বাংলাদেশে গ্যাসের অপচয় আন্তর্জাতিক মানের চেয়ে ৩৩% বেশি

সৈয়দ শুকুর আলী শুভ, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা

প্রাকৃতিক গ্যাস সঞ্চালন ব্যবস্থায় বাংলাদেশ ১০ শতাংশ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক মানের চেয়ে ৩৩ শতাংশেরও বেশি। জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ কমিশন গত শনিবার এ কথা জানিয়েছে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বাসস-কে বলেন, ‘বর্তমানে দেশে গ্যাসের সিস্টেম লস ১০ শতাংশ।’

আন্তর্জাতিক মান অনুসারে, বিতরণ লাইনে গ্যাসে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য অপচয় ০.২০ থেকে ০.৩০ শতাংশ।

জালাল আহমেদ বলেন, আমাদের ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানিতে যে কোনো উপায়ে অপচয় পরিমাণ কমাতে হবে। আমরা এটিকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা পূর্বে অপচয়ের বেশিরভাগ চুরি, টেম্পারিং ও লিকেজকে দায়ী করেছিলেন, বিইআরসি প্রধান বলেছেন, এই ঘটনাটি সরকারকে বিশাল রাজস্ব ক্ষতির সম্মুখীন করেছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ স্বীকার করেছেন যে, গত মাসে গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থায় তাদের ১০.৬ শতাংশ অপচয় হয়েছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির প্রধান আরও বলেছেন, গত ছয় মাসে ১৩৬৯ মিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস সিস্টেম লসে অপচয় বা অপব্যবহৃত হয়েছে।

দেশি-বিদেশি অনুসন্ধান সংস্থাগুলো ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে ছয়টি বিতরণ সংস্থাকে গ্যাস সরবরাহ করে- যা পরবর্তীতে বিতরণ লাইনের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেয়।

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, চলমান ডলার সংকটের মধ্যে গ্যাসের এ অপচয় কমিয়ে এলএনজি আমদানির ওপর চাপ কমানো যেতে পারে।

স্বাধীন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)-এর সাবেক পরিচালক সালেক সুফি বলেছেন, এই অপচয়ের জন্য বিতরণ সংস্থাগুলোই মূলত দায়ী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সামগ্রিক সিস্টেম লস ছিল ১৩.৫ শতাংশ- যা আগের বছরের তুলনায় পাঁচ শতাংশ বেশি।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের সিস্টেম লস ছিল ৮.৪৩ শতাংশ।

একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রতিদিন সরবরাহ করা ২,৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মধ্যে বর্তমানে গড়ে প্রায় ৩০০ এমএমসিএফডি গ্যাস চুরি বা অপব্যবহহৃত হচ্ছে।

তিনি একটি বিতরণ কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন।

তিনি আরো বলেন, তিতাস ও বখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির একটি স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক তথাকথিত সিস্টেম লসের জন্য শীর্ষে রয়েছে।

পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা সোমবার জানিয়েছেন যে, দেশের গ্যাস উৎপাদনে এলএনজিসহ ২৮৫৮.০ এমএমসিএফডি গ্যাস উৎপাদন হয়েছে।

পেট্রোবাংলার মতে, সরকার জুলাই-ডিসেম্বর, গত ৬ মাসে স্পট মার্কেট থেকে ১,৭০০ মিলিয়ন ঘনমিটার (১৯টি কার্গো) এলএনজি আমদানির অনুমোদন দিয়েছে।

রাষ্ট্র পরিচালিত ছয়টি বিতরণ কোম্পানিগুলো হল- তিতাস গ্যাস, বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল (পশ্চিম অঞ্চল) গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড ও সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড।

বিশেষজ্ঞ ও গ্রাহকরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন যে, সিস্টেম লসের নামে গ্যাস চুরি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিতাস গ্যাস অবৈধ লাইন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য একটি অভিযান শুরু করেছে এবং অবৈধ ব্যবহারকারীদের বিচারের মুখোমুখি করেছে।

তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পারভেজ বলেছেন যে, তারা প্রতি মাসে সিস্টেম লস ৫ থেকে ৭ শতাংশ কমাতে একটি রোডম্যাপ তৈরি করছেন।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, পাইপলাইনের লিকেজ থেকে সিস্টেম লসের একটি ছোট অংশ ঘটে। পাইপলাইন মেরামতের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে।

তবে বিভিন্ন স্থানে অপচয়ের জন্য মিটার টেম্পারিং বড় সমস্যা বলে তারা জানিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

3 × 3 =