কর্মস্থলে ইতিবাচক হোন

এ টি এম মোসলেহ উদ্দিন জাবেদ

হেড অফ এইচআর, স্টার সিরামিকস লিমিটেড

চাকরির ক্ষেত্রে বা সফট স্কিলের আলোচনায় সবসময় একটি বিষয় বা টপিক বা স্কিল বা দক্ষতা অনেক বেশি গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয় তা হলো পজিটিভ মেন্টাল অ্যাটিচ্যুড বা ইতিবাচক মানসিকতা। এটি এমন একটি গুণ যা কর্মক্ষেত্রে আপনাকে অন্যদের চেয়ে আলাদাভাবে ফুটিয়ে তুলবে। ইতিবাচক মানসিকতার মানুষজন সবচেয়ে বেশি সফলতা পেয়ে থাকেন।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, ইতিবাচক মানুষদের দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশ ভালো। রোগ থেকে তারা দ্রুত সেরে ওঠেন এবং তারা দীর্ঘ জীবন লাভ করে থাকেন। হার্টের বাইপাস সার্জারি করা হয়েছে এমন কিছু রোগীর ওপর একটি গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, যারা মানসিকতায় ইতিবাচক, নিরাময়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন, অন্যদের চেয়ে বেশ দ্রুতই তারা সেরে উঠেছেন।

আর দীর্ঘ জীবনের ব্যাপারটা সুস্থ ইতিবাচক মানুষদের ক্ষেত্রে যেমন ঘটেছে, তেমনি ঘটেছে ক্যান্সার, হৃদরোগ বা কিডনি জটিলতায় ভুগছেন এমন ইতিবাচক মানুষদের ক্ষেত্রেও। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে অ্যানালজ অব বিহেভেওরাল মেডিসিন, ভলিউম ৩৯, পৃষ্ঠা ৪।

আসলে নেতিবাচক চিন্তা এবং উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণে মানুষ যে অসুস্থ হয়, এটা এখন আর নতুন কোনো তথ্য না। স্ট্রেসের শারীরবৃত্তিয় প্রক্রিয়াটি ছিল প্রাণীদেহের একটি স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া। বিপদে পড়লে আত্মরক্ষার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ যাতে তারা নিতে পারে, সেজন্যই এর অস্তিত্ব। কিন্তু দীর্ঘসময় ধরে যখন এ অবস্থা চলতে থাকে, তখন ডায়াবেটিস এবং ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রষ্টতার মতো রোগগুলোতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

বিজ্ঞানীরা এখন দেখছেন, ইতিবাচক চিন্তা, আশাবাদী হওয়া ইত্যাদি অভ্যাসগুলো শুধু যে স্ট্রেসের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে তা নয়, দেহের নিজস্ব নিরাময় এবং মেরামতেরও রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। অর্থাৎ স্ট্রেসের কারণে যে ক্ষতিগুলো দেহে হচ্ছিল তা তো কমেই, তার ওপরে ঘটতে থাকে আরো নানাবিধ ভালো শারীরিক প্রভাব।

এসময় কর্টিসল নামের স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ যেমন কমে, তেমনি ‘ফাইট অর ফ্লাইট’ রেসপন্সের উল্টো ‘রেস্ট অ্যান্ড ডাইজেস্ট’ সিস্টেম সক্রিয় হয় দেহের ভেতরে। ফলে রোগবালাই হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় অনেকটাই (সাইকোসোমাটিক মেডিসিন, ভলিউম ৭০, পৃষ্ঠা ৭৪১)।

শুধু পারিপার্শ্বিকতা নিয়ে না, নিজের ব্যাপারেও যারা ইতিবাচক, নিজের প্রতি আস্থা ব্যক্ত করেন যারা, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তাদের কম, আর হলেও তা থেকে দ্রুত সেরে ওঠার ঘটনাই ঘটেছে তাদের ক্ষেত্রে। জার্নাল অব পার্সোনালিটি অ্যান্ড স্যোসাল সাইকোলজি, ভলিউম ৮৫, পৃষ্ঠা ৬০৫।

এখন কথা হলো, কেউ কেউ স্বভাবজাতভাবেই ইতিবাচক। কিন্তু যারা তা নন, তারা কী করবেন? ইতিবাচকতা আসলে একটা অভ্যাস। অনুশীলনের মাধ্যমে এ অভ্যাস সৃষ্টি সম্ভব।

আজকে থেকে খেয়াল করুন, সারাদিনে যে কথাগুলো আপনি বলেন, তার মধ্যে নেতিবাচক কি কি কথা আপনি বলেন। নেতিবাচক শব্দ বা বাক্যগুলোকে শনাক্ত করুন।

এরপর এ কথাগুলোকে পাল্টে দিন। প্রতিটি কথা ইতিবাচকভাবে শেষ করুন। যেমন, ‘কিছুই হয়নি’ না বলে বলুন ‘এটা এভাবে করলে ভালো হতো’। ‘ঝামেলার কাজ’ বা ‘চরম বিরক্তিকর কাজ’ না বলে বলুন ‘কাজটিতে বেশ বৈচিত্র্য আছে!’ ‘হায় আল্লাহ! এখন কী হবে?’ না বলে বলুন ‘আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্যেই করেন’ ইত্যাদি।

নিজের ব্যাপারে যে কথাগুলো আপনি বলেন, তা কি আশাবাদীর কথা না, একজন হতাশাবাদীর কথা। যদি হতাশাবাদীর মতো হয়, তাহলে বদলে ফেলুন বক্তব্য। ‘আমাকে দিয়ে কিছু হবে না’ না বলে বলুন, ‘আমি চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ’। বা ‘আমি পারব, আমি পারব’।

নিয়মিত অটোসাজেশন দিন। ‘হাজার অটোসাজেশন’ বই থেকে নিজের জন্যে প্রয়োজনীয় অটোসাজেশনগুলো বেছে দিতে থাকুন।

নিয়মিত মেডিটেশন করুন। মেডিটেশনের গভীর স্তরে আপনি নিজের প্রতি যে আস্থা ও বিশ্বাস ব্যক্ত করবেন, তা-ই আসলে আপনাকে সত্যিকার অর্থে একজন আত্মবিশ্বাসী, প্রত্যয়ী ও ইতিবাচক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।

ইতিবাচক হোন। ইতিবাচক মানুষকেই অন্যেরা শ্রদ্ধা করে, সমীহ করে, অনুসরণ করে। যিনি নিজের ওপর আস্থা ব্যক্ত করতে পারেন, হাজার মানুষও তখন তার ওপর আস্থা ব্যক্ত করে।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: নিবন্ধ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

thirteen + nine =