সেমি-ফাইনালের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে বাঁচা-মরার ম্যাচে দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিল বাংলাদেশের মেয়েরা। আজ বুধবার শক্তিশালী ভারতকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ চারে উঠল লাল-সবুজের বাংলাদেশ।
নেপালের কাঠমাণ্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে বুধবার ভারতের বিপক্ষে খেলার প্রথমার্ধেই ৩-১ গোলে এগিয়ে ছিল মেয়েরা। গত সাফে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে এই দলটিকেই গ্রুপ পর্বে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। ফের তাদের বিপক্ষে মনে রাখার মতো এক জয়!
চ্যাম্পিয়নদের মতোই খেললো বাংলাদেশ। উড়িয়ে দিল শক্তিশালী ভারতকে ৩-১ গোলে। দাপুটে এই বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠে এলো। এই ম্যাচ ড্র করলেই শেষ চারে চলে যেত বাংলাদেশ। এমন সমীকরণের ম্যাচে বড় জয়ে টুর্নামেন্ট ফেভারিট বাংলাদেশ সেমিফাইনালে নাম লেখালো। দুই ম্যাচে এক ড্র ও এক জয়ে গ্রæপ লিডার হয়ে বাংলাদেশ সেমিতে খেলছে।
গোটা ম্যাচে বাংলাদেশ খেলেছেই এমন ফুটবল যে ভারত পাত্তা পায়নি। ম্যাচের সবগুলো গোলই হলো প্রথমার্ধে। খেলা শুরুর বাঁশির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ দল আক্রমণে তেজ দেখায়। বারবার ভারতের ডিফেন্স কাঁপিয়ে দেয়। কিন্তু গোলের দেখা পাচ্ছিল না। ম্যাচের ১৫ মিনিটের সময় প্রথম গোলের আনন্দে ভাসে বাংলাদেশ। গোলের উৎস অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। তার কর্নার থেকে পাওয়া বলে গোল করেন আফিদা খন্দকার (১-০)। এগিয়ে যাওয়ার পর গোলের ক্ষিদে যেন আরো বেড়ে যায় বাংলাদেশ দলের। আগের ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বড় জয় পাওয়া ভারত এই ম্যাচে ভিন্ন ফরমেশন নিয়ে নামে।
একটু অতি আক্রমনাত্মক হতে গিয়ের্ ক্ষনের দুয়ার আটকে রাখতে যেন ভুলে যায়। সেই সুযোগে বাংলাদেশ গোলের দেখা পায়। প্রথমার্ধের ২৮ মিনিটের সময় ভারতের গোলমুখে জটলা থেকে দ্বিতীয় গোল পায় বাংলাদেশ। ডি বক্সের ভেতর ভারতীয় ডিফেন্ডারের ভুলে বল গিয়ে পড়ে তহুরা খাতুনের শরীরে। তহুরার গায়ে সেই বল লেগে দিক বদলে ভারতের জালে (২-০)।
এই গোলে নিজের পুরো কৃতিত্ব না থাকলেও সেই দুঃখ খানিকবাদে ভুলিয়ে দেন তহুরা। ৪২ মিনিটের সময় দারুণ দক্ষতার সঙ্গে নিজের দ্বিতীয় গোল করে দলকে ৩-০ গোলের লিড এনে দিলেন আক্রমণভাগের এই খেলোয়াড়। বিরতিতে যাওয়ার আগে ভারত অবশ্য একটা গোল শোধের স্বস্তি নিয়ে ফিরে। ৪৩ মিনিটের সময় ভারত অধিনায়ক বালা দেবীর হেডে সেই গোল মিলে (৩-১)।
তবে সেই একটা গোল ম্যাচের ভারতের সান্তনাসূচক গোল হয়েই রইলো! দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ আরো কয়েকটি গোলের সুযোগ পায়। কিন্তু লক্ষ্য ভেদ করতে পারেনি। ভারতও গোল শোধের জন্য উড়েপড়ে লাগে। কিন্তু গোল পোস্টে অতন্দ্র প্রহরী হয়েছিলেন বাংলাদেশি গোলরক্ষক।
ইনজুরির কারণে ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলতে না পারলেও আর্ন্তজাতিক এই ম্যাচে ফিরে নিজেকে আরেকবার চেনালেন তহুরা খাতুন। ম্যাচ শেষে সেরা খেলোয়াড়ের ২৫ হাজার রূপির চেক হাতে নিয়ে তহুরা বললেন, ‘ এই জয়ের কৃতিত্ব পুরো দলের। সতীর্থরা আমাকে গোল করতে দারুণভাবে সহায়তা করেছে। আমার ওপর আস্থা রাখার জন্য কোচ পিটার বাটলারকেও ধন্যবাদ।’
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১-১ গোলের ড্র দিয়ে শুরু করা বাংলাদেশের সাফ ফুটবলের সামনে এগুনোটা কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে। তবে পরের ম্যাচেই শক্তিশালী ভারতকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশ জানিয়ে দিল এই ট্রফি আরেকবার জেতার জন্যই এসেছে তারা।