রিত হয় পঞ্চাননের তৈরি অক্ষরে। ১৭৮৫ সালে জোনাথন ডানকানের ‘ইম্পে কোড’ এর বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হয় তার তৈরি হরফে। মূলত ডানকানের এই গ্রন্থের মাধ্যমেই বাংলা গদ্য রচনার সূচনা হয়। চলনযোগ্য বাংলা ও সংস্কৃত হরফ তৈরির প্রথম শিল্পী পঞ্চানন কর্মকার এশিয়ার বৃহত্তম অক্ষর তৈরির কারখানা তৈরিতে বিরাট অবদান রেখেছিলেন। ১৮০১ খ্রিষ্টাব্দে তার তৈরি হরফে বাংলায় কেরির করা বাইবেলের নতুন নিয়মের অনুবাদ ছাপা হয়। ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে তিনিই প্রথম ভারতবর্ষে দেবনাগরী ভাষায় হরফ নির্মাণ করেন। কেরির সংস্কৃত ব্যাকরণ মুদ্রণের জন্য তিনি দেবনাগরী ভাষায় হরফ তৈরি করেন। পরে তিনি আরো ছোটো ও সুন্দর এক স্পষ্ট বাংলা হরফের নকশা তৈরি করেন। বাংলা মুদ্রণশিল্পে পঞ্চানন কর্মকারের তৈরি হরফের নকশা দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত ছিল।

বাংলা মুদ্রণ ইতিহাসে ‘শ্রীরামপুর মিশন প্রেস’ নিয়ে আলাদা করে কথা বলতে হয়। শ্রীরামপুর মিশন প্রেস উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ ভারতে স্থাপিত একটি ছাপাখানা। ১৮০০ সালের ১০ জানুয়ারি অধুনা পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুরে স্থাপিত হয় প্রেসটি। উইলিয়াম কেরি, জশুয়া মার্শম্যান, উইলিয়াম ওয়ার্ডের মতো কিছু উৎসাহী ব্যক্তি ছাপাখানাটি প্রতিষ্ঠা করেন।

গঙ্গাকিশোর ছিলেন একাধারে মুদ্রণশিল্পী, পুস্তক ব্যবসায়ী, প্রকাশক এবং সেই সঙ্গে গ্রন্থকার। তিনি প্রথম বাঙালি প্রকাশক হিসেবে ইতিহাসে পরিচিত। গঙ্গাকিশোর কলকাতায় ‘বাঙ্গালী প্রেস’ নামের একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাংলা ভাষার প্রথম সংবাদপত্র ‘বাঙ্গাল গেজেট’ তারই ছাপাখানা থেকে ১৮১৮ সালে প্রকাশিত হয়।

ঢাকার ভাওয়াল পরগনায় নাগরীর গির্জা ও মিশনে প্রতিষ্ঠিত ছাপাখানাটি এ অঞ্চলের সবচেয়ে পুরনো। যদিও সে সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায়নি, তবে এতটুকু জানা গেছে যে এখান থেকে পাদ্রি ম্যানুয়েল দা আসুম্পসাও তিনটি বাংলা বই প্রকাশ করেছিলেন। বইগুলো বাংলা ভাষায় রচিত হলেও এর হরফ ছিল রোমান। লিসবন শহরে বইগুলো ছাপা হয়েছিল বলেও কেউ কেউ বলে থাকেন। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বলা যায়, পূর্ববঙ্গের প্রথম ছাপাখানাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল উত্তরের জনপদ রংপুরে। ১৮৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘বার্ত্তাবহ যন্ত্র’ ছাপখানাটি থেকে প্রকাশিত হতো রংপুরের প্রথম সাময়িকপত্র ‘রঙ্গপুর বার্ত্তাবহ’। এ ছাড়া রংপুরের ‘লোকরঞ্জন শাখা’, ‘মহীগঞ্জ পদ্মাবতী’, ‘সরস্বত’, ‘জয়’, ইত্যাদি ছাপাখানা এ বাঙলার প্রকাশনাকে অনেক দূর নিয়ে যায়। রংপুরের পর ঢাকার ছোট কাটরায় প্রতিষ্ঠিত ছাপাখানাটিকে বাংলার পুরনো প্রেস বলা যায়, যা পরে ‘ঢাকা প্রেস’ নামে পরিচিত হয়। এখান থেকে ‘দ্য ঢাকা নিউজ’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল। ১৮৫৯ সালে বাবুবাজারের ‘বাঙ্গালা যন্ত্র’কেই ঢাকার পুরনো ছাপাখানার মর্যাদা দেওয়া হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা মালিক ছিলেন ব্রজসুন্দর মিত্র। বিখ্যাত ‘ঢাকা প্রকাশ’ সাময়িকপত্রটি প্রকাশিত হতো এই ছাপখানা থেকে। ‘সুলভ প্রেস’ বা ‘গন্ডেরিয়া যন্ত্র’ ঢাকার ছাপাখানার প্রাথমিক পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রেস। ঊনিশ শতকের শেষ অর্ধশতাব্দী ধরে বাংলাদেশের সর্বত্র ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা পেতে থাকে।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পূর্ব বাংলায় যে মুদ্রণযন্ত্র ছিল তা ছিল খুবই ছোট আকৃতির। তখন বেশির ভাগ প্রকাশনা কলকাতা থেকে মুদ্রিত হতো। তারপর ঢাকায় আধুনিক ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। ঢাকার ‘ইডেন প্রেসে’ সর্বপ্রথম বাংলা লাইনো টাইপ মেশিন স্থাপিত হয়েছিল। মনোটাইপ মেশিন স্থাপিত হয়েছিল ‘প্যারামাউন্ট প্রেস’ ও ‘বলিয়াদি প্রেসে’। তারা মনো সুপার কাস্টিং মেশিন বসিয়ে তাতে তৈরি নানা ধরনের ইংরেজি-বাংলা টাইপ অন্যান্য প্রেসের কাছে বিক্রি করত। পঞ্চাশের দশক থেকে যেসব প্রেস উন্নতমানের মুদ্রণের জন্য খ্যাতি লাভ করেছিল তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘আলেকজান্ডার মেশিন প্রেস’, ‘স্টার প্রেস’, ‘জিনাত প্রেস’।

পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে পত্রপত্রিকা মুদ্রিত হতো প্রধানত লেটার প্রেসে। সে কারণে ছবি মুদ্রণের জন্য ব্লকের প্রয়োজন হতো। লাইন ব্লক বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কারিগররা হাতে তৈরি করতেন। হাফটোন ব্লকের জন্য প্রয়োজন হতো ক্যামেরা ও স্ক্রিনের, সেই সঙ্গে দক্ষ কারিগরের। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে এই কাজে সবচেয়ে নামকরা প্রতিষ্ঠান ছিল ‘লিংকম্যান’, ‘ইস্ট অ্যান্ড প্রসেস’ ও ‘স্ট্যান্ডার্ড ব্লক কম্পানি’। প্রায় একই সময়ে অফসেট প্রেস স্থাপন করে সেকালের ‘ইস্ট পাকিস্তান কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি প্রেস’ ও ‘পাইওনিয়ার প্রিন্টিং প্রেস’।

১৯৬৭ সালে ঢাকায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয় মুদ্রণ প্রযুক্তি বিষয়ক দেশের একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গ্রাফিক আর্টস ইনস্টিটিউট। এখানে মুদ্রণের প্রাথমিক স্তরের মুভেবল টাইপ, লাইনো টাইপ মেশিন ও লেটার প্রেস, গ্যালারি টাইপ ক্যামেরা থেকে শুরু করে আধুনিক প্রযুক্তির অফসেট লিথোগ্রাফি, গ্র্যাভিউর, স্ক্রিন প্রিন্টিং, অত্যাধুনিক প্রসেস ক্যামেরা (হরাইজন্টাল ও ভার্টিক্যাল), অটোপ্লেট প্রসেসর, লিথো ফিল্ম, প্যানক্রোমাটিক ফিল্ম প্রযুক্তিসহ উন্নত ধরনের মেকানিজম সংযোগ করা হয়েছে।

বর্তমানে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের মুদ্রণশিল্প প্রতিষ্ঠানের সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে কম্পিউটার মুদ্রণকৌশল বিষয়ক নতুন কারিকুলাম প্রবর্তন করা হয়, যেখানে ইমেজ সেন্টার, ড্রাম স্ক্যানার, ফ্ল্যাটবেড স্ক্যানার, লেজার প্রিন্টার, ইংক জেট প্রিন্টারসহ আধুনিক মুদ্রণ প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়। কম্পিউটারে বাংলা অক্ষরবিন্যাসের জন্য কয়েকটি ভিন্ন ধরনের কি-বোর্ড আছে। কম্পিউটারে বাংলা হরফ সংযোজন করার কৃতিত্ব বেশ কয়েকজনের। ১৯৮৪ সালে সর্বপ্রথম সাইফ-উদ-দোহা শহীদ বাংলা হরফের ডিজাইন করেন অ্যাপল ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের জন্য। ১৯৮৬ সালে মাইনুল আরেক ধাপ অগ্রসর হয়ে বাংলা হরফের ডিজাইন করেন। ১৯৯৪ সালে মোস্তাফা জব্বার অ্যাপল ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে নতুন কি-বোর্ডে বাংলা হরফ তৈরি করেন। বিজয় নামের এই সফটওয়্যার বর্তমানে বাংলাদেশের মুদ্রণশিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

বর্তমানে ঢাকায় প্রায় তিন হাজার ছাপাখানা রয়েছে। আরামবাগ, নয়াপল্টন, পুরানা পল্টন, বিজয়নগর, সূত্রাপুর, বাবুবাজার, বাংলাবাজার, ইসলামপুর, জিন্দাবাজার, লালবাগ, নীলক্ষেতসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ছাপাখানা রয়েছে। সারা বাংলাদেশে এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে চার লাখ মানুষ জড়িত।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: আবিষ্কার

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

sixteen − 13 =