এমবাপ্পের ফেরার অপেক্ষায় ফ্রান্স

ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের শেষ ষোলতে প্রায় জায়গা করে নিয়েছে ফেবারিট ফ্রান্স। কিন্তু এখনো দলের মূল ভরসা কিলিয়ান এমবাপ্পে গোলের দেখা পাননি। যদিও প্রথম ম্যাচে নাক ভেঙ্গে যাওয়ায় গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এমবাপ্পেকে নিয়ে কোন ঝুঁকি নিতে চাননি ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশ্যর। মঙ্গলবার গ্রুপের শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডের বিপক্ষে এমবাপ্পের ফিরে আসার পাশাপাশি গোলখরা কাটানোরও আশা করছে ফ্রান্স।

টুর্নামেন্টের অন্যতম শীর্ষ ফেবারিট দল হিসেবেই জার্মানিতে এসেছে ফ্রান্স। গ্রুপ-ডি’র প্রথম দুই ম্যাচে এক পয়েন্ট অর্জণ করলেও মাত্র এক গোল এসেছে ফ্রান্সের পক্ষ থেকে। যদিও সেই এক গোলও হয়েছিল প্রথম ম্যাচে অস্ট্রিয়ান ডিফেন্ডার ম্যাক্সিমিলিয়ান ওবারের আত্মঘাতি গোলের কল্যানে। ডাসেলডর্ফে এই এক গোলে অস্ট্রিয়াকে হারানোর পর লিপজিগে শুক্রবার দ্বিতীয় ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের সাথে গোলশুন ড্র করে ফ্রান্স, যে ম্যাচে খেলেননি এমবাপ্পে।

মাঠে ফিরতে হলে সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে চিকিৎসকরা এমবাপ্পেকে মাস্ক পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। রোববার ফ্রান্সের দলীয় অনুশীলনে প্রায় পুরো সময়ই ছিলেন এমবাপ্পে। যে কারনে ধারনা করা হচ্ছে পোল্যান্ডের বিপক্ষে তাকে মাঠে দেখা যেতে পারে। ফরাসি মিডফিল্ডার অরেলিয়েন টিচুয়ামেনি বলেছেন, ‘আমি মনি করি সবাই জানে পরবর্তী ম্যাচে মাঠে নামার জন্য এমবাপ্পে কতটা মুখিয়ে আছে। এটা কারো কাছেই বিস্ময়কর কিছু নয়। মাস্ক পড়ে সে অনুশীলন করেছে, সে কারনে এটার সাথেও সে মানিয়ে নিয়েছে। অবশ্যই বিষয়টি অস্বস্তিকর। কিন্তু চিকিৎসকরা জানিয়েছে এর বিকল্প কোন পথ খোলা নেই। কিন্তু এর ফলে তার ফর্মের কোন পরিবর্তন হয়নি। আমরা জানি যখন সে মাঠে থাকে দলের জন্য শতভাগ দেবার চেষ্টা করে।’

ইউরোতে এ পর্যন্ত ফ্রান্স যে এক গোল নিজেদের পকেটে পুরেছে তার কৃতিত্ব ছিল এমবাপ্পের। তার হেডেই ওবার ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালে বল জড়ান। কোচ দিদিয়ের দেশ্যমের কাছে দীর্ঘদিন ধরেই আক্রমনভাগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন অধিনায়ক এমবাপ্পে। তার অনুপস্থিতিতে ডাচদের বিপক্ষে এই পজিশনে ছিলেন মার্কোস থুরাম। জাতীয় দলের হয়ে ২২ ম্যাচে এ পর্যন্ত থুরাম করেছেন মাত্র দুই গোল।

এদিকে দলের আরেক অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার আঁতোয়ান গ্রিজম্যান শেষ ৩০ ম্যাচে করেছেন মাত্র দুটি গোল। ওসমানে ডেম্বেলে পুঁচকে জিব্রালটারের বিপক্ষে গত তিন বছরে করেছেন মাত্র একটি গোল। কিংসলে কোম্যান ফিটনেস সমস্যায় ইনজুরির কারনে বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে মৌসুমের শেষ সময়টা মাঠে নামতে পারেননি। রানডাল কোলো মুয়ানি পিএসজিতে এমবাপ্পের কারনে মূল দলে খুব কমই সুযোগ পেয়েছেন।

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বেশ কিছু সুযোগ নষ্ট করার পর গ্রিজম্যান বলেছিলেন, ‘এটা সত্যিই হতাশার। কিন্তু এতে শঙ্কার কিছু নেই। রক্ষনভাগ ও মধ্যমাঠ দুর্দান্তভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে। আমরা প্রতিপক্ষকে খুব কম সুযোগই দিচ্ছি। কিন্তু একইসাথে আমাদের আক্রমনভাগেও উন্নতি করতে হবে, আরো বেশী আগ্রাসী হতে হবে।’

ফ্রান্সের রক্ষনভাগে দুই সেন্টার-ব্যাক ডায়ট উপামেকানো ও উইলিয়াম সালিবা মাইক মেইগন্যানের সামনে নিজেদের প্রমান করেছেন। মধ্যমাঠে দীর্ঘ দুই বছর পরে ফিরে এন’গোলো কান্তে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন।

টিচুয়ামেনি বলেন, ‘রক্ষনভাগে আমরা কতটা শক্তিশালী তা প্রমান করাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারন শিরোপা জয়ে এই বিভাগের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই ম্যাচে জিততে হলে আমাদের গোলের দিকে নজড় দিতে হবে। এর ফলে সবকিছু আরো সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু এনিয়ে আমাদের কোন সন্দেহ নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমরা প্রতি ম্যাচেই সুযোগ তৈরী করছি, সে কারনেই গোলের ব্যপারে আমরা আশাবাদী।’

ইতোমধ্যে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয়া পোল্যান্ডের বিপক্ষে অন্তত ড্র করতে পারলেই শেষ ১৬ নিশ্চিত হবে ফ্রান্সের। প্রথম দুই ম্যাচের দুটিতেই পরাজিত হয়ে ইউরো থেকে বিদায় নিয়েছে রবার্ট লিওয়ানদোস্কির পোল্যান্ড। এমনকি পোল্যান্ডের বিপক্ষে যদি ফ্রান্স পরাজিত হয়, অন্যদিকে অস্ট্রিয়া যদি ডাচদের পরাস্ত করতে না পারে তাহলেও ফরাসিদের নক আউট পর্ব নিশ্চিত হবে। তবে ২০২২ বিশ্বকাপ রানার্স-আপদের এখন লক্ষ্য গ্রুপের শীর্ষস্থান লাভ করা। সেক্ষেত্রে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের ফলাফলের থেকে উপরে তাদের থাকতেই হবে। গ্রুপের যেকোন দল হিসেবে পরের রাউন্ডে যাক না কেন শেষ ষোলতে সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ নিয়ে দুঃশ্চিন্তার কারন থাকলেও পরবর্তীতে কোয়ার্টার ফাইনাল কিংবা তারপরেও যেতে পারলে প্রতিপক্ষ একটি প্রভাব ফেলতে পারে।

অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে ইনজুরির কারণে বদলী হিসেবে মাঠে নামা ৩৫ বছর বয়সী পোলিশ স্ট্রাইকার লিওয়ানদোস্কি আগামীকাল মূল দলে ফেরার আশা করছেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

3 × 5 =